জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সম্প্রতি ঢাকা বিমানবন্দর থেকে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের ঘটনায় উত্তাল বাংলাদেশ। একাধিক জায়গায় মিছিল থেকে পথ অবরোধ চলছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে। কৃষ্ণদাসের গ্রেফতারিতে সরব হয়েছে এপার বাংলার নেতা থেকে শুরু করে দিল্লিও। ভারতের উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়াকে ‘অনধিকার চর্চা’বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
বুধবার বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই ধরনের স্টেটমেন্ট দেওয়া ভারতের অনধিকার চর্চা। এখানে তারা ঘটনাকে আরো উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ভারতের উচিত তার নিজের দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিতে কাজ করা। আমরা ভারতকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি এবং আওয়ামী লীগের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা যেন ভারত সাবস্ক্রাইব না করে।’
মঙ্গলবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন বাতিলের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাক্তন ইস্কন নেতাকে আটকের পর বাংলাদেশের চরমপন্থী গ্রুপগুলো হিন্দু সম্প্রদায় ও অন্য সংখ্যালঘুদের ওপরও হামলা চালিয়েছে। হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুর এবং মন্দিরে হামলার মতো ঘটনাও ঘটছে বাংলাদেশে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় অপরাধীরা যেখানে ধরাছোঁয়ার বাইরে, সেখানে একজন ধর্মীয় নেতা এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে যখন কথা বলেছে, তার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভারতের এই বিবৃতির পরেই গতকাল রাতে পাল্টা বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ভারতেই এই বিবৃতিতে শুধু ঘটনাটিকে ভুলভাবেই তুলে ধরছে না, বরং প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে যে বন্ধুত্ব এবং বোঝাপড়ার সম্পর্ক রয়েছে, তাও বিঘ্নিত করছে।
বুধবার এবার বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘এটা রাজ্যের বিষয় নয়, দেশের বিষয়। দেশবাসী কেন্দ্র সরকারকে ম্যানডেট দিয়েছে, এবং এটা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। তবে, আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কেন্দ্র সরকার যে অবস্থান নেবে সেই অবস্থানকে দলগতভাবে সমর্থন করবে তৃণমূল। তবে যে ঘটনা ঘটেছে তা একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়, এবং অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।’
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে সোমবার গ্রেফতার করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। এরপর মঙ্গলবার তাকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। মঙ্গলবার চিন্ময় দাসের আদালতে পেশের আগে আদালত চত্বরে জড়ো হয়েছিল শয়ে শয়ে মানুষ। আদালত চত্বরে উঠেছিল জয় শ্রীরাম স্লোগানও। রায় শোনার পরই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় আদালত চত্বর। পুলিসের প্রিজন ভ্যান প্রায় তিন ঘণ্টা আটেক রাখে বিক্ষোভকারীরা। আদালত চত্বর থেকে চিন্ময়কে নিয়ে বের হতে গেল শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ। পুলিস টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটিয়ে ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তখনই বিক্ষুব্ধ জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে রঙ্গম কনভেনশন হলের সামনে জড়ো হয়। এর পরই ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে জনতা। তাড়া করে পুলিস। পাল্টা তাড়া করে জনতাও। এতে অনেকে গুরুতর আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় সরকারি আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের।
(Feed Source: zeenews.com)