বুধবার শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন, জিরো আওয়ারে লোকসভায় তাণ্ডব চালান দুই যুবক। গ্যালারি থেকে লাফিয়ে নেমে আসেন। সাংসদের ডেস্ক টপকাতে টপকাতে স্পিকারের দিকে ছুটে যান। হাতে থাকা স্মোক ক্যানিস্টার্স থেকে হলুদ ধোঁয়া ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা স্লোগানও তোলেন। সংসদভবনের বাইরে একই ঘটনা ঘটান তাঁদের অন্য দুই সহযোগী, এক মহিলা এবং এক যুবক। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা। এক জন এখনও অধরা। কলকাতার এক যুবকের সঙ্গেও অভিযুক্তদের সংযোগ পাওয়া গিয়েছে বলে খবর। (Security Breach Lok Sabha)
এই ঘটনায় গোটা দেশ যখন উত্তাল, সেই সময়ই নয়া তথ্য সামনে এল দিল্লি পুলিশ সূত্রে। জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা ‘ভগৎ সিং ফ্যান ক্লাব’ নামে সোশ্যাল মিডিয়া পেজে যুক্ত ছিলেন। বছর দেড়েক আগে মহীশূরে একবার দেখা করেন তাঁরা। তার পর চলতি বছরের জুলাই মাসে, বাদল অধিবেশন চলাকালীন প্রথম বার সংসদে ঢোকার চেষ্টা করেন সাগর শর্মা নামের এক অভিযুক্ত। সেবার ব্যর্থ হলেও, ফের পরিকল্পনা শুরু হয়। ১০ ডিসেম্বর দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে জড়ো হন সকলে। সেখানেই স্মোক ক্যানিস্টার্স নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন তাঁরা।
ডি মনোরঞ্জন নামের অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, বাজেট অধিবেশনে পুরনো সংসদভবনে হাজির ছিলেন তিনি। রেকি করার লক্ষ্য নিয়েই সেবার অধিবেশনে যান তিনি। তখনই স্মোক ক্যানিস্টার্স কোথায় লুকিয়ে রাখা যায়, বুঝে নিয়েছিলেন তিনি। জানেত পেরেছিলেন, সংসদভবনে ঢোকার সময় বেশ কয়েক ধাপে নিরাপত্তা বলয় পার করতে হলেও, জুতো পরীক্ষা করে দেখার রেওয়াজ নেই। সেই থেকেই জুতোয় স্মোক ক্যানিস্টার্স লুকনোর কথা মাথায় আসে। এই সাগর এবং মনোরঞ্জনই গতকাল লোকসভায় তাণ্ডব চালান। বাইরে ছিলেন তাঁদের তিন সহযোগী, নীলম আজাদ, অমোল শিন্ডে এবং ললিত ঝা। নীলম এবং অমল গ্রেফতার হলেও, ললিত এখনও বেপাত্তা। কলকাতার যুবক নীলাক্ষ আইচের সঙ্গেও তাঁদের সংযোগ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ভিকি শর্মা এবং তাঁর স্ত্রী রাখি নামের আর এক মহিলাকেও আটক করা হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত যা তথ্য পাওয়া গিয়েছে, সেই অনুযায়ী, সাগর লখনউয়ের বাসিন্দা, মনোরঞ্জনম মহীশূরের, নীলম হিসারের এবং অমল মহারাষ্ট্রের। মহীশূরের বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিংহার দফতর থেকে সংসদে ঢোকার পাস জোগাড় করে এই কাণ্ড ঘটান তাঁরা। গোটা ঘটনায় বিজেপি সাংসদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সেই আবহেই স্পিকার ওম বিড়লার সঙ্গে দেখা করেন প্রতাপ। জানান, মনোরঞ্জনের বাবা পাসের জন্য অনুরোধ করেছিলেন তাঁকে। প্রায়শই এমন পাস দিয়ে থাকেন তিনি, যাতে সংসদের কাজকর্ম কাছ থেকে দেখতে পান দেশের নাগরিকরা। কিন্তু তাঁর দেওয়া পাস যে এই কাজে ব্যবহৃত হবে, তা জানতেন না তিনি।
ধৃতরা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, উচ্চশিক্ষার পরও চাকরি পাননি তাঁরা। তা ছাড়াও চারপাশের ঘটনাবলী দেখে হতাশ ছিলেন। মণিপুরের অশান্তি হোক বা কৃষক আন্দোলন, খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার নিয়ে কেউ ভাবিত নয় দেখে প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছিলেন। ধৃতদের বিরুদ্ধে UAPA ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে। এই ঘটনায় সংসদভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
(Feed Source: abplive.com)