জড়িয়ে চন্দ্রযান-৪ অভিযানের ভবিষ্যৎ, নতুন বছরে চাঁদের মাটি ছুঁতে পারবে কি SLIM?

জড়িয়ে চন্দ্রযান-৪ অভিযানের ভবিষ্যৎ, নতুন বছরে চাঁদের মাটি ছুঁতে পারবে কি SLIM?
নয়াদিল্লি: দীর্ঘ চার মাসের যাত্রা শেষে চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়েছে জাপানের চন্দ্রযান Smart Lander for Investigating Moon (SLIM). আগামী ১৯ জানুয়ারি চাঁদের বুকে পদার্পণ করতে চলেছে সেটি, তাতে সফল হলে পালকের মতো চাঁদের মাটি ছোঁয়া পঞ্চম দেশ হিসেবে গন্য হবে জাপান। গত অগাস্ট মাসে ভারতের চন্দ্রযান-৩ সেই কাজে আগেই সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু জাপানের SLIM-এর সাফল্যের উপর সেদেশের মহাকাশ গবেষণার কাজই নয়, ভারতের পরবর্তী চন্দ্রাভিযানের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে অনেকাংশে। (SLIM Moon Mission)

জাপান এ্যরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (JAXA) গত ৭ সেপ্টেম্বর, তানেগাশিমা স্পেসপোর্ট থেকে SLIM-এর সফল উৎক্ষেপণ করে। উৎক্ষেপণের সময় তার ওজন ছিল ৫৯০ কেজি, যা ভারতের চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের এক সপ্তমাংশ। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র তৈরি চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের ওজন ছিল ৩ হাজার ৯০০ কেজি। ভারতের চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযান ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ এবং রোভার ‘প্রজ্ঞান’কে নিয়ে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেয়। SLIM-এর সঙ্গেই H-2A রকেটে চাপিয়ে অত্যাধুনিক X-ray স্পেস টেলিস্কোপ XRISM উৎক্ষেপণ করে জাপান। এসবের প্রস্তুতি নিতে গিয়েই ২০২১ থেকে পিছিয়ে ২০২৩  সাল লেগে যায় উৎক্ষেপণে। (Chandrayaan 4)

এর পর, গত ২৫ ডিসেম্বর চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে SLIM, তাও মাত্র তিন মিনিটে। চন্দ্রযান-৩ চাঁদের মাটি ছোঁয়ার দুই সপ্তাহ পর রওনা দেয় জাপানের SLIM. চলতি বছরে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার পালকের মতো চাঁদের মাটি ছোঁয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে জাপান। এর আগে, এপ্রিল মাসে সেদেশের ispace সংস্থার তৈরি HAKUTO-R M1 ল্যান্ডার চাঁদের বুকে অবতরণের সময় ভেঙে পড়ে। আচমকা ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়াতেই দুর্ঘটনা ঘটে।

তাই SLIM-কে ঘিরে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করছে জাপান। ভারতের চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের প্রপালসন মডেলের ওজনই ২০০০ কেজির বেশি। Hohmann Transfer Orbit নামক রুট ধরে সেটি চাঁদে পৌঁছয়। সেই নিরিখে চাঁদের মাটি ছুঁতে SLIM সময় নিচ্ছে প্রায় চার মাস।  চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের চেয়ে দীর্ঘ রুট ধরে এগোলেও, তা ছিল জ্বালানিসঞ্চয়ী। তাই চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের তুলনায় কম পরিমাণ জ্বালানি বহন করছে SLIM. জাপানের বিজ্ঞানীদের কৌশলেই তা সম্ভব হয়েছে। কারণ দুর্বল স্থিতিশীলতা তত্ত্ব মেনে, পৃথিবীর কক্ষপথেই বেশ কয়েক বার চক্কর কেটেছে SLIM. যত বার চক্কর কেটেছে, ততই তার গতিশক্তি বেড়েছে। আর তাতে ভর করেই একেবারে ছিটকে চাঁদের কক্ষপথের দিকে এগিয়ে যায় সে।

চন্দ্রযান-৩ বার বার ব্রেক কষেছে মহাশূন্যে, যাতে মহাকর্ষ বল যেখানে সবচেয়ে দুর্বল, সেখানে অবতরণ করা যায়, যাতে অনেক বেশি জ্বালানি খরচ হয়েছে। কিন্তু SLIM-এর আচরণ সম্পূর্ণ উল্টো। চাঁদের সঙ্গে দূরত্ব কমতে শুরু করলে, তার গতি শ্লথ হয়নি পাল্লা দিয়ে। বরং চাঁদের মহাকর্ষ বলকে কাজে লাগিয়ে, তার দিকেই অভিমুখে বিচ্যুত হওয়ার দিকে ঝোঁকে। আটের দশকে জাপানের জ্য়োতির্পদার্থবিদরাই এই সূত্রের প্রয়োগ করেন ‘হিতেন’ অভিযানের জন্য। সেই মতোই বড়দিনে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে SLIM. সময় বেশি লাগলেও, জ্বালানি খরচ হয়েছে কম।

জাপানের চন্দ্রযান SLIM-কে ‘মুন স্নাইপার’ও বলা হচ্ছে।  চাঁদের বুকে অবতরণের জন্য একটি জায়গা চিহ্নিত করা হয় আগেই, তার ১০০ মিটার গণ্ডির মধ্যেই নামার লক্ষ্য রয়েছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের ল্য়ান্ডারের জন্যও ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ, ২.৫ কিলোমিটার চওড়া একটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছিল চাঁদের বুকে। কিন্তু সেই জায়গা থেকে প্রায় ৩৫০ মিটার দূরে অবতরণ করে ভারতের চন্দ্রযান-৩। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র কিউরিওসিটি রোভারও পূর্ব নির্ধারিত জায়গা থেকে ২.৪ কিলোমিটার দূরে অবতরণ করে। চিনের চাঙ্গি-৩ মহাকাশযান অবতরণ করে নির্ধারিত জায়গা থেকে ৮৯ মিটার দূরে। তাই SLIM-এর অবতরণের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

আগামী ১৯ জানুয়ারি চাঁদের বুকে শিওলি গহ্বরের ১৩.৩ ডিগ্রি দক্ষিণ এবং ২৫.৮৩ ডিগ্রি পূর্বে অবতরণ করার কথা SLIM-এর, যা এযাবৎকালীন ক্ষুদ্রতম। SLIM-কে দিকনির্দেশ করবে JAXA-র SELENE অরবিটার থেকে প্রাপ্ত তথ্য। চাঁদের বুকে SLIM-এর দুই রোভারও অবতরণ করবে, Lunar Excursion Vehicle (LEV) ১ এবং ২। চাঁদের মাটি পরীক্ষা করে দেখা হবে সেখানে। তাপমাত্রার ওঠাপড়া, বিকিরণও পরীক্ষা করে দেখা হবে।

SLIM-এর এই অভিযানের উপর ভারতের পরবর্তী চন্দ্রাভিযানের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে ঘিরে বিজ্ঞানীদের কৌতূহল বরাবরই। আবছায়া পরিবেশে বৃহদাকার গহ্বরগুলি কখনও স্পষ্ট দেখাই যায় না। তাই সেখানে মাটির নিচে জলীয়-বরফ থাকার কথা জানা গেলেও, তা হাতে ধরে পরখ করা যায়নি। সেই রহস্য উদগাটনে মুখিয়ে রয়েছে প্রত্যেক দেশই। ভারতের ISRO ইতিমধ্যেই চন্দ্রযান-৪ অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে, যাতে চাঁদের মেরু অঞ্চলে অনুসন্ধান (Lunar Polar Exploration/Lupex)  চালানো যায়। ভারত এবং জাপান যৌথ ভাবে এই অভিযান চালাবে। ২০২৬ সাল নাগাদ মহাকাশযান পাঠানোর লক্ষ্য রয়েছে। চাঁদের আরও দক্ষিণে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। লঞ্চ ভেহিকল এবং রোভার তৈরি করবে JAXA, ল্যান্ডারের দায়িত্বে ISRO. জাপানের তরফে ইতিমধ্যেই অনুমোদন এসে গেলেও, ভারতের তরফে সবুজ সঙ্কেত মেলেনি এখনও পর্যন্ত। কোথায় অবতরণ হবে, তাও ঠিক হয়নি এখনও পর্যন্ত। চাঁদের বুকে SLIM-এর অভিযানের উপরই সবকিছু নির্ভর করছে।

(Feed Source: abplive.com)