
১৯৪৭ সালে দেশভাগে পর এই প্রথম লাহৌর ইউনিভার্সিটিতে সংস্কৃত পড়ানো শুরু হল। প্রথমে তিন মাসের কোর্স হিসেবেই সংস্কৃত-শিক্ষা চালু করা হয়েছিল। শুধুমাত্র সপ্তাহান্তেই সংস্কৃত ভাষার ক্লাস নেওয়া হতো।সংস্কৃত ব্যাকরণ থেকে পৌরাণিক রীতি-নীতি সম্পর্কে পড়ানো হতো। এতে ছাত্রছাত্রী এবং অন্যরা এতটাই উৎসাহিত হয়ে পড়েছে যে, পুরোদস্তুর ‘ফোর ক্রেডিট কোর্স’ চালু করেছে লাহৌর ইউনিভার্সিটি। ‘ফোর ক্রেডিট কোর্স’ অর্থাৎ সপ্তাহে চার ঘণ্টার ক্লাস এবং আটঘণ্টার পড়াশোনা। (Lahore University)
ওই কোর্সের আওতায় পড়ুয়ারা ‘হ্যায় কথা সংগ্রাম কি’ গানের উর্দু সংস্করণও শিখতে পারবেন, যা টিভি সিরিয়াল ‘মহাভারতে’র থিম সং হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছিল। গুরমানি সেন্টারের ডিরেক্টর ডঃ আলি উসমান কাসমি জানিয়েছেন, পাকিস্তানের পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে সবচেয়ে সমৃদ্ধ অথচ সবচেয়ে অবহেলিত সংস্কৃত পাণ্ডুলিপির সংগ্রহ রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “১৯৩০ নাগাদ গবেষক জেসিআর উলনার তালপাতায় লেখা বেশ কিছু পাণ্ডুলিপি সংগ্রহে রেখেছিলেন। ১৯৪৭ সাল থেকে কোনও পাকিস্তানি শিক্ষাবিদ সেই সব বিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেননি। বিদেশি গবেষকরাই সেগুলি নেড়েচেড়ে দেখেন শুধু। এবার পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে।”
লাহৌর ইউনিভার্সিটি ‘মহাভারত’ এবং ‘গীতা’র কোর্সও চালু করতে চলেছে। ডঃ কাসমি বলেন, “আগামী ১০-১৫ বছরে পাকিস্তান থেকে গীতা ও মহাভারত বিষয়ক পণ্ডিত উঠে আসবেন।” কিন্তু এত বছর পর হঠাৎ সংস্কৃত শিক্ষা, ‘গীতা’, ‘মহাভারত’ পড়াতে কেন উদ্যোগী হল লাহৌর ইউনিভার্সিটি? ফোরম্যান ক্রিশ্চিয়ান কলেজের সোশিওলজি বিভাগের অধ্যাপক, ডঃ শাহিদ রাশিদের উদ্যোগেই এমনটা সম্ভব হয়েছে। ডঃ রাশিদ বলেন, “ধ্রুপদী ভাষাগুলির মধ্যে মানবজাতির জন্য প্রচুর জ্ঞান নিহিত রয়েছে। আমি আরবি এবং ফারসি ভাষা দিয়ে শুরু করেছিলান, পরে সংস্কৃতিও শিখি।”
ডঃ রাশিদ জানিয়েছেন, সংস্কৃত শিখতে অনলাইন প্ল্যাটফর্মকেই ভরসা করেন তিনি। এর পর কেমব্রিজের গবেষক অ্যান্টোনিয়া রুপেল এবং অস্ট্রেলিয়ার ভারত বিশারদ ম্যাকমাস টেলরের কাছে শিক্ষার সুযোগ হয় তাঁর। প্রায় একবছর ধরে সংস্কৃত ব্যাকরণ শেখেন ডঃ রাশিদ। এখনও সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। হঠাৎ সংস্কৃত শিক্ষায় এত আগ্রহী হয়ে পড়লেন কেন, তা নিয়ে ডঃ রাশিদ বলেন, “আমি বলি, কেনই বা শিখব না? গোটা অঞ্চলকে বেঁধে রাখে এই ভাষা। সংস্কৃত ব্যাকরণের জনক পাণিনি এখানকার গ্রামের বাসিন্দা। সিন্ধু সভ্যতার যুগে অধিকাংশ লেখালেখি এখানেই করেছেন তিনি। সংস্কৃত পর্বতের মতো, সাংস্কৃতিক সৌধ। আমাদের নিজেদের অধিকার বুঝতে হবে। কোনও বিশেষ ধর্মের সঙ্গে সংস্কৃত যুক্ত নয়।”
পরস্পরের ঐতিহ্যকে জানার, বোঝার চেষ্টা করলে, দক্ষিণ এশিয়ায় সংস্কৃতিক সংহতি গড়ে উঠবে বলেও মত ডঃ রাশিদের। তাঁর কথায়, “ভেবে দেখুন, ভারতের হিন্দু এবং শিখরা যদি আরও বেশি করে আরবি শেখেন এবং পাকিস্তানের মুসলিমরা যদি সংস্কৃত শেখেন, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নতুন যুগের সূচনা হতে পারে, ভাষা প্রতিবন্ধকতা না হয়ে সেতু হয়ে উঠতে পারে।” ডঃ রাশিদ জানিয়েছেন, ২০২৭ সালের বসন্ত আসতে আসতে বছরভরের কোর্স চালু করতে সফল হবেন বলে আশাবাদী তাঁরা। লাহৌর ইউনিভার্সিটিতে ইতিমধ্যেই সিন্ধি, পাশতু, পঞ্জাবি, বালুচি, আরবি এবং ফারসি শেখানো হয়। কিন্তু আঞ্চলিক সাহিত্য হোক বা কবিতা, শিল্প হোক বা দর্শন, বৈদিক যুগের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে সবকিছুর। তাই সংস্কৃত শিক্ষা জরুরি হয়ে উঠেছে বলে মত ডঃ রাশিদের।
(Feed Source: abplive.com)
