মন্দার আঁচে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা, হাজার হাজার কর্মীর চাকরি যেতে পারে এই IT সংস্থা

মন্দার আঁচে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা, হাজার হাজার কর্মীর চাকরি যেতে পারে এই IT সংস্থা

#কলকাতা: ইউরোপ এবং আমেরিকার আকাশে ফের মন্দার কালো মেঘ। এই আবহে বেশ কয়েকটি বড় প্রযুক্তি সংস্থা কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে পারে। আমেরিকান সেমিকন্ডাক্টর নির্মাণকারী সংস্থা ইনটেল কর্পোরেশনও বিপুল সংখ্যক কর্মীকে ছাঁটাই করতে চলেছে বলে খবর। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পার্সোনাল কম্পিউটার বিক্রি কমে যাওয়ায় বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে কোম্পানি। তাই কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত।

তবে শুধু ইনটেল নয়। ইন্টারনেট জায়ান্ট ফেসবুক এবং গুগল-ও বিপুল কর্মী ছাঁটাই কিংবা ভাতায় কাটছাঁট করতে চলেছে বলে শোনা যাচ্ছে। পারফরমেন্স ভাল নয় এমন কর্মীদের নামের তালিকা চেয়েছে জুকারবার্গের সংস্থা। অন্য দিকে, আয়ের অভাবে কর্মীদের ভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গুগল।

অক্টোবরের শেষের দিকে ছাঁটাইয়ের ঘোষণা হতে পারে: মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ইনটেল অক্টোবরের শেষের দিকে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা করতে পারে। এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের কর্মীদের ওপর। এসব বিভাগে ২০ শতাংশ কর্মচারী চাকরি হারাতে পারেন। তবে ছাঁটাই সংক্রান্ত এই খবরের কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইনটেল।

বলে রাখা উচিত, ইনটেল চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ভালো ব্যবসা করতে পারেনি মোটেই। এমনকী অনুমানের চেয়ে কম লেনদেন হয়। এর পরে কোম্পানিটি বাকি আর্থিক বছরের জন্য তার বার্ষিক বিক্রয় এবং মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ইন্টেল তার খরচ কমানোর ব্যবস্থার অংশ হিসাবে ছাঁটাই করার পরিকল্পনা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ইনটেলের পিসি প্রসেসরের তেমন চাহিদা নেই, যার প্রভাব পড়েছে এর ব্যবসায়। এজন্য ছাঁটাইয়ের মতো তিক্ত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রসঙ্গত, জুলাই পর্যন্ত, ইনটেলের মোট প্রায় ১,১৩, ৭০০ কর্মী কর্মরত।

করোনা অতিমারীর সময়, ব্যক্তিগত কম্পিউটারের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। যাই হোক, কয়েক দশকের উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার এবং অফিস এবং স্কুল পুনরায় খোলার পরে, সাধারণ মানুষ এখন ব্যক্তিগত কম্পিউটার কেনা কমিয়ে দিয়েছে। এতে ইনটেলের ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। করোনা জেরে একাধিক বিধিনিষেধের কারণে ইনটেল তার প্রধান কম্পিউটারের বাজার চিনেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ চেন ব্যহত হয়েছে। ফলে কোম্পানির ব্যবসা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইনটেল তাদের মার্কেট শেয়ার ধরে রাখতে এএমডি (অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইস) এর মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে লড়াই করছে।

কর্মীদের সতর্ক করেছে ফেসবুক: প্রত্যাশা অনুযায়ী লাভ না হওয়ায় কর্মী ছাঁটাই করতে পারে ফেসবুকও। সাম্প্রতিক বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্ক জুকারবার্গ বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীর প্রধানদের কাছে পারফরমেন্স ভাল নয়, এমন কর্মীদের নামের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছেন। যতদূর জানা যাচ্ছে, প্রায় ১২০০০ কর্মীকে ছাঁটাই করতে পারে ফেসবুক। বিজ্ঞাপন থেকে ফেসবুকের আয় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ঠিক তখনই এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে জুকেরবার্গের সংস্থা।

সম্ভাব্য ছাঁটাই সম্পর্কে তথ্য ব্লাইন্ড অ্যাপে দিয়েছেন মেটা-র এক কর্মী। এই অ্যাপ প্রযুক্তি কোম্পানির কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। সেখানে ওই কর্মী জানিয়েছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফেসবুকের অনেক কর্মী চাকরি হারাতে পারেন। যাঁদের পারফরমেন্স দুর্বল তাঁদের এই তালিকায় রাখা হবে। ভাল কাজ দেওয়ার জন্য ৩০ দিন সময় দেওয়া হবে তাঁদের। কর্মীরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে কোম্পানি উন্নতির জন্য এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু আদতে কর্মীদের জোর করে ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। যাই হোক, ছাঁটাইয়ের খবর সামনে আসার পর মেটার শেয়ারের দাম রেকর্ড ৩৮০ ডলারে পৌঁছেছে। গত বছর সংস্থার শেয়ারের দাম ৬০ শতাংশের মতো কমে যায়।

মেটা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, আগামী বছর পর্যন্ত ফেসবুকে নিয়োগ কমিয়ে দেওয়া হবে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবং নতুন কাজকেই অগ্রাধিকার পাবে বলে জানা গিয়েছে। প্রথম ত্রৈমাসিকে উপার্জন কমার কারণে ফেসবুক তাদের বার্ষিক ব্যয় পূর্ববর্তী অনুমান থেকে কমিয়ে ৩ বিলিয়ন ডলার করেছে। এর আগে ওয়াল স্ট্রিট জেনারেলও একটি প্রতিবেদনে বলেছিল যে মেটা কয়েক মাসের মধ্যে কমপক্ষে ১০ শতাংশ খরচ কমাতে চলেছে। এর জন্য, কোম্পানি সমস্ত বিভাগে পুনর্গঠন করার পরিকল্পনা করেছে যাতে বেশি সংখ্যক কর্মচারীকে বাদ দিয়েই কাজ চালানো যায়। তখনই ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা ছিল। অন্য দিকে, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রত্যাশার চেয়ে কম আয় করেছে গুগলও। এই কারণে কর্মচারীদের ভাতা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, সংস্থায় নতুন নিয়োগও খুব কম হচ্ছে।

(Feed Source: news18.com)