পুজোয় বই বিক্রি করে ‘রেকর্ড’ আয় ! সব জেলা কমিটির কাছে তথ্য তলব আলিমুদ্দিনের

পুজোয় বই বিক্রি করে ‘রেকর্ড’ আয় ! সব জেলা কমিটির কাছে তথ্য তলব আলিমুদ্দিনের

ভেঙ্কটেশ্বর লাহিড়ী, কলকাতা:  দলের সুদিন ফেরেনি। তবে, দুর্গাপুজোয় বই বিক্রিতে পুরনো দিনের আভাস পাচ্ছে সিপিআইএম।  ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার বছর থেকেই সিপিআইএম তথা বামেদের জনসমর্থনের গ্রাফ ক্রমশ নিম্নগামী হয়েছে। একের পর এক ভোটে তাদের প্রতি মানুষের সমর্থন প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে তাদের ভোট কমবেশি পাঁচ শতাংশে এসে ঠেকেছে।

বিধানসভায় তাদের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার কেড়ে নিয়েছে আমজনতা। দলের সংগঠনের যখন এই হাল, সেখানে তারাই শারদ উৎসবের দিনগুলিতে গোটা রাজ্যে বামপন্থী বই কেনার পাঠকদের যে আগ্রহ তা থেকে রীতিমত উৎফুল্ল বাম শিবির।  দুর্গাপুজোর সময় বুক স্টল। সেই স্টল থেকে এ বছর রেকর্ড বই বিক্রি হয়েছে। এমনই দাবি বামেদের। আর এ নিয়েই শুরু তরজা। বই বিক্রি নিয়েও শাসক-বিরোধী তরজা অব্যাহত।

কলকাতায় বড় বড় পুজো। অনেক পুজোরই উদ্যোক্তা তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। বাম আমলে ছিল অন্য ছবি। কমিউনিস্ট নেতারা সরাসরি পুজোয় থাকতেন না। তবে, পুজোর সময় জনসংযোগ ভুলতেন না। তার জন্য ছিল বুক স্টল। যা এখনও আছে। এবার সেই সব স্টল থেকে রেকর্ড বই বিক্রি হয়েছে বলে দাবি বাম নেতৃত্বের। সুদীপ সেনগুপ্ত। সিপিআইএমের রাজ্য কমিটির সদস্য বললেন, অভাবনীয় সাড়া মিলেছে। আমরা সত্যি ভাবিনি যে এতটা সাড়া আমরা পাব। পার্টির একটা এরিয়া কমিটি বই বিক্রি করেছে প্রায় ৬ লক্ষ টাকার।’’

সিপিআইএম সূত্রের খবর,  দুর্গা পুজোয় এবার রাজ্যজুড়ে ১২০০-র বেশি বুক স্টল দেয় বামেরা। কলকাতায় স্টলের সংখ্যা ছিল ১১৬ টি। ২০২১ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ১০৯টি। এবার পুজোয় কলকাতার বইয়ের স্টলগুলি থেকে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার বই। গত বছরগুলির থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। কলকাতা সিপিআইএম জেলা কমিটির নেতা কল্লোল মজুমদার নিউজ18 বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এ বছর কলকাতায় বই বিক্রি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। তবে সম্পূর্ণ হিসেব এখনও আমাদের হাতে এসে পৌঁছয়নি।’’

সূত্রের খবর,  আলিমুদ্দিনের তরফে সমস্ত জেলা কমিটির কাছে প্রফর্মা পাঠানো হয়েছে। দলের কোন বুক স্টল কত বই বিক্রি করেছে। কত টাকার বই বিক্রি করেছে। কোন বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। এইসব তথ্য ২৪ অক্টোবরের মধ্যে পাঠানোর জন্য তলব করা হয়েছে। তারপরই সঠিকভাবে জানা যাবে বই বিক্রি থেকে কত টাকা আয় হয়েছে।’’

তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের বই বিক্রির প্রাথমিক যে হিসেব জানা গিয়েছে তাতে লাল শিবির যে  উৎফুল্ল তা নেতৃত্বের কথাতেই স্পষ্ট। যদিও  বিজেপি-তৃণমূলের গলায় কটাক্ষের সুর। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘বাৎসরিক উৎসবের মতো ওরা প্রতিবারই স্টলে বই নিয়ে আসে, আবার সেই বই ফেরত নিয়ে চলে যায়। শুধু বলে, আসছে বছর আবার হবে।’’

দিলীপ ঘোষের প্রশ্ন, কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের পাঠক কমিউনিস্ট সাহিত্য কেউ পড়ে? অন্যদিকে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বললেন, ‘‘সিপিআইএম পুজোয় বিশ্বাস করে না। কিন্তু পুজোর ভিড়ের সময় স্টল দিয়ে বসতে হয়। এরপর দেখা যাবে দুর্গাপুজোয় অঞ্জলীও দিচ্ছেন কোনও কোনও নেতা।’’  বিরোধী শিবিরের মন্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘বামপন্থায় মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এই যা চলছে চারদিকে দুর্নীতি সহ নানাবিধ কারবার। মানুষ সেখান থেকে পরিত্রান পেতে চায়। মার্কসবাদী চর্চা মানুষ নজর রাখতে চায়। এগুলি দিলীপ, কুণালরা বুঝবেন কোথা থেকে। বামেদের স্টল থেকে বই কেনার যে আগ্রহ দেখা গেল তা থেকেই পরিষ্কার বামেদের বিকল্প বামেরাই।’’

গত কয়েকটা নির্বাচনের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলেছিলেন, ‘‘লালের ভোট পড়েছে গেরুয়াতে।’’ এক কথায় বামের ভোট রামে গিয়েছে। তাই বিধানসভায় শূন্য হয়েছে বাম। বেড়েছে রাম। তাহলে কি ফের রামের ভোট ফিরে পাচ্ছে বামেরা? উত্তর দেবে সময়ই।

(Feed Source: news18.com)