Habji Gabji Film Review : হাতের মোবাইলটা ভাবিয়ে তুলল

Habji Gabji Film Review : হাতের মোবাইলটা ভাবিয়ে তুলল

রণিতা গোস্বামী  

বিকেল ৪টে। ওপেনিংডে-তে সিটি সেন্টার আইনক্সে বসে রাজ চক্রবর্তীর ‘হাবজি গাবজি’ দেখছি। ছবিটা যত এগোচ্ছিল ততই নিজের ছোট্ট ছেলের কথা মনে পড়ছিল। বারবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছিলাম। আর, নিজেকে বোঝাচ্ছিলাম আর পাঁচজন কর্মব্যস্ত বাবা-মা-র মতো এই ভুল যেন না করি। যতই ব্যস্ততা থাক, ছেলেকে মোবাইল গেম খেলতে দেওয়া যাবে না। হাজব্যান্ডকেও বিষয়টা নিয়ে সচেতন করতে হবে।

‘হাবজি-গাবজি’ মোবাইল গেমিং নিয়ে আপনাকেও গভীর আশঙ্কার মধ্যে ফেলে দেবে নিশ্চিত। কেরিয়ারমুখী হতে গিয়ে আমরা নিজের সন্তানকেই বড় বেশি আড়ালে সরিয়ে দিচ্ছি না তো? আর সে চাপা পড়ছে আধুনিক প্রযুক্তি দানবে। ঠিক এই ভাবনাটাই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। ঠিক যেভাবে ভাবিয়ে তুলেছে আদিত্য ও আহানাকে। এত কোলাহল, এত ছোটাছুটি… দূরে দূরে দূরে, যত দূরেই যাই ঘুরে ঘুরে একটু তাকাই থামল কখন, ভাঙল কীসে  কাউকে জীবন, দেয় না হিসেব… । ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত-র সুরে, শ্রীজাত লেখা গান বড়ই প্রাসঙ্গিক। জীবন সত্যিই কাউকে হিসেব দেয় না। তবে সব হিসেব কড়ায় গন্ডায় বুঝে নেয়।

আদিত্য ও আহানা, ছোট্ট ফ্ল্যাটে ভালোবাসার ঘর বেঁধেছে। ভালোবাসার চিহ্ন তাঁদের সন্তান। নাম আনিস। আদরের নাম টিপু। বড় ফ্ল্যাট, বড় গাড়ি কেনার স্বপ্নে বিভোর আদি ও আহানা। আর তাই টিপু আজ বড় একা। সে তাঁর মা-বাবাকে মিস করে। এই দৃশ্য আরও একবার আমার মাতৃত্বে খোঁচা দিল? মনে একটা ছোট্ট আশঙ্কা! কি জানি আমার ছোট্ট ছেলের মনে অজান্তে কোনও একাকীত্ব তৈরি হচ্ছে না তো? সিনেমা এগোল…। ছবির দৃশ্যে দেখি বাড়িতে ফিরেও ছেলের জন্য খুব বেশি সময় নেই আদি-আহানার। ব্যস্ততা…। টিপুর সঙ্গে খেলার সময় নেই বাবা আদির। অফিস থেকে ফিরে ছেলের সঙ্গে খেলার বদলে তার হাতে মোবাইল গেম ধরিয়ে দেয় আদি। আর সেখানেই সর্বনাশের জাল বোনা শুরু। সেই বুনন ক্রমাগত গাঢ় হতে থাকে। আর আমার মনের মধ্যে মোবাইল গেমিং নিয়ে ভয়টা আরও জমাট বাঁধতে থাকে।

গেমিংয়ের নেশায় ক্রমশ বুঁদ টিপু। পারিপার্শ্বিক জীবন থেকে সরে বাস করতে থাকে অজানা দুনিয়ায়। সেই দুনিয়া বন্ধুকবাজদের, শুধুই শত্রুকে নিকেশ করার। টিপু যখন শক্রুদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে, আমার মনের মধ্যে তখন মাতৃত্ব ও ব্যস্ততা নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। টিপুকে নিয়ে আদি ও আহানার টনক যখন নড়ল তখন বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। বাবা-মাও এখন টিপুর ‘Enemy’, যে কোনও দিন তারাও টিপুর বন্দুকে টিগারের সামনে পড়তে পারেন। মনে মনে নিজেকে বললাম সাবধান! ছেলের শত্রু নয়, বন্ধু হতে হবে। ব্যস্ততা থাকবেই, তবে সময় বের করতেই হবে।

উত্তেজনার পারদ চড়ে ছবির দ্বিতীয় পর্যায়ে গিয়ে। ছেলেকে গেমিংয়ের দুনিয়া থেকে ফিরে পেতে আদি-আহানা গেল টুরুক-এ (সিকিম)। যেখানে নেই কোনও ওয়াইফাই, নেই কোনও নেটওয়ার্ক।  Game খেলার উপায় তো নেই, কী করবে টিপু? ছেলে মোবাইল থেকে কিছুটা দূরে রাখা গেলে গেমিংয়ের দুনিয়া থেকে ছেলেকে কি বের করতে পারল আদি ও আহানা? নাকি পা দিল আরও বড় বিপদের ফাঁদে? সেকথা বলার সত্যিই উপায় নেই। এখানে রয়েছে ছোট্ট একটা টুইস্ট। সেটা ফাঁস না হয় নাইবা করলাম।

‘পরিণীতা’ ছবি থেকেই অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় ক্রমে আরও পরিণত হয়েছেন। আর পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় যে একজন দক্ষ অভিনেতা তা নতুন করে বলার দরকার নেই। প্রশংসনীয় ছোট্ট অভিনেতা স্যমন্তকদ্যুতি মৈত্রের অভিনয়। অন্যান্য চরিত্রে ছবির মূল অভিনেতাদের যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন কাঞ্চন মল্লিক, পদ্মনাভ দাশগুপ্ত সহ অন্যান্যরা। রাজ চক্রবর্তীর এই ছবিতে গান খুব বেশি নেই। তবে ‘দূরে’, এবং ‘একা একা আমি’ দুটি গানই ছবির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। ২ ঘণ্টার এই ছবি কিন্তু বেশ টানটান। কোথাও গল্পটি খুব বেশি জোর করে বাড়ানো হয়েছে বলে মনে হয়নি। তবে হল থেকে বের হওয়ার সময়ও হাতের মোবাইলটাই নাড়াচাড়া করছিলাম। দেখে নিলাম, আমার মোবাইলে কোনও গেম নেই তো? ‘হাবজি গাবজি’ মোবাইল গেমিং নিয়ে সত্যিই ভাবিয়ে তুলল। ভালো ছবি, কিন্তু আতঙ্কে নিক্ষেপ করার মতো।

(Source: zeenews.com)