যৌনদাসী কেনাবেচা নিয়ে জেফ্রি এপস্টিনকে ঘিরে যে বিতর্ক, তাতে তাঁর বান্ধবী তথা সঙ্গিনী জিসলেন ম্যাক্সওয়েলেও দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যৌনদাসী সরবরাহে জেফ্রির সহযোগী ছিলেন জিসলেন। ২০১৫ সালে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়, তারই তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে বিশ্বের তাবড় ব্যক্তিদের নাম রয়েছে। রয়েছে বিস্ফোরক তথ্যসমূহ।
ক্লিন্টন এবং জেফ্রিকে নিয়ে বিতর্ক আজকের নয়। জেফ্রির প্রাইভেট জেট ব্যবহার থেকে তাঁর ব্যক্তিগত মালিকানাধীন দ্বীপে পর্যন্ত ক্লিন্টন গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তদন্তের রিপোর্টেও ক্লিন্টনের উল্লেখ রয়েছে। জেফ্রির ওই দ্বীপেই প্রভাবশালীরা ফূর্তি করতে আসতেন বলে অভিযোগ করেছেন ভার্জিনিয়া রবার্টস ওরফে ভার্জিনিয়া জিওফ্রে। ওই দ্বীপে দুই মহিলার সঙ্গে ক্লিন্টন সময় কাটান বলে দাবি করেছেন তিনি। আর এক অভিযোগকারিণী জোয়ানা সোবার্গ জানিয়েছেন, ‘বাচ্চা মেয়ে’রাই ক্লিন্টনের পছন্দ বলে তাঁকে জানিয়েছিলেন জেফ্রি। আমেরিকার আর এক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও জেফ্রির দেখা-সাক্ষাতের কথা উঠে এসেছে রিপোর্টে।
১০০০ পাতার ওই রিপোর্টে ব্রিটেনের প্রিন্ট অ্যান্ড্রুর নামও রয়েছে। জোয়ানা জানিয়েছেন, ম্যানহ্যাটনে জেফ্রির বাড়িতে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর হাতে পড়েন তিনি। প্রথম সাক্ষাতেই তাঁর সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু। অনুমতি না নিয়েই তাঁকে স্পর্শ করেন। ওই রিপোর্টে নাম রয়েছে প্রয়াত পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন, জাদুকর ডেভিড কপারফিল্ডেরও। তবে মাইকেল তাঁর থেকে ‘মাসাজ’ নেননি বলে জানিয়েছেন জোয়ানা।
স্টিফেন হকিং এবং প্রায় ২০ জন প্রখ্যাত বিজ্ঞানীও জেফ্রির ওই দ্বীপে গিয়েছিলেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। জীবনের দীর্ঘ সময় হুইল চেয়ারেই বন্দি ছিলেন হকিং। কিন্তু নাবালিকা মেয়েদের সঙ্গে তিনি শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। ভার্জিনিয়া দাবি করেন, এক নাবালিকার সঙ্গে মিলে হকিংয়ের সঙ্গে তাঁকে সঙ্গমে বাধ্য করেন জেফ্রি। সেই নিয়ে জিসলেন এবং জেফ্রির মধ্যে ইমেলে কথা হয়, যেখানে জিসলেনকে বিষয়টি অস্বীকার করতে অনুরোধ জানান এপস্টিন।
মাইক্রোসফ্টের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসও জেফ্রির দ্বীপে একাধিক বার গিয়েছিলেন বলে রিপোর্টে উঠে এসেথে। মেলিন্ডা গেটসের সঙ্গে দাম্পত্যে তখনও চিড় ধরেনি, সেই সময় মিলা আন্তোনোভার সঙ্গে নাম জড়ায় গেটসের। জেফ্রির সঙ্গে বিলের যোগাযোগও বিবাহবিচ্ছেদের জন্য দায়ী বলে পরবর্তী কালে মন্তব্য করেন মেলিন্ডা। গুগলের প্রতিষ্ঠাতা সেরগেই ব্রিন, জনপ্রিয় মডেল নেওমি ক্যাম্পবেলেরও উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে। নেওমির নাম ভাঙিয়ে অল্পবয়সি মেয়েদের জেফ্রি ফাঁদে ফেলতেন বলে দাবি করা হয়েছে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন অধ্যাপক অ্যালান দর্শোউইৎজ ফ্লোরিডায় যৌনদাসী কেনাবেচায় যুক্ত ছিলেন এমনকি একাধিক মেয়ের ধর্ষণ দেখতেও অংশ নিতেন বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে।
আমেরিকার ধনকুবের জেফ্রির বিরুদ্ধে মারাত্মক সব অভিযোগ ছিল। রোজগারের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি নাবালিকা মেয়েদের সঙ্গমে বাধ্য করতেন,ধর্ষণ- নিগ্রহ করতেন এবং বিশ্বের তাবড় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যৌনদাসী সরবরাহ করতেন বলে অভিযোগ। নিজেকে ‘সংগ্রহকারী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন জেফ্রি নিজেও। ক্ষমতাশালী নেতা, শিল্পপতিদের তিনি মহিলা সরবরাহ করতেন, নাবালিকাও। তবে এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ থাকলেও, মাত্র দু’টি মামলাতেই দোষী সাব্যস্ত হন জেফ্রি। জেলবন্দি থাকাকালীন ২০১৯ সালের ১০ অগাস্ট জেলের মধ্যে থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। তার আগেও জেলের মধ্যে আক্রান্ত হন তিনি। তাই রহস্যমৃ্ত্যু ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। তাঁকে আসলে খুন করা হয়েছে বলেও দাবি ওঠে।
(Feed Source: abplive.com)