ইতিমধ্যেই যাঁরা বিনিয়োগে হাত পাকিয়েছেন, মিউচুয়াল ফান্ড (Mutual Fund) তাঁদের কাছে অন্যতম পছন্দের বিনিয়োগের মাধ্যম। নিজেদের আর্থিক লক্ষ্যে পূরণের উদ্দেশ্যে বেশির ভাগ মানুষই মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমে (Mutual Fund Scheme) বিনিয়োগ করে থাকেন। তবে যাঁরা প্রথম বিনিয়োগ করছেন, তাঁরা এই বিষয়ে বেশ বিভ্রান্তই থাকেন। আসলে কীভাবে এই বিনিয়োগ করবেন অথবা চালাবেন, সেই ধারণাটা সেভাবে থাকে না। তাই সবার আগে যেটা প্রয়োজন, সেটা হল- সঠিক স্কিম বেছে নেওয়া। যাতে মনের মতো রিটার্ন পাওয়া যায়। তাই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ (investment) করার কথা ভাবলে এই পাঁচটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। এতে বিনিয়োগে দারুণ সুবিধা মিলবে।
রিস্ক অ্যাপেটাইট এবং প্রত্যাশার মূল্যায়ন:
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার আগে বিনিয়োগকারীকে নিজের রিস্ক অ্যাপেটাইট (Risk Appetite) এবং বিনিয়োগ থেকে প্রত্যাশা মতো রিটার্ন (Return) পাওয়ার বিষয়টার মূল্যায়ন করতে হবে। সেই অনুযায়ী মিউচুয়াল ফান্ড স্কিম বেছে নিতে হবে, যা বিনিয়োগকারীকে তাঁর নিজের প্রত্যাশা অনুযায়ী আর্থিক লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ধরা যাক কোনও বিনিয়োগকারী আগামী দশ বছরে একটি নির্দিষ্ট আকারের সম্পদ গড়ে তুলতে চাইছেন এবং তাঁর রিস্ক অ্যাপেটাইট অনেকটাই বেশি। ফলে তিনি এমন একটি মিউচুয়াল ফান্ড স্কিম বেছে নিতে পারেন, যা তাঁকে তাঁর রিস্ক অ্যাপেটাইট অনুযায়ী উচ্চ রিটার্ন দিতে পারে এবং দশ বছর পর বিনিয়োগকারীর আর্থিক লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রত্যাশা অনুযায়ী সম্পদ গড়তে সাহায্য করতে পারে। নিজের রিস্ক অ্যাপেটাইটের উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীকে বুঝতে হবে যে, নির্দিষ্ট আর্থিক লক্ষ্য পূরণের জন্য তাঁকে মিউচুয়াল ফান্ডে ঠিক কতটা পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে।
বিনিয়োগে বৈচিত্র্য বা বহুমুখী বিনিয়োগ:
বিনিয়োগকারীর কাছে থাকা সম্পূর্ণ পরিমাণ অর্থ একটা অথবা দু’টো মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমে বিনিয়োগ করলে তাঁর পোর্টফোলিও উচ্চ ঝুঁকির মুখে পড়বে। আসলে বিনিয়োগের পোর্টফোলিওয় বৈচিত্র্য আনতে হবে। অর্থাৎ বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থার নানা রকম মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমে বহুমুখী বিনিয়োগ পোর্টফোলিও তৈরি করতে হবে।
ব্যাঙ্কবাজার.কম (Bankbazaar.com)-এর সিইও আধিল শেট্টি (Adhil Shetty)-র পরামর্শ, “পর্যাপ্ত ভাবে বহুমুখী পোর্টফোলিও বানালে তা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পোর্টফোলিও-র ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। তবে মাথায় রাখা জরুরি যে, অতিরিক্ত বৈচিত্র্যময় পোর্টফোলিও এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ এটি পোর্টফোলিও রিটার্ন কমিয়ে দিতে পারে। তাই পোর্টফোলিও-তে এমন ভাবে বৈচিত্র্য আনতে হবে, যাতে পোর্টফোলিও ঝুঁকি বিনিয়োগকারীর রিস্ক অ্যাপেটাইটের ব্যাপ্তির মধ্যে চলে আসে এবং প্রত্যাশা মতো রিটার্নও যাতে পেয়ে যান বিনিয়োগকারী।
স্কিম বাছাই:
বাজারে প্রচুর মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা রয়েছে। আর প্রতিটি সংস্থাই নানা ধরনের স্কিম প্রদান করে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, এগুলো সবই কি বিনিয়োগের জন্য ভালো? আর নিজের অর্থ বিনিয়োগের জন্য সবথেকে ভালো স্কিমই বা কী? মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমে বিনিয়োগের আগে মূল্যায়ন করতে হবে সেই স্কিমের পূর্বের পারফরমেন্স। এর পাশাপাশি, ম্যানেজমেন্ট এফিসিয়েন্সি এবং এক্সপেন্স রেশিও সম্পর্কেও পড়াশোনা করে নিতে হবে। এ ছাড়াও, বিভিন্ন স্কিমের মধ্যে তুলনা করতে হবে এবং যেটা বিনিয়োগকারীকে সবথেকে ভালো রিটার্ন দেবে, সেটা বিচার করতে হবে। রেগুলার প্ল্যানের তুলনায় ডিরেক্ট প্ল্যান বেছে নেওয়া ভালো। কারণ তাদের এক্সপেন্স রেশিও কম।
বড়সড় পরিমাণ বিনিয়োগ বনাম এসআইপি বিনিয়োগ:
বিনিয়োগকারী যদি একটা বড়সড় পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে চান, তা-হলে তিনি হয়তো উচ্চ ঝুঁকি নিতে চান না। তাই এ-ক্ষেত্রে একটা সঠিক ডেট ফান্ড (Debt Fund) বেশ ভালো বিকল্প হতে পারে। আবার যদি বিনিয়োগকারী মাঝারি ঝুঁকি নিয়ে ভালো রিটার্ন পেতে চান, তা-হলে তাঁর ব্যালেন্সড ফান্ডে বিনিয়োগ করা উচিত। আর উচ্চ রিটার্ন পেতে চাইলে বিনিয়োগকারীকে উচ্চ ঝুঁকি নিতে হবে। সে-ক্ষেত্রে তাঁকে বিনিয়োগ করতে হবে লার্জ-ক্যাপ ইক্যুইটি ফান্ডে। নিজের হাতে থাকা অর্থকে বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থায় এবং ভিন্ন ভিন্ন স্কিমে বিনিয়োগ করতে হবে। যদি বিনিয়োগকারী ঝুঁকি কমাতে চান, তা-হলে বড়সড় পরিমাণ অর্থকে তিনি কোনও লিক্যুইড ফান্ডে রাখতে পারেন এবং এসটিপি (STP) বিকল্প ব্যবহার করে সঠিক মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমে অচল পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
যদি কোনও বিনিয়োগকারী দীর্ঘ মেয়াদে মাসিক কিস্তির মাধ্যমে বিনিয়োগ করে সম্পদ গড়ে তুলতে চান, তা-হলে তিনি নিজের রিস্ক অ্যাপেটাইট অনুযায়ী সঠিক ইক্যুইটি ফান্ডে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা এসআইপি (SIP) করতে পারেন। এসআইপি-র মাধ্যমে বেশ আকর্ষণীয় রিটার্ন পেতে পারেন। বিশেষ করে অস্থির বাজার পরিস্থিতির মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদে এসআইপি করলে রিটার্ন আসে ভালো।
পোর্টফোলিওর পুনর্মূল্যায়ন এবং ভারসাম্য:
বিনিয়োগকারী যখন মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমে বিনিয়োগ করেন, তখন তাঁর বারবার নিজের পোর্টফোলিও-র পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। সেই সঙ্গে নিজের বিনিয়োগ কেমন চলছে, সে-দিকটাতেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কখনও কখনও এটি বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারবে না, আবার কখনও কখনও এটি বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে। যদি স্কিমের পারফরমেন্স বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশা থেকে পিছিয়ে থাকে, তা-হলে খারাপ পারফর্ম করে এমন ফান্ড থেকে টাকা তুলে ভালো পারফর্ম করে এমন ফান্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। আবার অন্য দিকে, যদি দেখা যায় যে, বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও তাঁর প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে, তা-হলে আবার হাই-রিস্ক স্কিম থেকে লো-রিস্ক মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমে বিনিয়োগ স্যুইচ করতে হবে। আর সেই সঙ্গে যে রিটার্ন পাওয়া গিয়েছে, সেটা সুরক্ষিত রাখতে হবে।
এ-ছাড়াও মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমে বিনিয়োগ করার আগে বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমে দীর্ঘ-মেয়াদী এবং স্বল্প মেয়াদী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ধার্য করা করের বিষয়টাও জানা অত্যন্ত জরুরি। কম বয়সেই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা ভালো। এতে বিনিয়োগকারীর টাকা বহু দিন ধরে বিনিয়োগ হয়ে থাকে, ফলে রিটার্নের পরিমাণও অনেকটাই বেড়ে যায়।