বাংলা ক্রিকেট দলকে উদ্বুদ্ধ করতে ১৪ বছর পর ইডেনে অভীক

বাংলা ক্রিকেট দলকে উদ্বুদ্ধ করতে ১৪ বছর পর ইডেনে অভীক

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: ‘লক্ষ্মীদার পর থেকে আমরা আর ভাল মানের কোনও পেসার-অলরাউন্ডার পাইনি। ওর দুর্ঘটনা না ঘটলে বাংলা ক্রিকেট দল অনেক নিশ্চিন্ত থাকত,’ বৃহস্পতিবার প্র্য়াক্টিসের শেষে ড্রেসিংরুমের সামনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন বাংলার অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary)।

হেড কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল (Laxmiratan Shukla) বলছিলেন, ‘দুর্ঘটনার পর ও তো বাড়ি থেকেই বেরত না। আমি ওকে মাঠে ফিরিয়েছি। বাংলার প্র্যাক্টিসে আসতে বলেছিলাম। ওকে দেখলেই একটা ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি হয়।’

যাঁকে নিয়ে কথা বলছিলেন বাংলার অধিনায়ক ও কোচ, তিনি ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) প্রবেশ করলেন ১৪ বছর পর! তফাত বলতে, ১৪ বছর আগে এসেছিলেন ক্রিকেটার হিসাবে। বৃহস্পতিবার এলেন প্রাক্তনী হিসাবে। ১৪ বছর আগে মাঠে ঢুকেছিলেন পায়ে হেঁটে। এদিন ঢুকলেন হুইলচেয়ারে চেপে!

তিনি, অভীক চৌধুরী। একটা সময় যাঁকে বাংলার সেরা পেসার-অলরাউন্ডার বলা হতো। প্রাক্তন ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ, সকলে নিশ্চিত ছিলেন যে, ভারতীয় দলে অভীকের সুযোগ পাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।

তবে সব কিছু ওলট পালট হয়ে যায় ২০০৯ সালের অক্টোবরে। ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন অভীক। কোনওমতে প্রাণরক্ষা হলেও, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারান। এক সময় যিনি অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় মাঠে বলের পিছনে ধাওয়া করতেন, ফিল্ডার হিসাবেও ছিলেন দলের স্তম্ভ, তাঁর এখন সবচেয়ে বড় অবলম্বন হুইলচেয়ার। তাতে চেপেই যাতায়াত করতে হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে বাংলার প্র্যাক্টিসে এসেছিলেন অভীক। বেরনোর সময় এবিপি আনন্দকে বললেন, ‘১৪ বছর পর ইডেনে এলাম। লক্ষ্মীদা, মনোজরা ডাকল। কী যে ভাল লাগছে বলে বোঝাতে পারব না।’

বাংলার প্র্যাক্টিসের শেষে ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলেন অভীক। মাঠে লক্ষ্মী-মনোজদের টিম বন্ডিং সেশনেও ছিলেন। ক্রিকেটারদের কী বললেন? অভীক বলছেন, ‘এই স্তরে যারা খেলে, তাদের আলাদা করে কিছু বলার দরকার হয় না। আর ক্রিকেটীয় দিক দেখার জন্য লক্ষীদা, সৌরাশিস, ম্যাকোদা (শিবশঙ্কর পাল), মনোজরা আছেই।’

বাংলা দল থেকে ভালবেসে টুপি উপহার দিয়েছে অভীককে। যা নিয়ে অভীক বলছেন, ‘ভীষণ গর্ব হচ্ছে এই বেঙ্গল ক্যাপ পেয়ে। দারুণ একটা অনুভূতি তৈরি হল।’

শুক্রবার থেকে ইডেনে বাংলার প্রতিপক্ষ ছত্তীসগড়। চলতি রঞ্জি মরশুমে প্রথমবারের জন্য ইডেনে নামছে বাংলা। তার আগে শ্রেয়াংশ ঘোষ, সৌরভ পাল, মহম্মদ কাইফদের উদ্বুদ্ধ করে গেলেন অভীক। মনোজ বলছিলেন, ‘বাংলা ক্রিকেটে ওর কী কৃতিত্ব, কী গুরুত্ব, সেটা ছেলেদের বলা হয়েছে। সকলেই ওর কথা শুনে উৎসাহ পেয়েছে।’

গাড়ি দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম ঋষভ পন্থ এখনও মাঠে ফেরার লড়াই চালাচ্ছেন। অভীকের পক্ষে অবশ্য জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফেরা সম্ভব হয়নি। বাংলার হয়ে ৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ও ১৩টি ওয়ান ডে (লিস্ট এ) খেলা ক্রিকেটারের এখন দিন কাটে হুইলচেয়ারে। সম্পর্ক ভেঙেছে। কাছের মানুষেরা দূরে সরে গিয়েছেন। তবে প্রাপ্তিও রয়েছে। অভীক পেয়েছেন স্ত্রী অলকনন্দাকে। আর ফিরে পেয়েছেন বাংলা দলের সতীর্থদের ভালবাসা, উষ্ণতা।

ইডেন ছেড়ে বেরনোর সময় অভীকের প্রাপ্তির ভাঁড়ার যেন পূর্ণ…

(Feed Source: abplive.com)