সর্বজনীন দুর্গাপুজো নাকি সার্বজনীন দুর্গাপুজো? কোনটি ঠিক? কী বলছে অভিধান

সর্বজনীন দুর্গাপুজো নাকি সার্বজনীন দুর্গাপুজো? কোনটি ঠিক? কী বলছে অভিধান

সর্বজনীন এবং সার্বজনীন। পার্থক্য একটি মাত্র আ-কারের। কিন্তু এই আ-কারটুকু নিয়েই দুর্গাপুজোর মরশুমে রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে ওঠে নানা মহল। চলতে থাকে ঝগড়া, যুক্তি-পালটা যুক্তি।

কোনও কোনও পুজো কমিটি নিজেদের পুজোকে সর্বজনীন লেখেন। কেউ তাদের সংশোধন করে দিয়ে বলেন, ওটি আসলে সার্বজনীন লেখা উচিত ছিল। কারও ক্ষেত্রে ঠিক উলটোটা।

হালে সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তে এই আলোচনা এখন সেই মাধ্যমেও জাঁকিয়ে বসছে। কোনটি ঠিক? সর্বজনীন নাকি সার্বজনীন? কোনটি শুদ্ধ?

অনেকেরই ধারণা, ‘সার্বজনীন’ শব্দটি ভুল এবং অশুদ্ধ। যদি বিষয়টি মোটেও তা নয়। সাহিত্য সংসদের ‘বানান অভিধান’ বলছে, দু’টিই শুদ্ধ শব্দ। এমনকী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বা রাজশেখর বসুও তাঁদের লেখায় ‘সার্বজনীন’ শব্দটির ব্যবহার করেছেন। কিন্তু গোড়াতেই বলে দেওয়া দরকার, এই দুই শব্দের অর্থ আলাদা।

  • সার্বজনীন অর্থ: সকলের মধ্যে প্রবীণ, জ্যেষ্ঠ, সকলের মধ্যে সেরা। (উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে: মাহাত্মা গান্ধী নিজের সময়ে সার্বজনীন নেতা, দুর্গাপুজো বাঙালির সার্বজনীন উৎসব)
  • সর্বজনীন অর্থ: সর্বসাধারণের জন্য অনুষ্ঠিত, সকলের জন্য মঙ্গলকর, সর্বসাধারণের সহায়তায় কৃত, সকলের জন্য উদ্দিষ্ট, বারোয়ারি। (উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে: ভালোবাসা সর্বজনীন বিষয়, মানবাধিকার সর্বজনীন অধিকার, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের দাবি সর্বজনীন)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘যে সর্বজনীন শিক্ষা দেহের উচ্চশিক্ষার শিকড়ে রস জোগাইবে।’

এখন প্রশ্ন হল তাহলে দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে কোনটি সঠিক হবে?

সর্বজনীন দুর্গোৎসব নাকি সার্বজনীন দুর্গোৎসব?

এক্ষেত্রে উত্তরটি বুঝে নেওয়া মোটেই কঠিন কিছু নয়। বারোয়ারি অর্থে প্রয়োগ করা হলে শব্দটি হবে সর্বজনীন দুর্গোৎসব বা দুর্গাপুজো। অভিধানও বলছে, এটিই বেশি মাত্রায় শুদ্ধ। যেহেতু শব্দটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বারোয়ারি অর্থে প্রয়োগ করা হয়, তাই একে ‘সর্বজনীন দুর্গাপুজো’ বলাই বেশি যুক্তিসঙ্গত।

তবে এমন কোনও উদ্যোক্তা থাকতেই পারেন, যাঁরা নিজেদের পুজোকে শ্রেষ্ঠতম বলে দাবি করতেই পারেন। একমাত্র সেক্ষেত্রেই শব্দটি ‘সার্বজনীন’ হবে। তেমন হলে তাঁরা ‘সার্বজনীন দুর্গোৎসব’ বা ‘সার্বজনীন দুর্গাপুজো’ লিখতে পারেন। তবে তাঁদের সেই দাবি বাকিরা কতটা মানবেন, তা বলা মুশকিল! সেটি একেবারেই আলাদা চর্চার বিষয়।