কলকাতা: সারা জীবন ধরে হৃদযন্ত্র বা হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখা আবশ্যক। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হার্টের স্বাস্থ্যের যত্নের বিষয়টা পরিবর্তিত হতে পারে। আসলে বয়সের এক-এক পর্যায়ে হার্টের স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা এক-এক রকম হয়ে থাকে। সেই শিশুকাল থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত নেওয়া সক্রিয় পদক্ষেপ হৃদরোগ প্রতিরোধ এবং সামগ্রিক সুস্থতার ক্ষেত্রে বড়সড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
শৈশব:
শিশুকাল থেকেই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি করা জরুরি। এর মধ্যে অন্যতম হল শারীরিক সক্রিয়তা, ব্যালেন্সড ডায়েট, স্বাস্থ্যকর ফল, শাক-সবজি এবং হোল গ্রেন খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা। সেই সঙ্গে মিষ্টি খাবার ও পানীয় সেবনের অভ্যাস সীমিত করা। হৃদযন্ত্রের সমস্যার প্রাথমিক উপসর্গগুলির উপর নজর রাখতে হবে অভিভাবকদের। এর মধ্যে অন্যতম হল – অস্বাভাবিক ক্লান্তি অথবা শারীরিক কসরতের সময় শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। এমনটা ঘটলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
বয়ঃসন্ধির কালে নানা রকম চ্যালেঞ্জ আসে। কারণ এই সময় অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া কিংবা ধূমপানের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। এই বদভ্যাসগুলির বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে হার্টের স্বাস্থ্যর উপর। সেটারই পাঠ দিতে হবে সন্তানকে। এমনকী, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ব্যালেন্সড ডায়েটের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরতে হবে।
Dr. Supratip Kundu, Cardiologist, AM Medical Centre
মধ্য-বয়স:
চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছরের মধ্যবর্তী সময়ে কোলেস্টেরল, রক্তচাপ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখার উপর মনোনিবেশ করতে হবে। হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে নিয়মিত চেক-আপ জরুরি। লো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট ডায়েটে মনোযোগ দিতে হবে। শারীরিক কসরত করতে হবে। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বার্ধক্য:
বয়স্ক অবস্থায় হার্টজনিত সমস্যার মধ্যে অন্যতম হল হাইপারটেনশন অথবা অ্যারিদমিয়া। নিয়মিত স্ক্রিনিং, ওষুধ, লাইফস্টাইল অ্যাডজাস্টমেন্ট জরুরি। এই সময় হালকা এক্সারসাইজ এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েটে মনোযোগ দিতে হবে। সামাজিক মেলামেশা করলে ও মন ভাল রাখলে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।
হার্টের চিকিৎসার অগ্রগতিতে ক্রমাগত পরিবর্তন হয়ে চলেছে। সমস্ত বয়সে হার্টের অবস্থা নির্ণয় করতে, প্রতিরোধ করতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন নতুন পদ্ধতি চালু হচ্ছে। বয়স অনুযায়ী সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করা সম্ভব। আর উন্নত মানের জীবনযাপন করা যেতে পারে। এ এম মেডিকেল সেন্টারের কার্ডিওলজিস্ট ডা. সুপ্রতীপ কুণ্ডু হার্টের রোগের কিছু প্রাথমিক উপসর্গ ব্যাখ্যা করেছেন। ডা. কুণ্ডুর বক্তব্য, নিওনেট পর্যায় (১ মাসেরও কম বয়স)-এ স্তনদুগ্ধ পান করার ক্ষেত্রে যদি অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, তাহলে সেটা হৃদরোগের গুরুতর উপসর্গ হতে পারে।
ইনফ্যান্ট স্টেজ (১২ মাস পর্যন্ত):
স্তন্যপানের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা ছাড়াও ত্বকের রঙ যদি নীলচে হয়ে যায়, তাহলে সেটাও কিন্তু বড়সড় উপসর্গ হতে পারে।
টডলার:
উপরোক্ত দুই উপসর্গ ছাড়াও বারবার কাশি এবং সর্দি আরও একটা অন্যতম লক্ষণ।
ছোট শিশু:
ক্লান্তিও এক গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হতে পারে। আবার টিন-এজে শ্বাসকষ্ট এবং বুক ধড়ফড়ও হার্টের রোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে।
এদিকে চল্লিশের নীচে যাঁদের বয়স, তাঁদের ক্ষেত্রে যদি বুকে ব্যথা, পরিশ্রম করলে বুক ধড়ফড় বা শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে তা হৃদরোগের অন্যতম উপসর্গ হতে পারে।
বয়স বৃদ্ধি পেলে বুক ব্যথা, জ্ঞান হারানো এবং পরিশ্রম করলে শ্বাসকষ্ট কিন্তু হার্টের রোগের লক্ষণ হতে পারে ৷ সারা জীবন ধরে হৃদরোগের স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য নিয়মিত যত্ন নেওয়া আবশ্যক। বয়সের প্রতিটি পর্যায়ে প্রয়োজন বুঝে চিকিৎসা করালে হার্টের রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। সেই সঙ্গে শরীর-স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে বয়স বাড়লে নিয়মিত চেক-আপ করাতে হবে। ডা. সুপ্রতীপ কুণ্ডু (Dr. Supratip Kundu, Cardiologist, AM Medical Centre) জোর দিয়েছেন যে, জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রাথমিক উপসর্গ শনাক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে সময়মতো চিকিৎসাও করাতে হবে।
(Feed Source: news18.com)