মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়ার আগে ফের অন্তঃসত্ত্বা, মহিলাকে ছাঁটাই করে বিপাকে কর্পোরেট সংস্থা

মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়ার আগে ফের অন্তঃসত্ত্বা, মহিলাকে ছাঁটাই করে বিপাকে কর্পোরেট সংস্থা

লন্ডন: অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার দরুণ চাকরি হারানোর অভিযোগ তুলেছিলেন এক তরুণী। যে সংস্থায় চাকরি করতেন, তাদের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বার মা হওয়ার দরুণ তাঁকে চাকরি থেকে তাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। সেই মামলায় ওই তরুণীর পক্ষেই রায় দিল আদালত। শুধু তাই নয়, মহিলাকে চাকরি থেকে বিতাড়ন করে যে সংস্থা, তাদের কাছ থেকে মোটা টাকা ক্ষতিপূরণও পেলেন। (Viral News)

ব্রিটেনের নাগরিক নিকিতা টুইচেনের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে। First Grade Projects নামের একটি সংস্থায় অ্যাডমিন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন নিকিতা।  দ্বিতীয়বার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়াতেই তাঁকে চাকরি থেকে তাড়ানো হয় বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। সেই মামলায় First Grade Projects-এর বিরুদ্ধেই রায় দিল ব্রিটেনের এমপ্লয়মেন্ট ট্রাইব্যুনাল। ২৮০০০ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩০ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। (Pregnant Woman Fired by Company)

নিকিতা জানান, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে ওই সংস্থায় যোগ দেন তিনি। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর জেরেমি মরগ্যানের সঙ্গে সুসম্পর্কও গড়ে ওঠে তাঁর।  যে কোনও প্রয়োজনে জেরেমির থেকে সাহায্য পেতেন তিনি। কাজে যোগ দেওয়ার কিছু সময় পরই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন নিকিতা। ২০২২ সালের জুন মাস থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে চলে যান। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে পুনরায় কাজে যোগ দেওয়া নিয়ে জেরেমির সঙ্গে কথা হয় তাঁর।

ট্রাইব্যুনালে নিকিতা জানান, শুরুতে বেশ ভালই আলোচনা চলছিল। ফের তাঁর সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন জেরেমি। কবে থেকে কাজে যোগ দেবেন, মা হওয়ার পর কত ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন তিনি, সেই নিয়ে বিশদে কথা হয়। আলোচনা যখন শেষের দিকে, নিকিতা জানান, তিনি আবারও মা হতে চলেছেন। এতেই জেরেমি ধাক্কা খান বলে দাবি নিকিতার। তিনি জানিয়েছেন, ২৬ মার্চ মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হয়ে গেলেও, সংস্থার তরফে কাজে যোগ দেওয়া নিয়ে তাঁর সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। ৩ এপ্রিল পুনরায় কাজে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, সেই নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি সংস্থা।

জেরেমির তরফেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি বলে জানান নিকিতা। তাঁর দাবি, বার বার ফোন করলেও ধরেননি জেরেমি। মেসেজের উত্তরও দেননি। পরে একদিন ফোন করে জানান, সংস্থা অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। পাওনাদারদের টাকাও মেটানো যাচ্ছে না। আপাতত একটি সফ্টওয়্যার ইনস্টল করা হচ্ছে। তাই নিকিতাকে আর প্রয়োজন নেই তাঁদের। সংসার চালাতে ছুটকো কাজ নিতে বাধ্য হন নিকিতা। আট মাসের গর্ভাবস্থাতেও কাজ করে গিয়েছেন তিনি, যার জন্য ট্রাইব্যুনাল তাঁর প্রশংসাও করে।

নিকিতা জানান, অর্থনৈতিক সমস্যার কথা জানিয়ে তাঁকে ছাঁটাই করা হলেও, পরবর্তীতে সংস্থা কোটি কোটি টাকা খরচ করে নতুন কর্মী নিয়োগ করে। নতুন করে ব্র্যান্ডিং হয়। এমনকি বেশ কিছু দামি গাড়িও কেনে ওই সংস্থা। তাই অর্থনৈতিক সমস্যার দোহাই দিলেও, দ্বিতীয় বার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়াতেই তাঁকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয় বলে দাবি করেন নিকিতা। অর্থনৈতিক সমস্যার কথা বললে, কাগজে কলমে ওই সংস্থা সেই সংক্রান্ত প্রমাণ দিতে পারেনি বলে মন্তব্য করে ট্রাইব্যুনালও। এমনকি লিখিত ভাবে নিকিতাকেও চাকরি থেকে ছাড়ানোর কারণ জানানো হয়নি কেন, প্রশ্ন ওঠে। তাই নিকিতার প্রতি বৈষম্য হয়েছে, তাঁকে মানসিক ভাবে হেনস্থা করা হয়েছে বলে জানায় ট্রাইব্যুনাল। এর পরই নিকিতাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

(Feed Source: abplive.com)