Samantak Sinha: ‘গণধোলাইয়ের পোস্টারবয়’, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে কার বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন স্যমন্তক?

Samantak Sinha: ‘গণধোলাইয়ের পোস্টারবয়’, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে কার বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন স্যমন্তক?

নিজস্ব প্রতিবেদন: কেকে ও রূপঙ্কর বিতর্কে কার্যত দুভাগে বিভক্ত সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সঙ্গীত জগত। কেকে-র প্রতি রূপঙ্করের মন্তব্যে চটেছিলেন প্রায় সকলেই। প্রশ্ন উঠেছিল একজন শিল্পী হয়ে আরেকজন শিল্পীকে অপমান করা মোটেও উচিত হয়নি। কেকে-র মৃত্যুর পর তাঁর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন রূপঙ্কর। এক শিল্পীর অন্য শিল্পীকে অপমান করার প্রসঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন গায় স্যমন্তক সিনহা।

স্যমন্তক লেখেন,’শিল্পীদের একে অপরকে অপমান করাটা নতুন গজিয়ে ওঠেনি। ২০১১ সালে তৎকালীন একটি সংবাদ-মাধ্যমে আমাকে ও আরও কিছু গায়ক ও গায়িকাদের ডাকা হয়েছিল। সেই সময়ে “গানের ওপারে” ধারাবাহিকটি সদ্য শেষ হয়েছে, যার সুবাদে আমার ডাক পড়েছিল। অনুষ্ঠানে এক বিখ্যাত জাতীয়-পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়ক (যার বাংলা আধুনিক গান শুনে আমাদের অনেকেরই ২০০০ সালের শুরুটা কেটেছে বিভিন্ন এফ.এম চ্যানেলের মাধ্যমে) আমাকে বিচ্ছিরিভাবে অপমান করা শুরু করেন এবং নানা রকম ভেংচি কেটে, আমার গান গাওয়ার সময় (“বাঁধ ভেঙে দাও”) বিকট অঙ্গভঙ্গী করে চেয়ার ছেড়ে উঠে নাচতে আরম্ভ করেন। এরপর আমাকে ভেঙ্গিয়ে, মানে “গানের ওপারের” গোরার চরিত্রটিকে ভেঙ্গিয়ে, গান গাইতে আরম্ভ করেন। সঞ্চালিকা মুখে তীর্যক হাসি রেখে ওই গায়ককে উপর্যুপরি ইন্ধন জোগাতে থাকেন। আমাকে ওই গায়ক আরও বলেন – “ও স্বরলিপি দেখে গাওয়ার যোগ্যতা রাখেনা, তাই ঐভাবে গায়”। আমি যে একটা চরিত্রের জন্যে গাইছিলাম, নিজের ইচ্ছেমতো রবীন্দ্রনাথের গানকে ডিকন্সট্রাক্ট করতে গাইনি, সেটা বেমালুম, আরো হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে এই গায়কও আমাকে নিচু করে অপমান করার তালে মনে রাখেননি।’

‘আমি তখন নেহাতই ছেলেমানুষ, কলেজ পাশ করে নিজের ব্যান্ড তৈরী করছি, নিজের লেখা অরিজিনাল গান গাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। এই বিখ্যাত গায়ক আমার গান গাওয়ার ইচ্ছের কোমরে সপাটে, পাবলিকলি লাথির পর লাথি মেরে চললেন। কিসের এতো জিঘাংসা বোঝার আগেই অনুষ্ঠানশেষে মুখে দিগ্বিজয়ীর হাসি নিয়ে বিরাট কেতা মেরে বেরিয়ে গেলেন চ্যানেলটির অফিস থেকে। অন্য অনেক নবাগত শিল্পীরা হয়তো এই মব-লিনচিং-এর কারণে আর গান গাইতেন না পরের দিন থেকে। এই অনুষ্ঠানটি অনেকেই সেই সময়ে দেখেছিলেন ও সামাজিক মাধ্যমে ছোটোখাটো প্রতিবাদও জানিয়েছিলেন। তাঁদের আমার ভালোবাসা। দু’সপ্তাহ হয়েছে একই ধরণের বিতর্কের শেষ দেখা যাচ্ছেনা। গায়ক হয়ে আরেক গায়ককে অপমান করা, ও কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অপমানের লক্ষ্য যিনি তাঁর অনুষ্ঠানে অসুস্থ হয়ে পড়ে অকস্মাৎ মৃত্যু, আগুনে ঘৃতাহুতির মতন কাজ করেছে – আর স্বভাবতঃই নানা প্রশ্নের মুখে ফেলেছে শ্রোতাদের।’

‘অনেকেই হতবাক হয়ে যাচ্ছেন যে একজন শিল্পী আরেকজন শিল্পীকে এইভাবে নিচু করেন কীভাবে?এইরকম জঘন্যভাবে বুলি করেন?এও কী সম্ভব? একজন শিল্পীর সৌজন্যবোধ নেই আরেক শিল্পীর প্রতি?দুঃখের সঙ্গে জানাই, না নেই। সংগীত জগতের বাইরের মানুষেরা পরিস্থিতিটা এই ঘটনার জেরে টের পেলেন। একে ওপরের গুনগান গাওয়া আর ভাইচারা আওড়ানোগুলো বেশিরভাগ সময়েই নির্লজ্জ দেখনদারি যখন তারা নিজেদের গোষ্ঠীর শিল্পী না হন। নিজের দলের হলে তো সব ঠিক আছে – নিজেরাই নিজেদের তানসেন বলে পিঠ-চাপড়াচাপড়ি করে, সংগীত-জগতের সমস্ত কাজ নিজেরাই বাগিয়ে নিয়ে, এবং যারা এই গোষ্ঠীর পেটোয়া – তেল মেরে তাদের পশ্চাৎদেশ তুলতুলে করে দিয়েছে – তারা বাদে, বাকিদের লাথি-ঝ্যাঁটা বা বাদের খাতায়। গণ-ধোলাইয়ের পোস্টার-বয় এইসব লোকজন একদিনে তৈরী হয়না। তাদের হয়ে ওঠার জন্যে আশেপাশের অতি এনার্জেটিক এনাবেলসরাও থাকেন। তবে সাধে কী কথায় বলে, কর্মফল পেতেই হবে। দেরি করে পোস্ট করছি কারণ আমি গণধোলাই-এর পক্ষপাতী নই।’

(Source: zeenews.com)