‘আবারও নিজের লেখা গল্প নিয়ে প্রযোজক-পরিচালকের কাছে যাব, কিন্তু হার আমি মানব না’

‘আবারও নিজের লেখা গল্প নিয়ে প্রযোজক-পরিচালকের কাছে যাব, কিন্তু হার আমি মানব না’

কলকাতা: জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি ফাইভে মুক্তির অপেক্ষায় ‘রংবাজ: ডর কি রাজনীতি’ (Rangbaaz: Darr Ki Rajneeti)। জনপ্রিয় সিরিজ ‘রংবাজ’-এর তৃতীয় সিজন এটি। মুখ্য ভূমিকায় দেখা যাবে ‘মুক্কাবাজ’ খ্যাত অভিনেতা বিনীত কুমার সিংহকে (Vineet Kumar Singh)। স্বভাবতই সিরিজের প্রচারে ব্যস্ত বিনীত। তবে তারই ফাঁকে ফোনে ধরা গেল অভিনেতাকে। অভিনয় জীবন থেকে নিজের স্ট্রাগল, সবকিছু নিয়েই খোলামেলা কথা বললেন এবিপি লাইভের (ABP Live) সঙ্গে। ফোন ধরেই প্রথম প্রশ্ন, ‘ক্যায়সে হ্যায় আপ?’ (কেমন আছেন আপনি?) এরপর গল্পের ছলেই চলল প্রশ্নোত্তর পর্ব।

প্রশ্ন: প্রথমেই ‘রংবাজ ৩’-এর জন্য অনেক শুভেচ্ছা।
বিনীত কুমার সিংহ: অসংখ্য ধন্যবাদ।

প্রশ্ন: মুম্বই শহরে পা রাখা থেকে এখনও পর্যন্ত নিজের মধ্যে কী কী বদল দেখেছেন?
বিনীত: এই শহরে আমি এসেছি ১৯৯৯-২০০০ সালে। প্রথম ছবি মুক্তি পায় ২০০২ সালে, ‘পিতা’। সেই থেকে আজ ২০২২ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের বদলের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। যেমন ফোন আপগ্রেড হতে থাকে, ঠিক তেমনই একজন অভিনেতাকেও আপডেট হতে হয়। সেরকমই আমিও নিজেকে আপগ্রেড করেছি, এখনও করছি, ভবিষ্যতেও করব। কারণ এই প্রক্রিয়া থামার নয়।

নিজের মধ্যে বদল বলতে, এখন অনেক জিনিস বুঝতে পারি। ধৈর্য্য আগের থেকে এখন অনেক বেড়েছে। নিজেকে ক্রমাগত সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তাতে আমি এতকিছু দেখে ফেলেছি যে এখন কোনও বিষয়ে বিশেষ প্রভাবিত হই না। এখন নিজের মধ্য়ে একটা স্থিরতা এসেছে যা আমার অন্যতম শক্তি বলতে পারেন। আমার এই বৈশিষ্ট্য ‘রংবাজ ৩’-এর হারুন শাহ আলী বেগের (Haroon Shah Ali Baig) চরিত্রেও দেখতে পাবেন। অভিনেতা হিসেবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোনও চরিত্রের বিশ্লেষণ করার ভাবনাটাও বদলে যায়। সেটাও বুঝতে পারি।

প্রশ্ন: কোনও চরিত্রের জন্য নিজেকে কীভাবে তৈরি করেন?
বিনীত: কোনও চরিত্রে ‘হ্যাঁ’ বলার আগে আমি দেখি যে পরিচালক কে, প্রযোজক কে, স্ক্রিপ্ট কেমন এবং আমার চরিত্রটা কত ভাল লেখা হয়েছে। আর সেই সঙ্গে দেখি যে পারিশ্রমিক কত পাচ্ছি। যদি চরিত্র ভাল হয়, পরিচালক ভাল হন, টিম ভাল হয় তাহলে পারিশ্রমিকে অত মন দিই না।

আমি মনে করি, চরিত্র নিজেই অভিনেতাকে বলে দেয় যে কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। এমনিতে তো স্ক্রিপ্টে সংলাপ লেখাই থাকে, সেটে গিয়ে গড়গড়িয়ে বলেই দেওয়া যায়। কিন্তু আমি চেষ্টা করি যে চরিত্র যদি চ্যালেঞ্জিং হয় তাহলে নিজেকে তৈরি করতে। ধরুন আমাকে এখন যদি কোনও বাংলা বা বাঙালির চরিত্রে অভিনয় করতে হয়, তাহলে আমাকে আপনার মতো হাল্কা হলেও সেই উচ্চারণভঙ্গি আনতে হবে নিজের কথার মধ্যে। সেটা তো আর সরাসরি সেটে পৌঁছে বলে দেওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আমাকে আগে থেকে শিখতে হবে, প্রস্তুতি নিতে হবে।

প্রশ্ন: ‘রংবাজ ৩’-এর চরিত্র কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
বিনীত: ‘রংবাজ ৩’-এর হারুন শাহ আলী বেগের চরিত্রটি বেশ চ্যালেঞ্জিং। অনস্ক্রিন এই চরিত্রটির বেশ কিছু পর্যায় আছে। ১৮-২০ বছরের যুবক হিসেবে শুরু হয়ে মোটামুটি ৫০ বছর পর্যন্ত দেখানো হয়েছে এই চরিত্রটিকে। এটা একটা গোটা সফর। এই চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বুঝতে পারি যে এটা ফ্ল্যাট একটা অভিনয় করে গেলে হবে না। কারণ, বছর ২০-র ছেলের এনার্জি, বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ, বোধশক্তি অন্যরকম হয়। কিন্তু ৩০, ৪০-এর পর, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ বদলে যায়, ভাবনা-চিন্তায় সেই ম্যাচিওরিটির ছাপ পড়ে। তাছাড়া শারীরিক গঠনেও পরিবর্তন আসে প্রবল পরিমাণে। ফলে বেশি বয়সের চরিত্রের জন্য ১০ কেজি ওজন বাড়িয়েছি। কম বয়সের জন্য কম ওজন রেখেছি। শারীরিক গঠন তো গেল, এরপর প্রথমেই যেটা আমি বোঝার চেষ্টা করি যে এই চরিত্রটা কোনও পরিস্থিতিতে কীভাবে ভাববে। তার মস্তিষ্কে কী চলছে, কোনও পরিস্থিতিতে সে কেন একটা নির্দিষ্টভাবে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে! সেটা একবার বুঝে গেলে অভিনয় করতে বিশেষ সমস্যা হয় না।

প্রশ্ন: এবার আপনার বলিউড সফরের কথায় আসা যাক। আপনি কি মনে করেন যে যতটা আপনার পাওয়ার কথা তত পরিমাণে কাজ পাচ্ছেন?
বিনীত: এটার উত্তর খানিক অন্যভাবে দিতে চাই। ১৯৯৯-২০০০ সালে আমি মুম্বই আসি। আমার প্রথম বড় ব্রেক ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’ (Gangs of Wasseypur) মুক্তি পায় ২০১২ সালে। সেটা পেতে আমার ১২ বছর লেগে গেছে। তবে ১২ বছর পরে যখন এই ছবি মুক্তি পেল তখন তা আমাকে একটা পরিচয় দেয়, কিন্তু নতুন ভাল কাজ দেয়নি। ওই ছবিতে একাধিক শিল্পী ছিলেন, সকলেই মোটামুটি তারপরে ভাল কাজ করতে থাকেন। আমার চরিত্র ভূয়সী প্রশংসা পেলেও তা কাজে রূপান্তরিত হচ্ছিল না। তারপর ‘বম্বে টকিজ’, ‘আগলি’ এল। ‘ওয়াসেপুর’-এর থেকে একেবারে অন্যরকমের কাজ ছিল। প্রশংসা পাই, সেরা অভিনেতার মনোনয়ন পাই, কিন্তু যেমন কাজ আমি খুঁজছিলাম তেমন পাচ্ছিলাম না।

এরপর ২০১৩ সালে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিই। কেউ আমাকে মুখ্য চরিত্র না দিলে আমি তো কিছু বলতে পারি না। তাই কাউকে দোষ দেওয়ার বদলে আমি নিজের জন্য নিজেই গল্প লেখার সিদ্ধান্ত নিই। তখন আমি ও আমার বোন (মুক্তি সিংহ) ‘মুক্কাবাজ’ (Mukkabaaz) লেখা শুরু করি। এরপর সেই গল্প নিয়ে আমরা বিভিন্ন পরিচালক-প্রযোজকের কাছে যেতে শুরু করি। আমার শুধু একটাই শর্ত ছিল, যে এই গল্প থেকে যদি কেউ ছবি বানাতে চান তাহলে তাতে প্রধান চরিত্র আমি করব, আর সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমি কোনওরকম আপস করব না। ‘মুক্কাবাজ’ লেখা আর তৈরি হওয়ার মধ্যে আমার জীবনের পাঁচটা বছর কেটে যায়। বিশেষ কাজও তখন করতাম না। যতদিনে ছবি তৈরি হয় ততদিনে আমার সব টাকা শেষ। প্রায় সবকিছু বিক্রি করে ফেলেছি।

এই ছবি অবশেষে অনুরাগ স্যর (অনুরাগ কাশ্যপ) তৈরি করেন। তিনি শর্ত দিয়েছিলেন যে আমি বক্সার না তৈরি হলে ছবি বানাবেন না। তখন আমি পঞ্জাব চলে যাই। সেখানে বক্সারদের সঙ্গেই থাকতাম। তাঁদের থেকে প্রশিক্ষণ নিই। প্রায় এক বছর কেটে যায়। এই ছবি মুক্তির পর আমার কাছে অপশন প্রচুর এসেছে। কিন্তু, এও সত্যি কথা, ‘মুক্কাবাজ’ মুক্তির সাড়ে ৪ বছর কেটে গেলেও, এখনও পর্যন্ত আমার একক, প্রধান চরিত্রে কোনও ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি। এটাও ঠিক, মাঝে দুই বছর করোনা ছিল। কাজ সেভাবে কেউই করতে পারেননি। কিন্তু তাছাড়াও তো কাজ হতে পারত। ‘মুক্কাবাজ’ করেও আমি প্রশংসিত হই। দর্শকের ভালবাসা পাই। তবুও সেভাবে কাজ পাইনি। আমি এসব থেকে একটা জিনিস বুঝেছি যে শুধু ভাল কাজই শেষ কথা নয়। যতই ভাল কাজ করি, যতই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করি, এই সবকিছু একদিকে আর বক্স অফিস অন্যদিকে।

প্রশ্ন: ২০১৮-র জানুয়ারিতে ‘মুক্কাবাজ’ মুক্তি পায়। তারপরের এই সাড়ে ৪ বছর কীভাবে কাজে লাগালেন তাহলে?
বিনীত: এই ছবির পর ২০১৮ পুরো, ২০১৯ পুরো চলে গেল। ২০২০-র মার্চে লকডাউন শুরু হল। এই দু’বছরে বক্স অফিসে ভাল স্কোর করার ব্যাপারটা আত্মস্থ করে ফেলেছিলাম। তখন আমি ফের লেখালিখি শুরু করি। বোন আর আমি একসঙ্গে আরও দু’টো ছবি লিখেছি। এবার সেগুলোও বাইরে নিয়ে যাব সকলের কাছে, ঠিক ‘মুক্কাবাজ’-এর সময়ের মতো। কিন্তু হার তো আমি মানব না।

আপাতত মুক্তির অপেক্ষায় ‘রংবাজ ৩’। আগামী ২৯ জুলাই ওটিটিতে স্ট্রিমিং শুরু হবে এই সিরিজের। এছাড়া চলতি বছরে তাঁকে ‘সিয়া’, ‘আধার’ ইত্যাদি ছবিতেও দেখা যাবে।

(Source: abplive.com)