আর্থিক সুরক্ষার জন্য মহিলাদের কী করতে হবে?

আর্থিক সুরক্ষার জন্য মহিলাদের কী করতে হবে?

#কলকাতা:  একবিংশ শতাব্দীতে পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেন নারীরা। কিন্তু আর্থিক দিক থেকে তাঁরা আজও পিছিয়ে। যে পরিশ্রমের বিনিময়ে পুরুষরা ১ ডলার উপার্জন করে সেই একই পরিশ্রম দিয়ে মহিলারা পান মাত্র ০.৮২ ডলার। মজুরির এই অসাম্য কেন?

আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ ইউনিভার্সিটি উইমেন থেকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, যে শ্রমের বিনিময়ে শ্বেতাঙ্গ পুরুষরা ১ ডলার রোজগার করেন সেই একই শ্রম দিয়ে শ্বেতাঙ্গ মহিলারা মোটামুটি ০.৭৯ ডলার, কালো মহিলারা ০.৬৩ ডলার, হিস্পানিক অথবা ল্যাটিন মহিলারা ০.৫৫ ডলার, এশিয়ান মহিলারা ০.৮৭ ডলার, নেটিভ হাওয়াইয়ান বা অন্যান্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপের মহিলারা ০.৬২ ডলার এবং আমেরিকান ভারতীয় বা আলাস্কা মহিলারা ০.৫৮ ডলার পান।

ট্রান্স জেন্ডারদের অবস্থাটা আরও শোচনীয়। ডিসি-ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ফর আমেরিকান প্রগ্রেসের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, লিঙ্গ পরিবর্তনের পর নারী ট্রান্সজেন্ডারদের উপার্জন প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমে গিয়েছে। ভবিষ্যতের সঞ্চয়ের কথা উঠলে দেখা যাবে মহিলাদের অবসরকালীন গড় সঞ্চয় মাত্র ২৩ হাজার ডলার। যেখানে পুরুষদের অবসরকালীন গড় সঞ্চয় ৭৬ হাজার ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৩ গুণ বেশি। বর্তমান সমাজে এখনও মহিলাদের চলার পথে দুস্তর বাধা রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে থেকেও নিজেকে রক্ষা করে আর্থিকভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এখানে মহিলাদের আর্থিক উন্নতির জন্য ৭টি পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হল, যা দেশভেদে সমান প্রযোজ্য।

আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে: আর্থিক পরিস্থিতি সম্পর্কে যত জানা থাকবে তত ভাল। নিজের অ্যাকাউন্টগুলো প্রতিদিন বা সাপ্তাহিক পর্যালোচনার অভ্যাস করতে হবে। কত টাকা ঢুকছে, কত খরচ হচ্ছে খেয়াল রাখতে হবে। সমস্ত অ্যাকাউন্ট অনলাইনে বা ব্যাঙ্ক অ্যাপের মাধ্যমে নজরদারি চালানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এতে টাকাপয়সা সুরক্ষিত থাকবে। বাজেট বা ব্যয় ট্র্যাকার অ্যাপের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলো লিঙ্ক করা যায়। এতে অতিরিক্ত ব্যয় হলেই রিমাইন্ডার আসবে।

সেভিংস অ্যাকাউন্টে যেন হাত না পড়ে: জীবন চ্যালেঞ্জিং। হঠাৎ বিপদ আসে। আর জলের মতো টাকা বেরিয়ে যায়। তাই আগাম সতর্ক থাকতে হবে। অন্তত ৩ থেকে ৬ মাসের খরচ চালানো যায় এমন তহবিল আলাদা করে রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এটা এক ধরনের আর্থিক নিরাপত্তা। মানসিক শান্তি দেয়। এ জন্য প্রতি সপ্তাহে সেভিংস অ্যাকাউন্টে ১০০-৫০০ টাকা ফেলা যায়। এতে অনেকটা সুরাহা হবে। হঠাৎ কোনও বিপদ এলে নতুন সুযোগ সন্ধানের সময় প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানোর জন্য মাথার চুল ছিঁড়তে হবে না।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাই আর্থিকভাবে সুরক্ষিত থাকার চাবিকাঠি। এতে অবসরের বছরগুলির সঞ্চয় যেমন রয়েছে তেমনই অপ্রত্যাশিত খরচ এবং ব্যয়ও ধরতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মহিলারা গড়পড়তা পুরুষদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচেন। তাই জীবনসঙ্গীর মৃত্যুর পর কোন খরচ কোথা থেকে জোগাড় হবে সে সব নখদর্পণে রাখতে হবে। অক্ষম হয়ে পড়লে সম্পত্তি এবং অর্থের উত্তরাধিকারী কে হবেন, কে বিল পরিশোধ করবে তাও আগাম ঠিক করতে হবে।

আর্থিক নিরাপত্তার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ: নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ করতে হবে। তবেই আর্থিক নিরাপত্তা আসবে। সঞ্চয়, ঋণ পরিশোধ এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ভাগ করে নিতে হবে। এজন্য নিয়মিত সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা জমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আয়ের অন্তত ২০ শতাংশ। মাথায় রাখতে হবে, বর্তমানে যে টাকা জমবে ভবিষ্যতে সেটাই কাজে লাগবে। এর পাশাপাশি উচ্চ সুদের ঋণ পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ক্রেডিট কার্ডের বিল যেন পড়ে না থাকে। সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিতে হবে। যেমন সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য বা অবসরকালীন সঞ্চয়।

ক্রেডিট তৈরি: ক্রেডিট থাকা অন্য যে কোনও আর্থিক পদক্ষেপের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নো ক্রেডিট হিস্টরি থাকলে ঋণ পাওয়া মুশকিল। সমীক্ষা বলছে যে দেশের বিস্তর নাগরিকেরই কোনও ক্রেডিট হিস্টরি নেই। এতে বা ঋণ বা অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পেতে অসুবিধা হয়। ৬৭০ এবং তার বেশি ক্রেডিট স্কোর রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

উচ্চ সুদের ঋণ কমাতে হবে: বন্ধকের মতো ঋণ দরকার পড়লে নিতে হবে। কিন্তু অন্যান্য উচ্চ সুদের হারে ঋণ যত দ্রুত সম্ভব মিটিয়ে ফেলাই ভাল। যেমন ক্রেডিট কার্ডের ঋণ। এটা মোটেই ফেলে রাখা উচিত নয়। এতে দৈনিক সুদ দিতে হয়। একটা সময় পর সুদের পাহাড় গড়ে ওঠে।

পাওনাদারদের সঙ্গে সুসম্পর্ক: পাওনাদারদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাই উচতৎ। তাহলে বর্তমান ব্যাঙ্ক বা ক্রেডিট ইউনিয়নের মাধ্যমে একটি নতুন ক্রেডিট কার্ডের দ্রুত অনুমোদনের সম্ভাবনা থাকবে। অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন বা আর্থিক সহায়তার দরকার হলে তা নির্দ্বিধায় জানাতে হবে।

(Feed Source: news18.com)