কলকাতা: একসময় তাঁকে রান মেশিন বলা হতো। বাইশ গজে ব্যাট হাতে এমনই ছিল তাঁর দাপট যে, অফস্টাম্পের বাইরের বলকে টেনে মিড উইকেট বা লং অন বাউন্ডারিতে ফেলে দিতেন। যে শটের নামকরণই হয়ে গিয়েছে হুইপ শট। সচিন তেন্ডুলকরের ব্যাকফুট পাঞ্চ, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কভার ড্রাইভ, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির হেলিকপ্টার শট বা বীরেন্দ্র সহবাগের আপার কাটের চেয়ে যে শটের খ্যাতি কম কিছু নয়।
তবে পরিচিত ছন্দের ধারেকাছে নেই বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাঁর শেষ সেঞ্চুরি আড়াই বছর আগে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে, ইডেন গার্ডেন্সে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। মাঝে কয়েকবার তাঁর ব্যাটে ছোটখাট ফুলকি দেখা গিয়েছে। কিন্তু তা কখনও দাবানলে পরিণত হয়ে বিপক্ষ বোলিংকে গ্রাস করে ফেলেনি। একসময় যে দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত ছিল বিশ্বক্রিকেট। তাঁকে তো এই প্রজন্মের সেরা ব্যাটার তকমাই দেওয়া হয়ে গিয়েছিল।
বিরাট কোহলি হাল ছাড়ার পাত্র নন। তিনি ফের নতুন করে নিজেকে প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। এবং ছন্দে ফেরার জন্য যেন বেছে নিচ্ছেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচকে। জেমস অ্যান্ডারসন-স্টুয়ার্ট ব্রডের মতো দুই কিংবদন্তি পেসারের বিরুদ্ধে রান করেই যেন বিশ্বক্রিকেটকে বার্তা দিতে চাইছেন কিংগ কোহলি। আর সেই লক্ষ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছেন নিবিড় সাধনায়।
কেমন চলছে তাঁর প্রস্তুতি? ভারতীয় দল আপাতত লেস্টারশায়ারে। বার্মিংহ্যামে প্রথম টেস্টের আগে লেস্টারশায়ারের বিরুদ্ধে ২৪ জুন থেকে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে ভারত। ইংল্যান্ডে ভারতীয় শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ব্যাটিং অনুশীলনে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছেন কোহলি। অ্যান্ডারসন-ব্রডের বিরুদ্ধে অগ্নিপরীক্ষা। বিশেষ করে অ্যান্ডারসনের বিষাক্ত স্যুইং বারবার বিপাকে ফেলেছে কোহলিকে। নেটে তাই শুধু পেসারদের বলেই প্রস্তুতি সারছেন তিনি। যাতে বলের নড়াচড়া সামলে ব্যাটিং আয়ত্ত করতে পারেন। সেই সঙ্গে একাকী ফিল্ডিং প্র্যাক্টিসও করছেন। কোহলির যে নিষ্ঠা দেখে মুগ্ধ ইংল্যান্ডে ভারতীয় দলের সঙ্গে যাওয়া ম্যানেজার তথা সিএবির যুগ্ম-সচিব দেবব্রত দাস। শোনা গেল, ঘনিষ্ঠমহলে কোহলির ক্রিকেট সাধনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন দেবব্রত।
ভারতের নেটে মহম্মদ শামিও নিজেকে নিংড়ে দিচ্ছেন। জাতীয় দলে এখন বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি শামি। সদ্য আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। কিন্তু টেস্টে নিজেকে মেলে ধরতে প্রস্তুতিতে খামতি রাখছেন না। সাদা বল থেকে ফের লাল বলের ক্রিকেটে ফিরছেন। সোমবার লেস্টারশায়ারের মাঠে ঘণ্টাখানেক টানা বোলিং করেছেন শামি।
তবে সবার নজর সেই কোহলির দিকেই। একটা সময় মিচেল জনসনের বিরুদ্ধে তিনি বেকায়দায় পড়েছিলেন। পরে অস্ট্রেলিয়ার ফাস্টবোলার সেই জনসনকে পিটিয়েই চার টেস্টে চার সেঞ্চুরি করেছিলেন কোহলি। এবার অ্যান্ডারসনের-ব্রডের বিরুদ্ধে অগ্নিপরীক্ষার জন্যও যেন ব্যাটে একইরকম বারুদ ঠেসে রাখছেন। যাতে মাঠে নেমে স্ট্রোকের আতসবাজি জ্বালাতে পারেন।