আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অক্টোবর মাসে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে আমেরিকার কংগ্রেসের দুই পক্ষের সদস্যদের নিয়ে গঠিত Strategic Posture Commission.তাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করতে গিয়ে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, আগামী দিনে চিন এবং রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বাধতে পারে আমেরিকার। কিন্তু তার জন্য মোটেই প্রস্তুত নয় আমেরিকা। বিদেশনীতির পাশাপাশি সামরিক শক্তি, বিশেষ করে নিজেদের পারমাণবিক শক্তি ঝালিয়ে নেওয়া এবং তার আধুনিকীকরণ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে।
তার পরই পেন্টাগনের তরফে সক্রিয়তা শুরু হয়। গত ২৭ অক্টোবর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিচালিত পরমাণু বোমা তৈরির কথা জানায় তারা। সে দেশের সংবাদমাধ্যমেও এ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, B61-13 Nuclear Gravity Bomb আধুনিক সংস্করণ আনতে চায় পেন্টাগন। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র কংগ্রেসের অনুমোদন এবং আর্থিক বরাদ্দের জন্য অপেক্ষা করছে তারা। এ প্রসঙ্গে আমেরিকার মহাকাশ প্রতিরক্ষা নীতি বিভাগের সহকারী সচিব জন প্লাম্ব বলেন, ‘‘চারপাশে নিরাপত্তাজনিত যে পরিবর্তন চোখে পড়ছে, শত্রুপক্ষের চোখরাঙানি যেভাবে বেড়ে চলেছে, এই পদক্ষেপ তারই প্রতিফলন।’’
তবে সাধারণ পরমাণু বোমার চেয়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিচালিত পরমাণু বোমা অনেকটাই আলাদা। এমনিতে পরমাণু বোমা চালিত হয় প্রোপালসন প্রযুক্তির মাধ্যমে। অর্থাৎ রকেট ইঞ্জিন দ্বারা সেগুলি চালিত হয়। মাধ্যাকর্ষণ শক্তিচালিত পরমাণু বোমা যুদ্ধবিমান থেকে পতিত হয়ে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলে। পতনের সময় মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থেকে ধ্বংসাত্মক শক্তি আহরণ করতে থাকে। তবে মাটি ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ ঘটে না। বরং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে মাটি ফুঁড়ে প্রায় ৫০ ফুট গভীরে গেঁথে যায় বোমাটি। তার পর তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। এতটাই শক্তিশালী হয় এই পারমাণবিক বোমা যে মাটির নীচে তৈরি বাঙ্কার পর্যন্ত গুঁড়িয়ে যায়।
১৯৪৫ সালের ৬ অগাস্ট হিরোশিমায় যে পরমাণু বোমা ফেলা হয়েছিল, তা থেকে ১৫ কিলোটন শক্তি উৎপন্ন হয়েছিল। মারা গিয়েছিলেন ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ। নাগাসাকিতে ফেলা বোমা থেকে ২৫ কিলোটন শক্তি উৎপন্ন হয়েছিল। মারা গিয়েছিলেন ৭৪ হাজার মানুষ। মাধ্যাকর্ষণ শক্তিচালিত যে পরমাণু বোমা তৈরির পথে এগোচ্ছে, তা থেকে ৩৬০ কিলোটন শক্তি উৎপন্ন হতে পারে। সাধারণ যুদ্ধবিমান নয়, B-2 স্টেলথ বম্বার বোমারু বিমান থেকে সেটি বহন করতে পারবে।
পেন্টাগন সূত্রে খবর, আধুনিক বিমানে চাপিয়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিচালিত পরমাণু বোমা সরবরাহ করা সম্ভব। বহুদূর বিস্তৃত অঞ্চলে শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে তা প্রয়োগ করা যাবে। ইজরায়েল বনাম প্যালেস্তাইনের হামাস সংগঠনের যুদ্ধে এই মুহূর্তে পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক। পাশাপাশি, এক বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যেও যুদ্ধ পরিস্থিতি বজায় রয়েছে। সেই আবহেই পেন্টাগনের তরফে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এর আগে, অক্টোবরেই নেভাডায় পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা করেছে তারা।
(Feed Source: abplive.com)