
মুম্বই: প্রত্যেক সন্তানের পরম আশ্রয় মা-বাবা। কিন্তু সেই মা-বাবা, বিশেষ করে মায়ের হাতে যদি নিপীড়িত হতে হয়, তাহলে ছিটকে যান সন্তান। মায়ের সঙ্গে এহেন জটিল সম্পর্কের কথা নিজের লেখা বই ‘Mother Mary Comes to Me’-তে সম্প্রতি তুলে ধরেছেন সাহিত্যিক অরুন্ধতী রায়। বলিউড এবং টেলিজগতের পরিচিত মুখ জয়া ভট্টাচার্যও মায়ের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক নিয়ে ফের মুখ খুলেন। মায়ের হাতে অত্যাচারের শিকার হয়ে তিনি নিজের ক্ষতি করতেও পিছপা হননি বলে জানিয়েছেন। (Jaya Bhattacharya)
বহু ছবি ও সিরিয়ালে অভিনয় করলেও, ‘কিউঁ কি সাস বি কভি বহু থি’ সিরিয়ালই ঘরে ঘরে পরিচিত করে তোলে জয়াকে। নিজের ব্যক্তিগত জীবন, বিশেষ করে বিভীষিকাময় শৈশব নিয়ে আগেও মুখ খুলেছেন তিনি। এবার আরও বিশদে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলেন। জয়া জানিয়েছেন, তাঁর মা-বাবার বিয়েটাই ছিল ‘টক্সিক’। নিজের মা শারীরিক নির্যাতন চালাতেন তাঁর উপর। এমনকি আর্থিক সমস্যার জেরেই তাঁকে অভিনয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হয় বলে দাবি অভিনেত্রীর। (Bollywood News)
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে জয়া জানিয়েছেন, মেয়ে হয়ে জন্মানো সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক মনে হয় তাঁর। তাঁর কথায়, “আমার মা-বাবা কখনও পরস্পরকে ভালবাসেননি। পরস্পরকে বিয়ে করতেও চাননি, কখনও মনের মিল হয়নি ওঁদের, আর সেই অশান্তির আঁচ সহ্য করতে হয় তাঁদের সন্তানকে। আমার মা খুশি ছিলেন না। ওঁর স্বপ্নপূর্ণ হয়নি, তাই আমাকে কখনও সম্পূর্ণ ভাবে কিছু দিতে পারেননি। আমাকে চাবুকপেটা করতেন, রুটি বেলনা, হাতা-খুন্তি, জুতো, আর কত কিছু দিয়েই না মেরেছেন। প্রচুর মার খেয়েছি আমি, যাতে জেদ চেপে যায় আমার মনে। এর ফলে আমি নিজেও নিজের অনেক ক্ষতি করেছি।”
জয়া জানিয়েছেন, বাবার প্রতি গভীর টান অনুভব করতেন তিনি। কিন্তু বয়স বাড়লেও মায়ের অসন্তোষ কাটেনি। শৈশবে মায়ের আচরণ এতটাই গভীর প্রভাব ফেলেছিল মনে যে, নিজেকে নিজের মতো করে গড়েছেন। কাউকে ‘জাজ’ করেন না তিনি। কাউকে হেয় করতে পারেন না। অন্যের সামনে নিজের সন্তানের পাশে দাঁড়াবেন না, ভাবতেও পারেন না এমনটা। কিন্তু তাঁর মা কখনও তাঁর পাশে ছিলেন না।
টেলি দুনিয়ায় জয়া শুধু পরিচিত নামই নয়, তাঁকে সকলেই সম্মান করেন, শ্রদ্ধা করেন।কিন্তু জয়ার দাবি, তিনি কখনও অভিনেত্রী হতেই চাননি। জয়ার বক্তব্য, “আমাকে অভিনয়ে ঠেলে দেওয়া হয়। আমি নাচ করতাম, গান শিখতাম। একবার একটি টেলিফিল্ম করার সুযোগ আসে। পরিচালক আমার বাবার সঙ্গে কথা বলেন। প্রথমে মহিলা হিসেবে নাচতে বলা হয় আমাকে, পরে আবার পুরুষ হিসেবে। তিন দিন পর শ্যুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পর দিনই ভোর ৫টায় ঘুম থেকে তুলে বাবা আমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। আমি করেত চাইনি, কিন্তু নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে। সেই থেকে শুরু।”
ইন্ডাস্ট্রিতেও তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানান জয়া। তিনি বলেন, “টেলিফিল্মের পর ওই পরিচালক এক বন্ধুকে নিয়ে হাজির হন। আমাকে বাইরে নিয়ে যেতে চান বলে জানান। আমার মা প্রথম দিকে গা না করলেও, ওই পরিচালক অনড় ছিলেন। শেষে ওঁরা (মা-বাবা) রাজি হয়ে যান। আমার বয়স ছিল ১৭-১৮। উনি (পরিচালক) আমাকে একটি রেস্তরাঁয় নিয়ে যান। পরে বাড়ি ফিরে আসি। এর পর ওই পরিচালক গায়েব হয়ে যান, কিন্তু ওঁর বন্ধু বাড়িতে আসতে শুরু করেন। গাড়ি চালানো শেখান আমাকে। পরে জানা যায়, উনি মাফিয়ার সঙ্গে যুক্ত। উনি আমাকে মুম্বই নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন।”
জয়া বলেন, “আমাকে যখন অভিনয়ে ঠেলে দেওয়া হয়। কোনও বন্ধু ছিল না আমার। কারও বাড়ি যাওয়ার অনুমতি ছিল না। সেভাবে কথাও বলতাম না আমি। ফলে অনেকে ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠি। আমার নামে খারাপ কথা বলতে শুরু করে অনেকে। আর আমার মা তাদের সমর্থন করতেন, যা সবচেয়ে কষ্ট দিত আমাকে। নিজের মেয়েকে সন্দেহ করতেন। অন্যের সামনে যদি নিজের সন্তান ছোট করি, ছোট বয়সে সে কোথায় যাবে? নবম শ্রেণিতে পড়ি যখন, বাবা অবসর নেন। আমার বিয়ের টাকা কোথা থেকে আসবে, সেই নিয়ে রোজ ঝামেলা করতেন মা। কন্যাসন্তান বলে নানা রকম কথা বলতেন। তাই বাবা যেদিন অবসর ননে, সেদিন এক সহপাঠীর সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই আমি। হরিদ্বার চলে গিয়েছিলাম আমরা। এত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে এক সপ্তাহ আশ্রম থেকে বেরোইনি।”
জয়া জানিয়েছেন, মায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের উন্নতি হয়নি কোনও দিনই। মা যখন হাসপাতালে ভর্তি, সেই সময় খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ বার দু’জনের মধ্যে যে কথা হয়, তাতেও মা তাঁকেই দোষারোপ করেন। হাসপাতালে ভর্তি করে জয়া তাঁর শরীরের আরও ক্ষতি করেছেন বলেও নাকি অভিযোগ করেন তাঁর মা। জয়া জানিয়েছেন, মনেপ্রাণে নিজের মা-কে ঘৃণা করতেন তিনি, তাও নিজের সব টাকা চিকিৎসায় উজাড় করে দেন। তাঁর হাতের খাবার পর্যন্ত মা খেতেন বলে দাবি জয়ার। তাঁর মা পুত্রসন্তান চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী।
জয়া জানিয়েছেন, শৈশবের অত্যাচার থেকে তাঁর মনে ক্ষোভ জমতে শুরু করেন। অসম্ভব রাগ পুষে রাখেত শুরু করেন মনে। নিজের ‘নারীত্ব’ও হারিয়ে ফেলেন, গালিগালাজ করতেন। পরিচালকরাও সেই জন্য আমার সঙ্গে কাজ করতে ভয় পেতেন বলে এক সতীর্থ আমাকে জানান। ২০০০ সালে ‘কিউঁ কি সাস ভি কভি বহু থি’ চরিত্রে ‘পায়েল’ নামক চরিত্রটি জয়ার জীবন বদলে দেয়। ছোট্ট চরিত্র হিসেবে শুরু হলেও, দীর্ঘ সাত বছর ওই সিরিয়ালে ছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানেও দর্শকরা কখনও তাঁকে সম্মান করেননি, বরং কটুকথা শুনতে হয়েছে বলে দাবি জয়ার। যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও কোনও পুরস্কার দেওয়া হয়নি তাঁকে, এমনকি টাকাও বাড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী। জয়ার দাবি, তিনি নিজে টাকা বাড়ানোর কথা বলার পর যাও বা বেড়েছিল, তা বাকিদের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম ছিল। জয়া জানিয়েছেন, ইরানির সঙ্গে একবার খেতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় অন্তসঃত্ত্বা ছিলেন স্মৃতি। এক দর্শ এসে তাঁকে ধাক্কা দেন, ‘গন্দি অওরত’ বলে গালি দেন, জয়া স্মৃতির সন্তানের ক্ষতি করতে পারেন বলে কটাক্ষ করেন। এর পরও ‘বনু ম্যাঁয় তেরি দুলহন’, ‘কসম সে’, ‘করম অপনা অপনা’র মতো সিরিয়ালে অভিনয় করেন জয়া। ‘দিল্লি ক্রাইম সিজন ৩’-তেও রয়েছেন। জয়া বিয়ে করেননি আজও।
(Feed Source: abplive.com)
