কেরলের জন্য ছবিটা কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টো। মোহনবাগান যেখানে টানা তিন ম্যাচে হেরে এ বছরকে বিদায় জানাচ্ছে, সেখানে টানা তিন ম্যাচে জিতে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে চলেছে কেরল ব্লাস্টার্স। গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের একমাত্র গোলে জয় পায় কেরলের দলটি। এই জয়ের ফলে ১২ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট অর্জন করে লিগ টেবলের শীর্ষেও পৌঁছে গেল তারা। অন্যদিকে, মোহনবাগান নেমে গেল পাঁচ নম্বরে। দশ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ১৯ পয়েন্ট।
সবুজ মেরুন শিবিরের সাতজন ফুটবলার চোট পেয়ে এখনও দলের বাইরে। ফেব্রুয়ারিতে যখন তারা ফের আইএসএলের অভিযান শুরু করবে, তখন এঁদের মধ্যে থেকে ক’জনকে সুস্থ অবস্থায় পাওয়া যাবে সেটাই দেখার। তবে এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে এই মরশুমে তাদের সময় ভাল নাও যেতে পারে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
এ দিন চারটি পরিবর্তন করে ৩-৪-১-২ ছকে দল সাজায় মোহনবাগান। হুগো বুমৌস, কিয়ান নাসিরি, আশিস রাই, হেক্টর ইউস্তে দলে ফেরেন আর্মান্দো সাদিকু, ব্রেন্ডন হ্যামিল, গ্লেন মার্টিন্স ও মনবীর সিংহের জায়গায়। প্রথমার্ধে একেবারেই ছন্দে ছিল না তারা। বাঁ দিকের উইং ধরে ব্লাস্টার্সের ফরোয়ার্ডদের নাগাড়ে আক্রমণে চাপে পড়তে হয় মোহনবাগানকে। সে ভাবে বলার মতো প্রতিআক্রমণও গড়ে তুলতে পারেননি বুমৌসরা।
ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই দিয়ামান্তাকসের শট বারে লাগে। আশিস রাই ঠিক মতো বুক দিয়ে বল রিসিভ করতে না পারায় বল পেয়ে যান দিয়ামান্তাকস। সে যাত্রায় মোহনবাগান রক্ষা পেলেও, বেশিক্ষণ ব্লাস্টার্সকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেননি তারা। নবম মিনিটে গ্রিক ফরোয়ার্ডের গোলেই এগিয়ে যায় ব্লাস্টার্স। টাঙরি, হেক্টর ইউস্তে, ও আশিসকে পরাস্ত করে বক্সের বাঁ দিক থেকে কোণাকুনি শট নেন তিনি, যা গোলের ওপরের জালে জড়িয়ে যায়।
ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিটে মোহনবাগানের একটিও শট নিতে ব্যর্থ হয়। সেখানে ব্লাস্টার্সের ফুটবলাররা কিন্তু পাঁচটি শট নেন। প্রথমার্ধের শেষ দিকে সমানে পরপর আক্রমণ করেন। ৩৮ মিনিটে রাহুল কেপির শট লক্ষভ্রষ্ট হয়, ৩৯ মিনিটে বক্সের বাঁদিক থেকে কোয়ামে পেপরার কোণাকুনি শট বাঁচান বিশাল। পেপরার সঙ্গে ওই সময় শুভাশিস সমানে লেগে না থাকলে হয়তো দ্বিতীয় গোল পেয়ে যেত ব্লাস্টার্স। ৪২ মিনিটে ফের পেপরার কোণাকুনি শট ব্লক করেন ইউস্তে। এই আক্রমণগুলির প্রতিটিই হয় বাঁ দিক থেকে। টাঙরি ও আশিস বারবার তাঁদের আটকাতে ব্যর্থ হন। দ্বিতীয়ার্ধে তাই টাঙরিকে বসিয়ে লালরিয়ানা নামতেকে নামানো হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে অবশ্য অন্য মোহনবাগানকে দেখা যায়। বিশেষ করে আক্রমণে। প্রথমার্ধে যেখানে কোনও শটই নিতে পারেনি হোম টিম, সেখানে দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে চারটি শট নেয় তারা, যার মধ্যে একটি ছিল গোলে। ৪৬ মিনিটের মাথায় কিয়ানের বাঁ পায়ের কোণাকুনি দুর্বল শট ধরে নেন গোলকিপার শচীন সুরেশ। ৫১ মিনিটের মাথায় ফের বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেন কিয়ান। কিন্তু জোরালো বাধা পেয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ খোয়ান। ৫০ মিনিটের মাথায় পেট্রাটসের কর্নার থেকে নেওয়া শুভাশিসের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৫৩ মিনিটের মাথায় গোলের সামনে কামিংসের হেডও গোলের বাইরে চলে যায়। ৫৬ মিনিটে ফের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া পেট্রাটসের শট ব্লক হয়ে যায়।
এতগুলো আক্রমণে ব্যর্থতার পরে ৬২ মিনিটে কামিংসকে তুলে নিয়ে আরমান্দো সাদিকুকে নামান মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দো। এর পরে সুমিত রাঠিকে তুলে নিয়ে মনবীর সিংহকে নামানো হয়। আক্রমণে আরও জোরালো হয়ে ওঠে সবুজ-মেরুন বাহিনী। ৭১ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে থেকে জোরালো, দূরপাল্লার শট নেন পেত্রাতোস। তবে সেই শট বারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
আক্রমণে তরতাজা ভাব আনার জন্য ৮১ মিনিটের মাথায় কিয়ানকে তুলে সুহেল ভাটকে নামায় মোহনবাগান। এর পরেই ডানদিক থেকে আশিস রাইয়ের লম্বা ক্রস হেড করে গোলের চেষ্টা করেন সাদিকু, যা ফের লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। কেরালার দলের দুই বিদেশি ডিফেন্ডার মার্ক লেসকোভিচ ও মিলোস দ্রিনচিচই এ দিন প্রতিপক্ষের সামনে প্রায় দেওয়াল তুলে রেখেছিলেন। এঁদের তৈরি দেওয়াল ভেদ করে আর জালে বল জড়াতে পারেননি মোহনবাগানের কোনও ফুটবলারই।
ব্লাস্টার্স অবশ্য এর মধ্যেও ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা থামায়নি। দু’টি অনবদ্য সুযোগ পেয়ে যায় তারা। দু;’বারই মোহনবাগানকে বাঁচায় গোলকিপার বিশাল কাইথ। ৭৪ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া দিয়ামান্তাকসের মাটি ঘেঁষা জোরালো শট আটকে দেন বিশাল। স্টপেজ টাইমে মাঝমাঠ থেকে পাওয়া বল নিয়ে উঠে ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে গোলে শট নেন রাহুল কেপি। এবারও তা আটকে দেন বিশাল। ৯৫ মিনিটের মাথায় গোলের সামনে থেকে নেওয়া দাইসুকে সাকাইয়ের গোলমুখী শটও আটকে দেন বিশাল। তিনি এতটা তৎপর না হলে আরও বড় ব্যবধানে হারতে হত মোহনবাগানকে।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
(Feed Source: abplive.com)