এখনও পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, ২০০৮-’০৯ সালের যুদ্ধে ৩৪১টি শিশুর মৃত্যু হয়। ২০১২-র যুদ্ধে ৩৫টি শিশু মারা যায়। ২০১৪ সালে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫৩২। ২০২১ সালে ৬৬টি শিশু যুদ্ধে মারা যায়। এ বছর ৭ অক্টোবর থেকে এখমও পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এত সংখ্যক শিশুর মৃত্যুতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে UNICEF. পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকায় নিযুক্ত সংস্থার আঞ্চলিক ডিরেক্টর আদেল খোদর বলেন, “গাজায় এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তা আমাদের বিবেকের দংশন বাড়িয়ে তুলেছে। আহত এবং নিহত শিশুর সংখ্যা দেখে আমি বাকরুদ্ধ। তবে আরও ভয়ের কারণ রয়েছে। গাজায় মানবিক সাহায্য পাঠাতে না দিলে, খাবার, জল, ওষুধ, জ্বালানি পৌঁছতে না দিতে দিলে, মৃতের সংখ্য়া আরও বাড়বে।”
বুধবার রাতভর গাজায় বোমাবর্ষণ করেছে ইজরায়েলি সেনা। গোলাগুলিও চলেছে নিরন্তর। ইজরায়েলি হামলায় এখনও পর্যন্ত গাজায় ২ লক্ষ বাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। স্কুল এবং শিক্ষাকেন্দ্র মিলিয়ে ২১৯টি ভবন মাটিতে মিশে গিয়েছে, এর মধ্যে ১৯টি চালাত রাষ্ট্রপুঞ্জই। গত তিন সপ্তাহে গাজার ১৪ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া। শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মী মারা গিয়েছেন। উত্তর গাজার ২৪টি হাসপাতাল খালি করতে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইজরায়েল।
যে ক’টি এখনও চালু রয়েছে, ক্ষমতার তুলনায় ১৫০ গুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে সেখানে। অলিতেগলিতে, এমনকি ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন গর্ভবতী মহিলারা। গাজার নাসের হাসপাতালের প্রবেশদ্বারের বাইরে একটি তাঁবু খাটানো হয়েছে। সেখানেই স্তূপাকারে রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। হাসপাতালের ভিতরে, মর্গেও মৃতদেহ কার্যত উপচে পড়ছে। অধিকাংশকে এখনও শনাক্তও করা যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তইপ এর্দোয়ান বলেন, “আত্মরক্ষার বাহানা আর খাটে না ইজরায়েলের ক্ষেত্রে। বুক ফুলিয়ে, সকলের চোখের সামনে গাজায় শোষণ, গণহত্যা, বর্বরতা এবং নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।” বাহরাইন, মিশর, জর্ডান, কুয়েত, মরক্কো, ওমান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিও তীব্র সমালোচনা করেছে ইজরায়েলের। পশ্চিমি দেশগুলির পূর্ণ সমর্থনে ইজরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে চলেছে, গণহত্যা করছে বলে মন্তব্য করেছে সিরিয়া।
সিরিয়ার বিদেশমন্ত্রী ফয়জল মকদদ বলেন, “আমেরিকা এবং পশ্চিমি শক্তিগুলি ইজরায়েলের ফ্যাসিবাদী সরকারকে প্যালেস্তিনীয়দের গণহত্যা চালানোর অনুমতি দিয়েছে। ইজরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে বলে দাবি করে আসলে গাজাকে ধ্বংস করে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্যালেস্তিনীয়দের মাথার উপরের ছাদ কেড়ে নিয়ে, তাদের জল, বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত করে রেখে প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়ে চলেছে ইজরায়েল।”
ব্রিটেনের অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সংগঠনও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেন, “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন গুরুতর পর্যায়ে পৌঁঁছে গিয়েছে। যুদ্ধাপরাধও ঘটে চলেছে। এত পরিস্থিতিতে মানবিকতা বোধকে জাগ্রত হতে দিন।”
(Feed Source: abplive.com)