‘ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অস্বস্তি হলে তো টাকা পাব না’, হুব্বা নিয়ে কেন বললেন মোশারফ করিম

‘ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অস্বস্তি হলে তো টাকা পাব না’, হুব্বা নিয়ে কেন বললেন মোশারফ করিম

এখন তিনি ‘হুব্বা শ্যামল’, থুড়ি ‘হুব্বা’ বিমল। কলকাতায় সিনেপ্রেমীদের কাছে তাঁর এটাই এখন পরিচিতি। পরিচালক ব্রাত্য বসুর হাত ধরে দ্বিতীয়বার এপার বাংলার ছবিতে ধরা পড়লেন মোশারফ করিম। আর এবার তিনি ‘গ্য়াংস্টার’, ‘হুগলির দাউদ ইব্রাহিম’। এক্কেবারে রগরগে একটা চরিত্র। ‘হুব্বা’ বিমল ঠিক কেমন? এই দেশে এসে শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতাই বা কেমন? এমনই নানান টুকিটাকি বিষয় নিয়ে Hindustan Times Bangla-র সঙ্গে কথা বললেন বাংলাদেশের খ্যতনামা অভিনেতা মোশারফ করিম।

এমন একটা চরিত্র কেন বাছলেন?

মোশারফ করিম: এই চরিত্রটার অনেকগুলো দিক, অনেক স্তর রয়েছে। সেগুলি বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল, আর এই চ্যালেঞ্জটা নিতেও ভীষণ ইচ্ছা করছিল, তাই নিয়ে ফেলি। তারপর ডাবিংয়ের সময় যখন ছবিটা দেখলাম, বেশ ভালো লাগল। পুরো বিষয়টা মন্দ হয়নি। (হাসি)

এমন একটা চরিত্রের জন্য বিশেষ ঝাঁ চকচকে গোছানো লোকেশনে তো শ্যুটিং হয়নি, সেই অভিজ্ঞতা কেমন?

মোশারফ করিম: হ্য়াঁ, সেটা ঠিকই। বিভিন্ন লোকেশনে শ্যুটিং হয়েছে। প্রায় ২০-২৫ দিন শ্যুট করেছি। তবে আলাদা করে এই ধরনের লোকশনে শ্যুটিং করতে গিয়ে যে কোনও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, তেমন কিছুই ঘটেনি। খুবই সিরিয়াসলি আসলে কাজটা করা হয়েছে। প্রত্যেকটা দৃশ্য আলাদা আলাদা করে বিভিন্ন লোকশনে শ্যুট হয়েছে। তবে অনেকসময় কাজ করতে গিয়ে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে যায়, সেটা ঠিকই, তবে এই কাজটা করতে গিয়ে এমন কিছুর মুখোমুখি হইনি।

ছবিতে বেশকিছ ঘনিষ্ঠ দৃশ্য রয়েছে, এধরনে দৃশ্যে কাজ করতে কোনও অস্বস্তি কাজ করেছিল?

মোশারফ করিম: নাহ, আসলে এমন কোনও অস্বস্তি কাজ করেনি, কারণ, আমরা অভিনেতা। (মজা করে) অস্বস্তি হলে তো আর টাকা পাব না! (হাসি)

‘হুব্বা’র দাবি, জীবনে কঠিন পরিস্থিতির কারণেই সে আজ ‘গ্যাংস্টার’। অপরাধী তৈরি হওয়ার পিছনে কোনও কঠিন পরিস্থিতি থাকে! একথায় আপনি বিশ্বাস করেন?

মোশারফ করিম: অধিকাংশ মানুষের জীবনেই কখনও না কখনও কঠিন পরিস্থিতি আসে। কারোর বেশি কারোর কম। তবে তাতে সব মানুষই বা অনেকেই যে নষ্ট হয়ে যায়, সেটা কিন্তু নয়। আসল যে নষ্ট হওয়ায় সে হবে। ‘হুব্বা’রা আসলেই খারাপ, অপরাধী।

‘হুব্বা’ মোশারফ করিম

ব্রাত্য বসুর সঙ্গে প্রথম আলাপ কীভাবে?

মোশারফ করিম: ব্রাত্যদা আমার একটা ছবি দেখেছিলেন ‘কমলা রকেট’ নামে। ওনার আমার অভিনয় ভালো লাগে। তারপর উনি ‘ডিকশনারি’ ছবির জন্য যোগাযোগ করেছিলেন। তখনই আলাপ।

‘হুব্বা’একসময় নিজের স্বার্থে ভোটেও দাঁড়াতে চায়, ব্যক্তিগত জীবনে আপনি রাজনীতিতে আগ্রহী?

মোশারফ করিম: নাহ, এবিষয়ে আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ ভীষণই কম। এক্কেবারেই নেই বলা চলে।

কলকাতায় প্রথম কবে এসেছেন?

মোশারফ করিম: প্রথমবার কলকাতায় এসেছিলাম ১৯৯১-তে থিয়েটার করতে এসেছিলাম। একাডেমিতে নাটক করেছিলাম ‘বিচ্ছু’। তবে সেটা বহু বছর আগে। এখন কলকাতা অনেক বদলে গিয়েছে। এখন এশহরে বহু লোকজন। তবে ট্রাফিকের শৃঙ্খলা বেড়েছে অনেক। তখন খুব জ্যামে পড়তে হত।

প্রথমবার এদেশে এসে কী অনুভূতি হয়েছিল?

মোশারফ করিম: প্রথম যখন এদেশে এলাম, তখন তো বনগাঁ দিয়ে আসি। সেটাই ছিল আমার প্রথম বিদেশভ্রমণ। বিদেশ মানেই আমরা ভাবি অন্যরকম, সবকিছু আলাদা। তবে ঢুকে দেখি এতো সবই এক। সবাই একই ভাষায় কথা বলছে। দুঃখ পেয়েছিলাম, হতাশ হয়েছিলাম এটা ভেবে, যাঃ তাহলে আমার বিদেশ দেখা হল না।

ওপার আর এপার, দুই বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে পার্থক্য কী মনে হয়?

মোশারফ করিম: পার্থক্য তো আছেই, থাকবেও। সেটা যদি দেখি ওপার বাংলাতেও এক পরিচালকের কাজের সঙ্গে অন্য পরিচালকের কাজের ধরনের পার্থক্য রয়েছে। আসলে পরিচালক ভেদে পার্থক্য হয়ে যায়। এখানেও নিশ্চয় সেটা থাকবে। যদিও আমি এখানে শুধুমাত্র ব্রাত্যদার ছবিতেই কাজ করেছি। অন্যদের কাজ করলে পার্থক্য বুঝব। এক একজন পরিচালকের মেধা, মনন, দর্শনের মধ্যে দিয়ে কাজের ধরন বদলে যায়। আর এই পার্থক্যটা থাকলে তবেই নতুন কিছু পাব প্রত্যেকবার।

কলকাতার মন ছুঁয়ে যায় কোন বিষয়টাতে?

মোশারফ করিম: কলকাতার ফুটপাত নিয়ে আমার হাঁটতে খুব ভালো লাগে। এখনকার বিভিন্ন জায়গা, রেস্তোরাঁয় যাই বিভিন্ন রকমের খাবার খেতে যাই। সবথেকে ভালোলাগে, এই যে আপনার সঙ্গে নিজের ভাষাতেই কেমন স্বচ্চন্দে কথা বলছি। এই বাংলাকে বিদেশ মনে হয়না। মনে হয় আমরা একসঙ্গেই আছি এখনও।

কলকাতার খাবার ও বাংলাদেশের খাবার রান্নায় তো বেশ পার্থক্য..

মোশারফ করিম: আসলে কিছু পার্থক্য জোর করে তৈরি করা। বাংলাদেশেও বরিশালের খাবারের সঙ্গে নোয়াখালি, চিটাগংয়ের খাবারের পার্থক্য আছে। সিলেটে একধরনের মাংস রান্না হয়, যেটা বাংলাদেশে আর কোথাও হয় না। যেমন কলকাতার রান্নার সঙ্গে মেদিনীপুর, দিনাজপুরের রান্নারও পার্থক্য রয়েছে। তাই দুই বাংলার এই পার্থক্য মানুষের তৈরি করা। দুই বাংলা যদি আজ এক থাকত, তাহলে তো আজ সব একই দেশের আলাদা আলাদা অঞ্চল হত।

বাংলাদেশের বাংলা উচ্চারণের সঙ্গে কলকাতার মানুষের বাংলা উচ্চারণের পার্থক্য রয়েছে। ছবিতে আপনাকে দেখে একবারও মনে হল না যে আপনি ওপার বাংলার। এটা কীভাবে?

মোশারফ করিম: চেষ্টা করেছি, তবে দু-একটা জায়গা আমার অবশ্য মনে হয়েছে ঠিক হয়নি (হাসি)। কীভাবে রপ্ত করলাম আসলে জানি না। আমি ওখানকারও বিভিন্ন ভাষা আমি বলতে পারি। যেমন আমি বরিশালের, আমি নোয়াখালির বাংলা বলতে পারি, ময়মনসিংহ, সিলেটের ভাষাতেও কাজ করেছি, এখানকার ভাষাতেও করলাম। আমি পারি, কীভাবে পারি জানি না। হয়ে যায়। আলাদা করে সেভাবে প্রস্তুতি নিই নি, শুনেছি সবার কথা….

(Feed Source: hindustantimes.com)