৩০০ বছর ধরে নিমকাঠের প্রতিমার আরাধনা, বিষ্ণুপুরে উগ্রচণ্ডা রূপে পূজিত হন দশভূজা

৩০০ বছর ধরে নিমকাঠের প্রতিমার আরাধনা, বিষ্ণুপুরে উগ্রচণ্ডা রূপে পূজিত হন দশভূজা
শাল্মলি বসু, কলকাতা: স্বপ্ন পেয়েই মা দুর্গার (Durga Puja 2023) আরাধনা শুরু। মাটির নয় প্রতিমা নিমকাঠের। শত শত বছর ধরে এই প্রতিমার আরাধনাই করা হয় বাঁকুড়ার রায় বাড়িতে। উগ্রচণ্ডা রূপে পূজিত হন দশভূজা। বাঁকুড়ার গোঁসাইপুর গ্রামের আনাচে কানাচে রয়েছে এই পুজো ঘিরে নানা ইতিহাস।

নিমকাঠের প্রতিমার আরাধনা: বিষ্ণুপুর শহর থেকে গোঁসাইপুর গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। প্রায় তিনশো বছরের পুরনো পুজো দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন সবাই। পুজোর মূল আকর্ষণ নিমকাঠের তৈরি প্রতিমা। তবে বিসর্জন হয় না এই ঠাকুর। উচ্চতা দেড় থেকে পৌনে দু ফুট। সারা বছর ঠাকুর দালানে থাকেন মা দুর্গা।

উগ্রচণ্ডা রূপে পূজিতা: প্রায় তিনশো বছর আগের কথা। তমলুক থেকে বাঁকুড়ায় এসেছিলেন অনন্ত লাল রায়। মল্ল রাজার সামন্ত ছিলেন তিনি। কথিত আছে স্বপ্ন দেখেই পুকুরে পাড়ে গিয়েছিলেন অন্তত। সেই পুকুরেই ভেসে উঠেছিল নিমকাঠ। সেই নিমকাঠ দিয়েই ঠাকুরের অবয়ব তৈরি করা হয়। রায় বাড়ির মা দুর্গার নাম উগ্রচণ্ডা। বৈষ্ণবী রূপে পূজিতা হন তিনি। তবে রেওয়াজ নেই নিত্যপুজোর। আগে একজনের বাড়িতেই সারা বছর ঠাকুর থাকত। সম্প্রতি মন্দির তৈরি হয়েছে। এখন সেখানেই সারা বছর থাকে ঠাকুর। শনি-মঙ্গলবার পুজো হয়। তবে সেটাও প্রতি সপ্তাহে হয় এমন নয়। পুজো দিতে হলে এক সপ্তাহ আগে পুরোহিতকে জানাতে হয়।

তবে শুধু প্রতিমাতেই অভিনবত্ব আছে এমন নয়। কাঠের মূর্তি দীর্ঘদিন ঠিক রাখতে তার রক্ষণাবেক্ষণ এবং রং করা প্রয়োজন। কিন্তু রায় বাড়ির সদস্যরা জানাচ্ছেন, এই ঠাকুর রং কবে কখন হবে তা ঠিক করা যায় না। রায় বাড়ির সদস্য আবির রায় বলেন, “নির্দিষ্ট কেউ ঠাকুর রং করবেন এমনটা হয় না। স্বপ্ন পেয়ে রং করতে লোক ঠিক চলে আসেন।’’

উগ্রচণ্ডার পুজোয় পাঁঠা বলির রেওয়াজ নেই। চালকুমড়ো, শসা বলি দেওয়া হয়। বিষ্ণপুরে মৃণ্ময়ী এবং রাজ রাজেশ্বরীর তোপের আওয়াজেই বলির সময় নির্ধারণ করা হয়। পঞ্জিকার পাশাপাশি এই রীতি মানা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। অভিনবত্ব রয়েছে ভোগের ক্ষেত্রেও। ঠাকুরের মূল প্রসাদ হল দুধ লুচি। নবমীর দিন গাওয়া ঘি দিয়ে লুচি করা হয়। অন্যদিকে দুধ ফুটিয়ে ঘন করে তাতে  নারকেল কোরা, কলা, ড্রাই ফ্রুটস দিয়ে এই প্রসাদ তৈরি করা হয়। এই দুধ এবং ঘি একই পরিবারের থেকে বহু বছর থেকে দেওয়া হচ্ছে। তবে কাটা ফল দেওয়া হয় না ঠাকুরকে। আতপ চাল, চিনি, গোটা ফল নিবেদন করা হয়।

মূলত দুই মন্দির মিলিয়ে পুজো হয়। শুরু হয় এক মন্দিরে শেষ হয় আরেক মন্দিরে। ঠাকুর যে মন্দিরে ১২ মাস থাকে, সেখান থেকে সপ্তমী আর অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে নাট মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। ওই সময় যার যেমন সামর্থ সেই অনুযায়ী ঠাকুরের হাতে টাকা দেয়। বহু বছর ধরেই এই রীতি চলছে। যে টাকাটা ওঠে সেটা এই পুজোর সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। অষ্টমী থেকে ওই নাট মন্দিরেই হয় পুজো। এই সময় প্রত্যেকের নামে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালানো হয়। নবমী রাত পর্যন্ত এটা চলে। অষ্টমী থেকে দশমী পর্যন্ত নাট মন্দিরেই পুজো হয়। দশমীর রাতে ঘট বিসর্জনের পর মূল মন্দিরে প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মূল মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমাকে।

(Feed Source: abplive.com)