গোলের মুখই খুলতে পারলেন না সুনীলরা, আফগানদের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করল ভারত

গোলের মুখই খুলতে পারলেন না সুনীলরা, আফগানদের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করল ভারত

১৫৮ নম্বরে থাকা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আটকেই গেল ১১৭ নম্বরে থাকা ভারত। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় মধ্যরাতে সৌদি আরবের আভার ডিম্যাক স্টেডিয়ামে গোলের মুখ খুলতে পারলেন না স্টিফেন কনস্ট্যান্টাইনের ছেলেরা। যার খেসারত ম্যাচ ড্র করেই সন্তুষ্ট থাকতে হল টিম ইন্ডিয়াকে। আর এই ড্রয়ের ফলে এশীয় বাছাই পর্বের ‘এ’ গ্রুপে তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট হল ভারতের। এএফসি এশিয়ান কাপ থেকে গোলের খরা চলছে ভারতের। ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে তুলনায় কমজোরী আফগানদের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট তুলে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু সেটা হাতছাড়া করল ভারত।

এদিনের ম্যাচটি জিততে পারলে ছয় পয়েন্ট হয়ে যেত সুনীল ছেত্রীদের। কিছুটা সুবিধেজনক জায়গায় থাকতে পারত ভারত। কিন্তু ড্র করায় বিশ্বকাপের যোগ্যতাঅর্জন পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে যাওয়া সামান্য কঠিন হল মেন ইন ব্লু-র কাছে। তবে আফগানিস্তান, কুয়েত এবং কাতারের বিরুদ্ধে এখনও ম্যাচ বাকি ভারতের। তাই সম্ভাবনা এখনও রয়েছে। ভারত অবশ্য পয়েন্ট টেবলের দু’নম্বরে উঠে এসেছে। আর তিন ম্যাচে নয় পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে কাতার। এ দিন অন্য ম্যাচে কাতার ৩-০ হারায় কুয়েতকে।

আগামী মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) গুয়াহাটিতে এই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেই হোম ম্যাচ খেলবে ভারত। সেই ম্যাচ জিতে দ্বিতীয় স্থানে টিকে থাকাটাই ইগর স্টিম্যাচের দলের পক্ষে বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। ফিরতি লেগে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জিততেই হবে ভারতকে।

এদিন শুরু থেকেই গতিময় ফুটবল খেলে দুই পক্ষই। প্রথম দশ মিনিটের মধ্যে দুই দলই একাধিক আক্রমণ করে। ভারত যেখানে সুনীল ছেত্রী ও বিক্রম প্রতাপ সিংকে সামনে রেখে ৪-৪-২-এ খেলা শুরু করে, আফগানিস্তানও একই ছকে দল সাজিয়েছিল। চোটের জন্য এদিন ছিলেন না সাহাল আব্দুল সামাদ, যিনি দুই দলের শেষ দ্বৈরথে শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোল করেছিলেন। এদিন ভারতের জার্সিতে অভিষেক হয় বিক্রম প্রতাপের। প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যে দু’বার কর্নার পেয়ে গিয়েছিল ভারত। কিন্তু দাপটের সঙ্গে শুরু করলে কী হবে, গোলের মুখই খোলাটাই সুনীল ছেত্রীদের কাছে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।

একেবারে প্রথম দিকে ভারতের হাতে কিছুটা হলেও ম্যাচের রাশ থাকলেও, প্রথম কোয়ার্টারের শেষ দিক থেকে মাঝমাঠের দখল নেওয়ার চেষ্টা করে আফগানিস্তান। প্রেসিং ফুটবল খেলে ভারতকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করে তারা। তবে খেলা আটকে যায় মাঝমাঠেই। আসলে দুই দলের মধ্যে অদ্ভূত ভাবে রক্ষণ সামলে রাখার মানসিকতা কাজ করছিল। গোল খাওয়া চলবে না, এমনই মানসিকতা ছিল ভারত এবং আফগানিস্তানের। আর সেই কাজটা করতে গিয়েই ম্যাড়ম্যাড়ে হয়েছে খেলা। প্রথমার্ধের শেষ ১৫ মিনিট আবার ম্যাচে ফিরেছিল ভারত। দু’টি সিটার মিস করেন মনবীর সিং। নয়তো বিরতির আগেই এগিয়ে যেতে পারত ভারত। অভিষেক ম্যাচে ছটফট করলেও, খুব বেশি নজর কাড়তে পারেননি বিক্রম।

দ্বিতীয়ার্ধেও দু’দলই কমবেশি সুযোগ পায়। ম্যাচের ৫৮ মিনিটে বাঁ উইং ধরে ওঠা আকাশ মিশ্রর ক্রসে ঠিকমতো পা ছোঁয়াতে পারলে অবধারিত গোল পেতেন বিক্রম। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। ৬০ মিনিটের মাথায় জোড়া পরিবর্তন করে ভারত। বিক্রমের জায়গায় নামেন মিডফিল্ডার ব্র্যেন্ডন ফার্নান্ডেজ এবং আকাশের জায়গায় আসেন শুভাশিস বসু। কিন্তু এতেও বদলায়নি ভারতের ভাগ্য। ৬২ মিনিটের মাথায় গোলের সুযোগ পায় আফগানরা। কিন্তু বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ আকবরী। দ্বিতীয়ার্ধে অনবদ্য আফগান রক্ষণ। বক্সে বেশ কয়েকটা ক্রস ভেসে এলেও বিপদমুক্ত করে আফগানিস্তানের রক্ষণ।

৭৯ মিনিটের মাথায় দলকে জেতানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন শুভাশিস। মাপা কর্নারে ছ’গজের বক্সের মাথা থেকে হেড করে তিনি গোলের চেষ্টা করলেও, তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৮৫ মিনিটের মাথায় ডানদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে কাট ব্যাক করেন কোলাসো, যা ক্লিয়ার করে দেন প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডার। পাঁচ মিনিটের ইনজুরি টাইমের মধ্যেও কোলাসো ডানদিক দিয়ে উঠে বক্সের মধ্যে মহেশের উদ্দেশ্যে ক্রস বাড়ান। কিন্তু এতটাই সময় নিয়ে নেন ইস্টবেঙ্গল তারকা যে, গোলে শট নেওয়ার আগেই তাঁকে ঘিরে ধরেন প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা। এর পরে আর কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কোনও দলই।

এই ম্যাচ জেতা ছাড়া কোনও রাস্তা ছিল না ভারতের সামনে। তার পরেও সুনীলরা কেন রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজিতে খেললেন, সেটাই অবাক করার মতো ঘটনা। হাতে গোনা মাত্র কয়েক বার বল পান সুনীল ছেত্রী। বাকি সময়টা মাঠে ঘুরেফিরেই কাটান। সুনীলের গোলের ধার কমে যাওয়ায়, ভারতে এখন গোল করার লোকের অভাব। কারণ আরও একটি সুনীল এখনও তৈরি হননি। স্বভাবতই গোল না করতে পারার রোগটাই এখন স্টিম্যাচের দলের কাছে বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

(Feed Source: hindustantimes.com)