এমনিতেই পৃথিবীর সবচেয়ে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় অবস্থান জাপানের। যে কারণে, জাপান থেকেই ভূকম্পবিদ্যার উৎপত্তি, যার আওতায় ভূমিকম্পের কার্যকারণ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। এমনকি সুনামি নিয়ে গবেষণার সূচনাও জাপান থেকেই। ভূগর্ভে দু’টি টেকটোনিক পাতের মধ্যে যখন মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধে অথবা চলতে একটি পাতের উপর অন্যটি উঠে যায়, তা থেকে তীব্র শক্তির উৎপন্ন হয়, যা ভূমিকম্পের আকারে ছড়িয়ে পড়ে। জাপান দেশটি এমন চারটি টেকটোনিক পাতের উপর অবস্থিত, নর্থ আমেরিকান, পেসিফিক, ইউরেশিয়ান এবং ফিলিপিন্স। (Earthquakes in Japan)
ইউনিভার্সিটি অফ পোর্টল্যান্ডের ভূপদার্থবিদ্যার প্রফেসর এমিরেটাস রবার্ট বাটলারের মতে, মাটির নিচে যত বেশি টেকটোনিক পাত থাকবে, তাদের মধ্যেকার সীমানায় ফাটল বা চ্যুতিরেখাও তত বেশি হয়। কখনও একটি পাতের উপর অন্যটি অবস্থান করে। একটু ওঠাপড়া হলেই কেঁপে ওঠে মাটি। জাপানের ক্ষেত্রেও তেমনই ঘটে। সেখানে ভূগর্ভের নিচে অবস্থিত টেকটোনিক পাতগুলির সবক’টিই মূলত সক্রিয়। যে কারণে পৃথিবীর মোট ভূমিকম্পের ১৯ শতাংশ শুধুমাত্র জাপানেই ঘটে। প্রতি বছর সেখানে কমপক্ষে ১৫০০ বার ভূমিকম্প হয়, যা অনুভব করতে পারেন মানুষ। পাঁচ মিনিট অন্তর মাটি কেঁপে ওঠার নজিরও রয়েছে। কম্পনের তীব্রতা অনেক সময় অনুভবই করতে পারেন না মানুষজন। ফলে সেগুলি হিসেবের বাইরে থেকে যায়।
২০১৮ সাল থেকে জাপানে ভূমিকম্পের ঘটনা লাগাতার ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু মুহুর্মুহু এমন কম্পনের নেপথ্য কারণ কী? জবাব দিতে গিয়ে জাপানের ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্র ‘Headquarters for Earthquake Research Promotion’ জানিয়েছে, জাপানের নোতো দ্বীপ এবং সংলগ্ন এলাকায় এই চ্যুতিরেখাগুলি অত্যন্ত সক্রিয়। অত্যন্ত চাপের সৃষ্টি হলে পাতগুলি একত্রিত হয়ে একটি অন্যের উপর উঠে যায় প্রায়শই। দীর্ঘ ক্ষণ ধরে এই ওঠাপড়া চলতেই থাকে। ভূগর্ভের তরলও তাতে কখনও কখনেও উপরে উঠে আসে। তার রেশ এসে পৌঁছয় মাটির উপরেও। ঘন ঘন কেঁপে ওঠে মাটি। ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত নোতো দ্বীপে ১৪ হাজারের বেশি বার ভূমিকম্প হয়েছে, রিখটার স্কেলে যেগুলির তীব্রতা ছিল ১ বা তার চেয়ে সামান্য বেশি। ২০০৭ সালের ২৫ মার্চ এই নোতো দ্বীপেই ৬.৯ তীব্রতায় ভূমিকম্প হয়।
গত কয়েক দশকে ভূমিকম্পের কবলে পড়ে জাপানে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাংশে ভূমিকম্পের প্রকোপ বেশি। ২০১১ সালের ভূমিকম্প এবং সুনামির ফলে সেখানে ২০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যান। আজও খোঁজ মেলেনি প্রায় ৩ হাজার মানুষের। প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার বাড়িঘর ধুলোয় মিশে যায়। ১৯৯৫ সালের ভূমিকম্পে মারা যান ৬ হাজারের বেশি মানুষ। ২০১৬ সালে ২০০ জনের মৃত্যু হয়। ১৯২৩ সালে জাপানে যে ভূমিকম্প হয়েছিল, তাতে ১ লক্ষের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন।
ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হওয়ায়, আগাম সতর্কতার ব্যবস্থা রয়েছে। জাপানের আবহাওয়া দফতর Earthquake Early Warning প্রযুক্তির ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে আগেভাগে বিপর্যয়ের ইঙ্গিত মেলে। তাতে সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকদের ফোনে সতর্কবার্তা চলে যায়। অনেক সময় আবার সতর্কবার্তা গেলেও, বিপর্যয় ততটা ভয়ঙ্কর হয় না। তবে জাপানে ভূমিকম্পে প্রাণহানির ঘটনা তাতেও বন্ধ করা যায়নি আজ পর্যন্ত। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, তাইওয়ান এবং ফিলিপিন্সও সক্রিয় চ্যুতিরেখার উপর অবস্থিত। কিন্তু জাপানের জনসংখ্যা যেহেতু বেশি, তাই জাপান নিয়েই বেশি খবর হয়।
(Feed Source: abplive.com)