বেঙ্গালুরু: রাতের ঘুমের মধ্যে বিছানা ভিজিয়ে ফেলার অভ্যাস অনেক শিশুরই থাকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত। স্বাভাবিক হলেও তা নিয়ে সামাজিক লজ্জার মুখে পড়তে হয় শিশুটি ও তার মা-কে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে ‘নকচার্নাল এনুরেসিস’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। রাতে মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণেই এমনটা হতে পারে। চিকিৎসকদের দাবি, এটা স্বাভাবিক। নির্দিষ্ট বয়সের পর মানুষের মধ্যে এই নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তৈরি হয়। যাদের হয় না তাদেরই সমস্যা হতে পারে। কিন্তু কেন এমন হয়, মুক্তির উপায়ই বা কী, জানাচ্ছেন বেঙ্গালুরুর কাবেরী হাসপাতালের নিওনেটালজিস্ট বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. শ্রীনাথ মণিকান্তি।
ডা. মণিকান্তি জানান, কিছু শারীরিক বা মানসিক সমস্যার কারণে ছোটরা এমন করতে পারে। যেমন—
• ছোট মূত্রাশয়- প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা কম
• স্লিপ অ্যাপনিয়া (ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসে অস্বাভাবিক বিরতি)
• উদ্বেগ বা ভয়
• মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই)
• কোষ্ঠকাঠিন্য
সাধারণত ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যেই শিশুর মূত্রাশয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ তৈরি হয়। তবে এক্ষেত্রে জিনের ভূমিকা থাকে। বাবা-মা, ভাইবোন বা নিকটাত্মীয়ের এমন সমস্যা থেকে থাকলে শিশুর মধ্যেও তা বর্তায়। ADHD বা অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার থাকলে শিশুদের মধ্যে বিছানা ভেজানোর প্রবণতা থাকে।
প্রতিকার—
জীবনধারায় কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন এই সমস্যা সমাধান করতে পারে।
যা করতে হবে:
• শিশুকে পর্যাপ্ত তরল পান করাতে হবে।
• নিয়মিত প্রস্রাব করাতে হবে। দিনে প্রায় ৫-৭ বার, ঘুমানোর ঠিক আগে পর্যন্ত।
• শিশুর ইতিবাচক কাজের প্রশংসা করতে হবে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে প্রস্রাব করে এলে তাকে একটি স্টিকার উপহার দেওয়া যেতে পারে।
• রাতে শৌচাগারে যেতে ভয় না পায়, তার ব্যবস্থা করা।
যা করা যাবে না:
• বিছানা ভেজালেও শাস্তি দেওয়া যাবে না।
• ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন কোক, চা এবং কফি দেওয়া যাবে না।
• ঘুমের মধ্যে তুলে প্রস্রাব করানোর প্রয়োজন নেই।
দেখতে হবে যেন রাতের খাবার খাওয়ার আগেই যেন শিশুটি পর্যাপ্ত পানীয় গ্রহণ করে ফেলে। তারপর ঘুমোনোর আগে প্রস্রাব করিয়ে নিতে হবে।
মানসিক প্রভাব—
মানসিক চাপের কারণে এই প্রবণতা তৈরি হতে পারে। স্কুলে কোনও সমস্যা হলে এমন হতে পারে। এছাড়াও কিছু ঘটনা শিশুদের প্রভাবিত করে। যেমন—
• ভাইবোনের জন্ম
• বাসস্থান বদল
• জীবন যাপনের বদল
সেক্ষেত্রে সন্তানের সঙ্গে কথা বলে তাদের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
শারীরিক সমস্যা—
যে সমস্ত শিশু গত ৬ মাসে একবারও বিছানা ভেজায়নি, তাদের মধ্যে হঠাৎ নতুন করে এই সমস্যা দেখা দিলে বুঝতে হবে শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়েছে। মূত্রনালীর সংক্রমণ ঘটে থাকতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই সমস্যার শীঘ্রই সমাধান হবে, বলে শিশুকে আশ্বস্ত করতে হবে।
বয়স অনুযায়ী তাকে দায়িত্ব নিতে শেখাতে হবে। যেমন, বিছানার কাছে একটা শুকনো তোয়ালে রাখা যেতে পারে, যাতে সে নিজেই সেটা পেতে নিতে পারে। ভিজে অবস্থায় ঘুম ভাঙলে যাতে নিজেই নিজের জামা-কাপড় বদলে ফেলতে পারে তার জন্য শুকনো অতিরিক্ত জামা হাতের কাছে রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে এই সমস্যা স্বাভাবিক। তবে পাঁচ বছরের বেশি বয়সের কোনও শিশু সপ্তাহে দু’বার এভাবে রাতে বিছানা ভেজালে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে।
(Feed Source: news18.com)