ম্যাচের শেষে আবেগে, উচ্ছ্বাসে ভেসে গেলেন পিআর শ্রীজেশ। ম্যাচ শেষ হতেই শ্রীজেশকে নিয়ে সেলিব্রেশন শুরু হয়ে যায় টিম ইন্ডিয়ার। কখনও সতীর্থদের সঙ্গে লাফাঝাঁপি করলেন, কখনও গোলপোস্টের উপর চড়ে বসলেন, আবার দলের অধিনায়ক হরমনপ্রীত সিংয়ের চওড়া কাঁধে চড়ে গোটা হকি টার্ফ ঘুরলেন। ভিকট্রি ল্যাপ দিলেন। আবার চোখের কোণে জলও চিকচিক করে উঠল। তাঁকে বো-ডাউন হয়ে কুর্নিশ জানিয়ে বিশেষ সম্মান দিল কোচিং স্টাফ সহ পুরো ভারতীয় হকি দল।
আসলে ভারতীয় হকিতে যে একটি অধ্যায় শেষ হয়ে গেল। ভারতের তারকা প্লেয়ার পিআর শ্রীজেশ বৃহস্পতিবার অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পদক দিয়ে তার ১৮ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার শেষ করলেন। এবং জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচেও অনবদ্য সব সেভ করে ভারতকে ব্রোঞ্জ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেন ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান ওয়াল অফ ইন্ডিয়ান হকি’। এই ডাকনামেই তো পরিচিত ভারতীয় হকি দলের তারকা কিপার শ্রীজেশ। আসলে শেষ ম্যাচে নিজেকে রাঙিয়ে জাত চিনিয়ে গেলেন পারাত্তু রবিচন্দ্রন শ্রীজেশ।
ভারতীয় হকি টিম ২০২০ টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতে ৪২ বছরের ট্রফির খরা শেষ করেছিল। আর এবার প্যারিস অলিম্পিক্সে তারা ফের ব্রোঞ্জ জিতে ৫২ বছর আগের ইতিহাস স্পর্শ করল। ভারতীয় পুরুষ হকি দল শেষ বার ১৯৬৮ এবং ১৯৭২- পরপর দুই অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিল। ফের ৫২ বছর পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ২০২০-এর পর ভারত ২০২৪ অলিম্পিক্সেও পরপর দু’বার ব্রোঞ্জ জিতল। সেই সঙ্গে শ্রীজেশের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচকেও বিশেষ করে তুলল ভারত।
ম্যাচের পর আবেগপ্রবণ শ্রীজেশ বলেছেন, ‘আমি মনে করি, এভাবে ব্রোঞ্জ জিতে শেষ করাটা বিশেষ। দারুণ একটা বিষয়। এই টুর্নামেন্টকে এত সুন্দর করার জন্য আমার দল, হকি স্টাফ এবং আইওএ-কে (IOA) ধন্যবাদ।’
তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘জীবনে কখনও না কখনও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। আমিও নিয়েছি। এটাই অবসর নেওয়ার সঠিক সময়। এই ব্রোঞ্জ পদক জয়ের থেকে খুশির কিছু হতে পারে না। প্যারিস থেকে আমাদের খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে না। তার জন্য আমার টিমকে ধন্যবাদ জানাই।’
আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন অধিনায়ক হরমনপ্রীতও। তিনি বলেন, ‘আমাদের টিমে এমন কিছু প্লেয়ার অনেক দিন ধরেই রয়েছে। তেমনই প্লেয়ার শ্রীজেশ। দীর্ঘ দিন আমাদের সঙ্গে রয়েছেন তিনি। তাঁর এটা আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ। একটা আবেগপ্রবণ মুহূর্ত। এই টুর্নামেন্ট শ্রীজেশকেই আমরা উৎসর্গ করব।’
শ্রীজেশের আর এক সতীর্থ মনপ্রীত সিং বলেন, ‘এই ব্রোঞ্জ পদক পিআর শ্রীজেশকে উৎসর্গ করছি। আমরা ১৩ বছর একসঙ্গে খেলেছি। এই জয় ও ব্রোঞ্জ পদক তাই আমরা উৎসর্গ। আমরা এই নিয়ে দ্বিতীয় বার ব্রোঞ্জ পদক পেলাম। আমরা সেমিফাইনালে না হারলে, সোনার পদকও পেতে পারতাম। ভারত থেকে যে সমর্থন পেয়েছি, তার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।’
এদিকে কেরলের এর্নাকুলাম থেকে শ্রীজেশের স্ত্রী অনীশা বলেছেন, ‘আমি এখন যে গর্ব এবং আনন্দ অনুভব করছি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। অবসরের ম্যাচে ভারতের জন্য ব্রোঞ্জ পদক জয়, সত্যিই হকির প্রতি ওর আবেগ এবং উৎসর্গের একটি বড় পুরস্কার। আমি নির্বাক। আমরা সবাই ওকে নিয়ে গর্বিত… এটি আমাদের জন্য, আমাদের পরিবারের জন্য, একটি স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মুহূর্ত।’
(Feed Source: hindustantimes.com)