দামাস্কাস: বিপদ আঁচ করা যাচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। আবশেষে আশঙ্কাই সত্য হল। সিরিয়ার দখল নিল সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। পালিয়ে বাঁচলেন দেশের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। অজ্ঞাত স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। সেই আবহে দেশের রাজধানী দামাস্কাসের দখল নিতে এগোচ্ছে সশস্ত্র বিরোধীরা। (Syria Crisis)
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সিরীয় বাহিনীর দুই শীর্ষ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে আসাদের পালানোর কথা জানিয়েছে। বলা হয়েছে, বিমানে চেপে অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে গিয়েছেন আসাদ। দামাস্কাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর খালি করে দিয়েছে সিরীয় সেনা এবং নিরাপত্তা বাহিনী। আসাদ সরকারের মন্ত্রীরাও সমস্ত পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ইসলামি সংগঠন গায়ত তাহরির আল-শাম দামাস্কাসের দিকে এগোচ্ছে। (Bashar al-Assad)
সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনক একটি যুগের অবসান বলে ধরা হচ্ছে। তবে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এখনও সাবধানী অবস্থান বজায় রেখেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। যদিও বিদ্রোহীদের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়, “অত্যাচারী বাশার আল-আসাদ পালিয়ে গিয়েছেন। দামাস্কাসকে আসাদমুক্ত ঘোষণা করছি আমরা।”
বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, উত্তর দামাস্কাসের সৈদনায়া সামরিক জেলে ঢুকে পড়েছে তারা। সেখান থেকে বন্দিদের মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, “সিরিয়ার অধিবাসীদের সঙ্গে বন্দিদের মুক্তি উদযাপন করছি আমরা। অন্যায়-অত্যাচারের অবসান ঘটল সিরিয়ায়, একটি যুগের অবসান ঘটল।” ব্রিটেনের সিরিয়ান অবজার্ভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে দামাস্কাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেনার দফতর, শিবির সব খালি পডডে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দামাস্কাসে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আসাদ সরকারের পতনে অধিবাসীদের একাংশ ঘরবাড়ি ফেলে রেখে পালাতে শুরু করেছেন।
সম্প্রতি নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয় সিরিয়ায়। গত সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিম থেকে ইসলামি সন্ত্রাসবাদীরা আচমকা হামলায় চালায় আসাদ-বাহিনীর উপর। সেই থেকে একের পর এক এলাকা দখল করে চলছিল তারা। আলেপ্পো তাদের দখলে চলে যায় কয়েক দিন আগেই। সেখান থেকে সেনা তুলে নিতে একপ্রকার বাধ্য হয় আসাদ সরকার। এর পর হামার দখল পেতে লড়াই শুরু হয়। আক্রমণ প্রতিহত করতে আসাদ-বাহিনীকে সাহায্য করে রাশিয়া। কিন্তু আসাদ বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়।
২০১১ সালে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই বিদ্রোহ পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধের আকার ধারণ করে, যাতে তাবড় শক্তিধর রাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ে। এখনও পর্যন্ত সিরিয়ায় ৫ লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ১.২ লক্ষের মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন, যার মধ্যে ৫০ লক্ষ বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন।
গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে আসাদ এবং তাঁর পরিবারের হাতেই সিরিয়ার রাশ ছিল। বাবা হাফেজ আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট হন আসাদ। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যান বলছে, আসাদ জমানায় নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে বিরোধীদের। সংখ্যাটা নেহাত কম নয়, প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার। বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকদের যেমন বন্দি করা হয়েছে, বন্দি করা হয়েছে বিরুদ্ধ মত পোষণকারীদেরও। জেলে অকথ্য অত্যাচার চালানো হয়েছে তাঁদের উপর। এমনকি জেলে বিরুদ্ধ মত পোষণকারীদের উপর বিষাক্ত গ্যাসও প্রয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
এতদিন রাশিয়ায় আসাদকে সমর্থন করছিল রাশিয়া এবং ইরান। কিন্তু দেশের উত্তর এবং পূর্বের কিছু অঞ্চল কুর্দিদের সশস্ত্র সংগঠনের হাতে, যাদের আমেরিকা সহযোগিতা জোগাচ্ছিল বলে দাবি কূটনীতিকদের। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল আবার ইসলামি সন্ত্রাসবাদী সংস্থা হায়ত তাহরির আল-শামের হাতে রয়েছে। সেখানেও উপস্থিতি রয়েছে তুরস্কের মদতপুষ্ট বিদ্রোহী সংগঠন Syrian National Army. তুরস্কের সেনা তাদের সহযোগিতা জোগায়। ২০১২ সালে আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে আত্মপ্রকাশ করেছিল হায়ত। সেই সময় আল-কায়দার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তারা। ২০১৬ সালে আল-কায়দার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে হায়ত নামে আত্মপ্রকাশ।
(Feed Source: abplive.com)