পৌষ সংক্রান্তির দিন অথচ বাঙালির হেঁশেলে পিঠে থাকবে না! তা কী করে হয়? ভোজন রসিক বাঙালিদের কাছে পিঠের কদরই আলাদা। রসালো পিঠের প্রসংশা করতে ছাড়েননি স্বয়ং কবিগুরুও। শান্তি নিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিজের হাতে পিঠে বানিয়ে খাইয়েছিলেন এক মহিলা। পরে পিঠের স্বাদ কেমন হয়েছিল তা জানাতে কবি জানান,
‘লোহা কঠিন পাথর কঠিন
আর কঠিন ইস্টক
তার অধিক কঠিন কন্যে
তোমার হাতের পিষ্টক।’
কিন্তু এই পরম উপাদেয় মিষ্টান্নকে কেন পিঠে বলা হয় তা জানেন না অনেকেই। এই নাম করণের পেছনেও রয়েছে এক অজানা ইতিহাস। পিঠে পুলি নামে পরিচিত হলেও আসল কথাটি হল পিঠা। এই ‘পিঠা’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃতি ‘পিষ্টক’ শব্দ থেকে। আবার পিষ্টক এসেছে ‘পিষ্’ ক্রিয়ামূলে তৈরি হওয়া শব্দ পিষ্ট থেকে। পিষ্ট কথার অর্থ হল চূর্ণিত, মর্দিত বা দলিত। চাল গুঁড়ো করে বানানো হয় বলে এর নাম পিঠা।
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ থেকে জানা যায়, পিঠা হল চালে গুঁড়ো, ডাল বাটা , গুড় ও নারকেল ইত্যাদির মিশ্রণে তৈরি এক বিশেষ মিষ্টান্ন।
আনুমানিক পাঁচশ বছর আগে থেকেই বাঙালি খাদ্যসংস্কৃতিতে পিঠার জনপ্রিয়তার কথা উল্লেখ পাওয়া যায়৷ যেহেতু প্রাচীন বইপুস্তকে পিঠার কথা এসেছে, তাই ধরে নেওয়াই যায়, পিঠা খাবার প্রচলন বাঙালি সমাজেও অনেক প্রাচীন৷ বিশাল উপমহাদেশে বসবাস করা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর কাছেও অতি জনপ্রিয় খাবার এই মিষ্টান্ন।
পঞ্চাদশ শতাব্দি থেকে অষ্টদশ শতাব্দিতে বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থতে পিঠে-পুলির উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। পিঠা প্রসঙ্গে লেখা রয়েছে চৈতন্য মঙ্গলেও। চৈতন্য মঙ্গলে লেখা রয়েছে,
‘পিঠা পানা ভোজনে বৈষ্ণবে সন্তোসিলা,
মাল্য চন্দন দিয়া সভারে ভূশিলা’
এ ছাড়া মনসা মঙ্গলেও রয়েছে পিঠার উল্লেখ। এই কাব্যগন্থে লেখা হয়েছে
‘খিড় খিড়িয়া রন্ধ্রে দুগ্ধের পঞ্চপিঠা,
গুড় চিনি দিয়া রান্ধ্রে খাইচে লাগে মিঠা।’
বাংলা ভাষায় লেখা কৃত্তিবাসী রামায়ণ, অন্নদামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চৈতন্য চরিতামৃত ইত্যাদি কাব্য এবং মৈমনসিংহ গীতিকায় কাজল রেখা গল্পকথনের সূত্র ধরে আনুমানিক ৫০০ বছর আগেও বাঙালির খাদ্য সংস্কৃতিতে পিঠার জনপ্রিয়তার উল্লেখ পাওয়া যায়।
তাই শুধু আজ নয় বহু যুগ আগে থেকেই বাঙালির অন্দরে জায়গা করে নিয়েছে এই অসাধারণ মিষ্টান্ন এবং আগামি দিনেও বাঙালির হেঁশেলে যেন যুগে যুগ ধরে জায়গা করে নেয় এই পরম সুস্বাদু জিভে জল আনা মিষ্টান্ন।
(Feed Source: hindustantimes.com)