ত্রাতা অনুষ্টুপের ৫ হাজারের মাইলফলক ছোঁয়ার দিনও বাংলার মন্থর ব্যাটিং নিয়ে উঠল প্রশ্ন

ত্রাতা অনুষ্টুপের ৫ হাজারের মাইলফলক ছোঁয়ার দিনও বাংলার মন্থর ব্যাটিং নিয়ে উঠল প্রশ্ন

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বাংলার প্রাক্তন এক ক্রিকেটার, যিনি আবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) ঘনিষ্ঠ বলে ময়দানে পরিচিত, দিন কয়েক আগেই বলছিলেন, ‘ও তো বাংলা ক্রিকেটের লোকনাথ বাবা। রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে যখনই দল বিপদে পড়ছে, ও দাঁড়িয়ে পড়ছে।’

যাঁকে নিয়ে কথাগুলো বলা, সেই অনুষ্টুপ মজুমদার (Anustup Mazumdar) শুক্রবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫ হাজার রান পূর্ণ করলেন। ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) বাংলা বনাম ছত্তীসগড় ম্যাচের প্রথম দিনের শেষে ৫৫ রানে অপরাজিত রইলেন ময়দানের রুকু। প্রথম দিনের শেষে বাংলার স্কোর ২০৬/৪। খেলা হয়েছে মাত্র ৭৩ ওভার। আলো কমে আসায় নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা আগে খেলা থামিয়ে দেন আম্পায়াররা। অনুষ্টুপের সঙ্গে অপরাজিত রয়েছেন অভিষেক পোড়েল। ৪৭ রান করে ক্রিজে রয়েছেন তিনি। তবে ৩৯ রানের মাথায় তাঁর ক্যাচ না পড়লে বাংলা আরও চাপে থাকত। যে শটের পর তাঁকে মাঠেই বার্তা পাঠাতে হল কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লকে। দিনের খেলা শেষ হওয়ার পরেও অভিষেককে বোঝালেন কোচ।

দিনের শেষে বাংলার মন্থর ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সারাদিনে ওভার প্রতি ৩ রান করেও তুলতে পারেনি বাংলা। আধুনিক ক্রিকেটে যা অচল। বর্তমান টেস্ট ক্রিকেটের দর্শনই হল, দ্রুত রান তোলো। যাতে বোলারদের হাতে বিপক্ষকে দুবার অল আউট করার মতো পর্যাপ্ত সময় থাকে। যে রীতির প্রচলন করেছিল স্টিভ ওয়র অস্ট্রেলিয়া। আর সেই দর্শনকেই অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন বীরেন্দ্র সহবাগ। ঝড়ের গতিতে রান তুলতেন নজফগড়ের নবাব।

সেখানে শুক্রবার বাংলার নবাগত ওপেনার শ্রেয়াংশ ঘোষ ১১১ বলে ২২ রান করেন। টস হেরে বাংলা প্রথম ব্যাটিং করে। মেঘলা আবহাওয়ায় ছত্তীসগড়ের পেসারদের মাথায় চড়ার সুযোগ করে দেন বাংলার ব্যাটাররাই। ৩২.৫ ওভারে শ্রেয়াংশ যখন আউট হলেন, বাংলার স্কোর ৭১/২। অপর নবাগত ওপেনার সৌরভ পাল ১২ করে ফেরেন। সুদীপ ঘরামি ৪৯ রানে আউট হন। অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি জাজমেন্ট দিয়ে বোল্ড হন মাত্র ১৯ রানে।

বাংলা শিবির থেকে যদিও মানতে চাওয়া হল না যে, মন্থর ব্যাটিং হয়েছে। শ্রেয়াংশ বললেন, ‘শুরুতে ওরা বাইরে বাইরে বল করছিল।’ মনোজের গলাতেও একই সুর। বললেন, ‘শুরুতে পরিবেশ-পরিস্থিতি ওদের পেসারদের সুবিধা করে দিয়েছে। তাছাড়া ওরা বাইরে বাইরে বল করছিল।’ প্রশ্ন উঠছে, বাইরে বল করার এই কৌশল তো ভীষণ পরিচিত। প্রতিপক্ষ শিবির নেবেই। সেটা ভেঙে বেরিয়ে আসার অস্ত্র বাংলা শিবির প্রয়োগ করল কোথায়!

বরং আত্মবিশ্বাসী শোনাল ছত্তীসগড় অধিনায়ক আমনদীপ খাড়ের গলা। বলে গেলেন, ‘আমাদের দিনটা ভালই গিয়েছে। বাংলার ইনিংসকে বেশি বাড়তে দিইনি। কাল আর একশো রানের মধ্যে ওদের অল আউট করতে হবে।’

রঞ্জি ট্রফির প্রথম দুই ম্য়াচে মাত্র ৪ পয়েন্ট পাওয়া বাংলার কাছে ঘরের মাঠে এই ম্যাচে সরাসরি জয় আর অন্তত ৬ পয়েন্ট মহার্ঘ। কিন্তু সেটা করতে গেলে স্কোরবোর্ডে যে রানের পাহাড় তোলা উচিত, সেটা উঠবে তো? অনুষ্টুপ বলছেন, ‘শনিবার যতটা বেশি সময় সম্ভব ব্যাট করে যেতে হবে। তারপর দেখা যাক।’

মেঘলা আবহাওয়া আর স্যুইং সত্ত্বেও প্রথম দিনের ইডেন পিচকে কঠিন মনে হয়নি। খেলা যত গড়াবে, পিচ ব্যাটিং সহায়ক হয়ে পড়বে। যা দেখে সিএবি-র কেউ কেউ বলাবলি শুরু করেছেন, ছত্তীসগড় না প্রথম ইনিংসের লিড নিয়ে বসে।

আর বাংলা শিবির চাপ কাটাতে তাকিয়ে রয়েছে ঊনচল্লিশের এক যোদ্ধার দিকে। রণে-বনে-জলে-জঙ্গলে বাংলার ত্রাতা – অনুষ্টুপ মজুমদার।

(Feed Source: abplive.com)