ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে তরতাজা ছেলেকে, সারোগেসিতে সন্তানের শুক্রাণু ব্যবহারে মা-বাবাকে অনুমতি

ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে তরতাজা ছেলেকে, সারোগেসিতে সন্তানের শুক্রাণু ব্যবহারে মা-বাবাকে অনুমতি

নয়াদিল্লি: মৃত সন্তানের শুক্রাণু নিয়ে আইনি লড়াই। শেষ পর্যন্ত জয়ী হলেন শোকার্ত মা-বাবাই। মৃত সন্তানের শুক্রাণু ব্যবহার করে তাঁদের বংশবৃদ্ধিতে অনুমতি দিল আদালত। আদালত জানিয়েছে, মৃত্যুর পর বংশবৃদ্ধিতে কোনও আইনি বাধা নেই। জীবনসঙ্গী না থাকলে সন্তানে  মৃত্যুর পর মা-বাবার হাতেই সব ওঠে। তাই মৃত সন্তানের শুক্রাণুও তাঁর মা-বাবারই প্রাপ্য। (Posthumous Reproduction)

দিল্লির হাইকোর্ট সম্প্রতি এই নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি প্রতিভা সিংহ এক্ষেত্রে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের উল্লেখ করেন। তিনি জানান, আইন অনুযায়ী, মৃত যুবকের মা-বাবাই তাঁর উত্তরাধিকার। তাই মৃত সন্তানের শুক্রাণুও তাঁদের হাতেই তুলে দেওয়া উচিত। ছেলে যদি সায় দিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে কোনও বাধা-বিঘ্নের প্রশ্ন ওঠে না। (Delhi High Court)

২০২০ সালের ২২ জুন ৩০ বছর বয়সি প্রীত ইন্দর সিংহের শরীরে ক্যান্সারের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। পাঁচ দিন পর কেমোথেরাপি শুরু হয় তাঁর, তার আগেই যদিও শ্রী গঙ্গারাম হাসপাতালে সংরক্ষণের জন্য শুক্রাণুর নমুনা দিয়েছিলেন তিনি। কেমোথেরাপিতে প্রজনন শক্তির উপর প্রভাব পড়ে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। সেই মতোই শুক্রাণু সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেন প্রীত।

২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর মারা যান প্রীত। সেই বছর ২১ ডিসেম্বর তাঁর মা হরবীর কৌর এবং বাবা গুরবিন্দর সিংহ ছেলের শুক্রাণু চেয়ে হাসপাতালের দ্বারস্থ হন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংরক্ষিত শুক্রাণু দিতে রাজি হয়নি। এর পরই ২০২১ সালে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই দম্পতি। অভিজ্ঞ আইনজীবী সুরুচি আগরওয়াল এবং গুরমীত সিংহ আদালতে তাঁদের হয়ে সওয়াল করেন।

আদালতে ওই দম্পতি জানান, ছেলের মৃত্যুর পর সংরক্ষিত শুক্রাণু ব্যবহার করে সারোগেসির মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করতে চান তাঁরা। এতে তাঁদের দুই মেয়েরও সায় রয়েছে। তাঁদের বয়স হলেও, দুই মেয়ে ভবিষ্যতে ওই সন্তানের পূর্ণ দায়িত্ব নিতে রাজি। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, ভারতে এই নিয়ে যে আইন রয়েছে, তাতে অবিবাহিত ব্যক্তির শুক্রাণুর নমুনা নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা নেই। একমাত্র বিবাহিত ব্যক্তির মৃত্যুর পর স্ত্রীর অধিকারের কথাই বলা রয়েছে।

সেই নিয়ে শুনানি করতে গিয়ে যদিও ওই দম্পতির পক্ষেই রায় দেয় আদালত। বলা হয়, শুক্রাণু বা ডিম্বাণুর নমুনা, সম্পদের মধ্যেই পড়ে। তাই মৃত প্রীতের সংরক্ষিত শুক্রাণু তাঁর মা-বাবার হাতে তুলে দিতে হবে। আদালত আরও জানায়, মৃত্যুর আগে প্রীত তাঁর শুক্রাণু সংরক্ষণে রাজি হন। নিজেই শুক্রাণুর নমুনা সংরক্ষণ করতে দেন হাসপাতালকে। অর্থাৎ প্রজননের লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ করেছিলেন তিনি। উনি হয়ত বাঁচতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রকৃতির ইচ্ছে বিরুদ্ধে যায়। তাঁর মৃত্যুর পর মা-বাবাই এখন উত্তরাধিকার। ফলে সংরক্ষিত ওই শুক্রাণুর উপরও তাঁদের অধিকার রয়েছে।

আদালত আরও জানায়, কোনও ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে যুগলের। মা-বাবার মৃত্যুতেও একা পড়ে যায় সন্তান। সেক্ষেত্রে ভারতের মতো দেশে দাদু-ঠাকুমা নাতি-নাতনিকে বড় করেন। সন্তানের উত্তরাধিকারকে আঁকড়ে ধরে থাকেন তাঁরা। ওই দম্পতিও সেই রাস্তা অবলম্বন করতে পারেন।
এক্ষেত্রে ইজরায়েলের উদাহরণও তুলে ধরে আদালত, যেখানে ১৯ বছরের এক তরুণ গাজায় মারা যান। ময়নাতদন্তের মাধ্যমে তাঁর শরীর থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে এবং তা ব্যবহার করে মৃত সৈনিকের মা-বাবা নাতনির মুখ দেখেন। জার্মানিতে ব্রেন-ডেড এক গর্ভবতী মহিলাকে শুধুমাত্র তাঁর সন্তানের জন্য বাঁচিয়ে রাখার কথাও তুলে ধরে আদালত।

(Feed Source: abplive.com)