কলকাতা: কিছু দিন আগে এয়ার ইন্ডিয়া এক ব্যাপক রূপান্তরের পরিকল্পনা সামনে এনেছে, যার লক্ষ্য অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবা বাজারের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ দখল করা।
ভারতের বাজারে একটা কথা বেশ প্রচলিত, টাটা যা-ই স্পর্শ করে তা-ই সোনা হয়ে যায়। বিমান পরিষেবা ক্ষেত্রেই বা তার ব্যতিক্রম হবে কী করে! টাটা মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়াও সেই মিডাসের স্পর্শে উচ্চাভিলাষী। নতুন মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়ার পরিকল্পনার মধ্যে দেশীয় বাজারে তার আধিপত্য যথেষ্ট পরিমাণে, অন্তত ৩০ শতাংশ বাজার দখল করা প্রথম সারিতে। আর সেই লক্ষ্যে, টাটা সন্স এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস-এর যৌথ উদ্যোগ তৈরি ভিস্তারার সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ার একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে বিমান পরিষেবা বাজারে একটি গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়া তার ব্যাপক রূপান্তর পরিকল্পনা সর্বসমক্ষে এনেছে ১৫ সেপ্টেম্বর। সেই পরিকল্পনায় নিজেকে আবারও এক বিশ্বমানের বিমান পরিষেবা সংস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে দৃঢ়সঙ্কল্প। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে যে আগামী পাঁচ বছরে, আন্তর্জাতিক যাত্রাপথগুলোতে বিমান পরিষেবা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় বাজারেও উল্লেখযোগ্যভাবে বিমান পরিষেবা বৃদ্ধি করে দেশীয় বাজারের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ অংশীদারিত্ব দখল করার চেষ্টা করবে। এয়ার ইন্ডিয়াকে সুদৃঢ়, লাভজনকতা এবং বাজার নেতৃত্বের পথে নিয়ে যাওয়াই এই পরিকল্পনার লক্ষ্য।
উল্লেখনীয় যে, এয়ার ইন্ডিয়া অগাস্ট মাসে ৮.৬১ লক্ষ যাত্রী বহন করেছে। সেটা মোট যাত্রীসংখ্যার ৮.৫ শতাংশ। অন্য দিকে, ভিস্তারা গত দুই মাস, জুলাই (১০.৪ শতাংশ) এবং অগাস্ট (৯.৭ শতাংশ) বাজার দখল করে তার দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে।
নতুন বাজার বিস্তারের জন্য, এয়ার ইন্ডিয়া পাঁচটি বড় ওয়াইডবডি এবং ২৫টা সরু ন্যারোবডি বিমান চালু করার পরিকল্পনা জানিয়েছে। বিমান সংস্থাটি তাদের এতদিন বসিয়ে রাখা বিমানগুলোও পুনরায় পরিষেবায় ফিরিয়ে নেওয়ার কথাও বলেছে।
অন্য দিকে, ভিস্তারার এখনও পর্যন্ত ৫৫টি বিমান রয়েছে আর আগামী মাসগুলিতে সেই সংখ্যাটা বাড়িয়ে ৬০-এ নিয়ে যেতেও বদ্ধপরিকর। অক্টোবরের শেষ থেকে শুরু হওয়া শীতকালীন সময়সূচিতে, ভিস্তারা ইউরোপে আরও বিমান পরিষেবা বাড়াতে চলেছে, বিশেষ করে ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং প্যারিসে বিমান পরিষেবা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে বিমান সংস্থাটি।
বিমান পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত এক অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছেন যে একীভূতকরণ সম্পর্কে জল্পনা আগে থেকেই ছিল ৷ তবে এয়ার ইন্ডিয়ার রূপান্তর পরিকল্পনার ঘোষণার পরে সেই জল্পনার আগুনে ঘি পড়েছে। তবে এ ব্যাপারে স্পষ্টতা আসবে আগামী মাসে। এয়ার ইন্ডিয়ার বর্তমান ৮.৫ বাজার আধিপত্য ৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ভিস্তারার সঙ্গে একীভূত হওয়ার গুঞ্জনকেই সমর্থন করে।
যদিও যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, উভয় বিমান পরিষেবা সংস্থাই একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে। সব থেকে লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, ভারতের প্রতিযোগিতা আয়োগ এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়াতে টাটা গ্রুপের সম্পূর্ণ ৮৩.৬৭ শতাংশ শেয়ারের এয়ার ইন্ডিয়া দ্বারা প্রস্তাবিত অধিগ্রহণকে কার্যত অনুমোদন দিয়েছে। অনেকেই সেই ছাড়পত্রকে ভিস্তারার সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ার একীভূত হওয়ার পরিকল্পনার আগুনে বাতাস জোগাচ্ছে।
বর্তমানে, টাটা গ্রুপ চারটি বিমান পরিষেবা সংস্থা পরিচালনা করছে – এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়া এবং ভিস্তারা। এয়ার ইন্ডিয়া এবং ভিস্তারা অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় পথেই চলাচল করে। এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়া শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ পথে চললেও, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস এখন শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করে।
ভারতীয় বাজারের ১৩ শতাংশ এয়ার ইন্ডিয়া এবং এয়ার এশিয়া সম্মিলিত ভাবে দখল করে রেখেছে। ইতিমধ্যে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে এয়ারএশিয়া ইন্ডিয়াকে একীভূত করার পরিকল্পনা করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা।
এক অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা হয়ে ওঠার লক্ষ্যে এয়ার ইন্ডিয়া ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, ইউরোপ, সুদূর পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং গাল্ফ উপসাগর জুড়ে একটি বিস্তৃত পরিষেবার ডানা ছড়িয়ে রেখেছে। ভারতের উত্তর-পূর্ব, লাদাখ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মতো দূরবর্তী অঞ্চলেও একটি বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক রয়েছে এয়ার ইন্ডিয়ার।
ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক বাজেট বিমান পরিষেবা সংস্থা, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ২০০৫ সালে স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বের বিমানপথে সাশ্রয়ী মূল্যের পরিষেবার প্রয়োজন মেটাতে চালু করা হয়েছিল। ভারতের ছোট শহরগুলিকে সরাসরি উপসাগরীয় এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করেছিল এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস। সরকারি মালিকানাধীন সংস্থা হিসাবে থাকার ৬৯ বছর পর, এয়ার ইন্ডিয়া এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ২০২২ সালের জানুয়ারিতে টাটা গ্রুপ দ্বারা পুনরায় অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। অধিগ্রহণের পরে, টাটা গ্রুপ দ্বারা রূপান্তরের একাধিক মাইলফলক স্থাপন করা হয়েছে এবং লক্ষ্য অনুযায়ী সে দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া যে আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনের অধিকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার জন্য বদ্ধপরিকর, তা টাটা গ্রুপের লক্ষ্য থেকেই সুনিশ্চিত।
Agency: IANS