মুক্তি পাচ্ছে রহিম সাহেবের বায়োপিক, মৃত্যুর আগে বলেছিলেন এশিয়ান গেমসে সোনা চাই

মুক্তি পাচ্ছে রহিম সাহেবের বায়োপিক, মৃত্যুর আগে বলেছিলেন এশিয়ান গেমসে সোনা চাই

চলতি সপ্তাহেই মুক্তি পাচ্ছে অজয় দেবগনের ছবি ‘ময়দান’। ভারতীয় ফুটবলের প্রাণপুরুষ সৈয়দ আবদুল রহিম ওরফে রহিম সাহেবের চরিত্রের ওপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছে ছবিটি। একদা ভারতীয় ফুটবলকে কোচিং করিয়ে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হায়দরাবাদ থেকে উঠে আসা এই কোচ। মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই প্রয়াত হন তিনি।

যদি ভারতীয় ফুটবল অকালে তাঁকে না হারাতো, তাহলে হয়ত এতদিন ধরে ভারতের বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার স্বপ্ন অধরা থাকত না। ১৯৫০ সাল থেকে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ফুটবল দলের। কাজ করেছেন ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত। আর এই ১৩ বছরের মেয়াদকালেই দেশকে এনে দিয়েছিলেন দুটি এশিয়ান গেমসে সেরার ট্রফি।

সাম্প্রতিককালে এএফসি এশিয়া কাপে গিয়ে ভারত ভুরি ভুরি গোল হজম করে, এক পয়েন্টও না নিয়ে ফিরে এসেছে। এরকমই ট্রফিতে তার জমানায় কলার উচিয়ে ঘুরে বেড়াতেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনি গোস্বামি, বলরামের মতো ফুটবলাররা। এমনই একজন ফুটবল কোচের বায়োপিক তৈরি করেছেন পরিচালক অমিত শর্মা। আর মুল চরিত্রেই রয়েছেন অজয় দেবগন। ভারতীয় ফুটবলের এমন দিকপাল চরিত্রের বায়োপিককে সাধুবাদ জানাচ্ছে ফুটবলমহল।

১৯৫১ সালে দিল্লিতে তার কোচিংয়েই ইরানকে হারিয়ে এশিয়া সেরা হয় ভারত। এরপর ১৯৫৬ অলিম্পিক্সেও চতুর্থ স্থান দখল করে রহিম সাহেবের দল। ভারতীয় ফুটবলে তিনিই শুরু করেন ৪-৪-২ ফর্মেশন। তাঁর ফর্মেশন মনে ধরে ব্রাজিলেরও। শুনতে অবাক লাগলেও অনেকের মুখেই বলতে শোনা যায়, রহিম সাহেবের ফুটবল জ্ঞান এবং দর্শন দেখে ব্রাজিলও ১৯৫৮ এবং ১৯৬২ সালে বিশ্বকাপে ৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলা শুরু করে।

১৯৬২ সালে যখন ভারত এশিয়ান গেমসের ফাইনাল উঠল তখন দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত তিনি। হাতে সময় কম। তাই ছেলেদের থেকে চেয়ে নিয়েছিলেন শেষ ট্রফিটা। বলেছিলেন এটাই তার শেষ ইচ্ছা। এভাবেই জাকার্তায়, দঃকোরিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আগে দলকে তাতিয়েছিলেন রহিম সাহেব। ফলও এসেছিল। ২-১ গোলে শক্তিশালি কোরিয়ানদের হারিয়ে এশিয়া সেরা হয়েছিল বলরাম, অরুন ঘোষ, পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভারতীয় দল।

প্রযোজক বনি কাপুর এগিয়ে এসেছেন এই ছবি বানাতে। অতীতে ক্রিকেটের বহু তারকাকে নিয়েই বায়োপিক হয়েছে। কিন্তু ফুটবল নিয়ে বায়োপিকের সংখ্যা তুলনায় কমই। তাই রহিম সাহেবের ওপর বায়োপিক হওয়ায় খুশি ফুটবলমহল। এক সময় ময়দানের বেকেনবাওয়ার নামে পরিচিত গৌতম সরকার HT বাংলাকে বললেন, ‘আগে এত বৈজ্ঞানিক কোচিং ছিল না। বিদেশি কোচ নিয়ে আসার চল ছিল না। এত লাইসেন্সের দরকার ছিল না। ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম দিয়েই রহিম সাহেব দেশকে গৌরবান্বিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন আদতে এক আবিষ্কারক। যিনি ভারতীয় ফুটবলের সাফল্যের পথ আবিষ্কার করে দিয়েছিলেন তাঁর কোচিং শৈলীর মধ্য দিয়ে। এখনকার মতো তখন কোচিংয়ের বিষয়টি সহজ ছিল না। এরকম ব্যক্তিত্ব বারে বারে আসেন না। ফুটবল যতদিন ভারতে থাকবে, ততদিন তিনি স্মরণীয় থাকবেন’।

আরেক প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার সুমিত মুখোপাধ্যায় HT বাংলাকে বলছেন, ‘তাঁর থেকে ফুটবলের প্রতি সাধনা, ভালোবাসা শেখার আছে। ময়দানকে কোনও ছবি বা বায়োপিক হিসেবে দেখলে হবে না, এটি ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটা ইতিহাস হয়ে রইল। এখনকার অ্যাকাডেমিতে, স্কুলে শিশুদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য এরকম একটা ছবির খুব দরকার ছিল। এটা দেখে আগামী প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হবে, ফুটবলের প্রতি ঝোঁক বাড়বে। তাঁর আমলে ভারত কোথায় ছিল, তার কতটা অবদান ছিল, সব জানতে পারবে’।

(Feed Source: hindustantimes.com)