তরুণদের মধ্যে বাড়ছে স্ট্রোকের ঝুঁকি! কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জেনে নিন…

তরুণদের মধ্যে বাড়ছে স্ট্রোকের ঝুঁকি! কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জেনে নিন…

বেঙ্গালুরু:  হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেন স্ট্রোক শুধু বয়স্ক মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এক সময়। সেদিন আর নেই। এখন পরিবর্তিত জীবনচর্যা অল্পবয়সী মানুষের মধ্যেও তৈরি করছে রোগের ভীতি। এখন ২৫ বছরের কোনও তরুণও ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন।

অলস জীবনযাত্রা এবং খাদ্যভ্যাসের পরিবর্তন অনেকাংশেই অসুস্থ করে তুলছে নতুন প্রজন্মকে। গত কয়েক বছরে সেই পরিসংখ্যান আরও বেড়েছে। এবিষয়ে জরুরি কিছু কথা জানাচ্ছেন চিকিৎসক সন্তোষ এন ইউ, নিউরোসার্জারি এবং এন্ডোভাসকুলার নিউরোসার্জারি কনসালটেন্ট, অ্যাস্টার সিএমআই হাসপাতাল, বেঙ্গালুরু।

Dr Santhosh N U, Consultant – Neurosurgery & Endovascular Neurosurgery, Aster CMI Hospital, Bengaluru

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতে, সারা বিশ্বে যত মানুষের মৃত্যু হয় তার দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ স্ট্রোক। প্রতি বছর প্রায় ৩১ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ৫.৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যান। ভারতে, পরিস্থিতি ক্রমশ উদ্বেগজনক হচ্ছে। এদেশে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন ব্যক্তি স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।

স্ট্রোক কী?

এটি একটি ক্ষণস্থায়ী ‘ইস্কেমিক অ্যাটাক’, একে ‘সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। আসলে হঠাৎ মস্তিষ্কে রক্ত সংবহন বন্ধ হয়ে। ফলে মস্তিষ্ককে অক্সিজেন এবং পুষ্টি প্রবাহও স্তব্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে লক্ষ লক্ষ কোষের মৃত্যু ঘটতে পারে। যা স্থায়ী ভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। শারীরিক অক্ষমতা তৈরি, এমনকী মৃত্যুও হতে পারে।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ-এর এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, কম হলেও প্রায় ১০-১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে নানা রকম স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তরুণরা। আবার এক পঞ্চমাংশ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। অনেক সময়ই আগামী জীবনে বিধ্বংসী প্রভাব রাখে এই অসুখ।

স্ট্রোকের সবচেয়ে সাধারণ ধরন হল ইস্কেমিক স্ট্রোক যা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালীতে বাধার কারণে ঘটে। তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের অন্য অনেক কারণ রয়েছে—

সাবারকনয়ড হেমারেজ:

অ্যারাকনয়েড ঝিল্লি এবং মস্তিষ্ককে ঘিরে থাকা পিয়া ম্যাটারের মধ্যবর্তী স্থানে রক্তপাত হলে এই স্ট্রোক হয়।

ইন্ট্রাক্রানিয়াল হেমোরেজ:

মস্তিষ্কের প্যারেনকাইমা রক্তনালী ফেটে বা ফুটো হয়ে গেলে এই ধরনের স্ট্রোক হয়। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের কারণেই এটা হয়।

রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ—

মুখের বা শরীরের একপাশে হালকা দুর্বলতা এমনকী পক্ষাঘাত পর্যন্ত তৈরি হতে পারে।

স্ট্রোকের লক্ষণকে FAST দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা হয়—‘ফেশিয়াল ড্রপিং’ বা মুখ ঝুলে পড়া, ‘আর্ম উইকনেস’ বা হাতের দুর্বলতা, ‘স্পিচ ডিফিকাল্টিজ’ বা কথা বলার সমস্যা এবং ‘টাইম’ বা সময়জ্ঞান। দ্রুত রোগ বুঝতে পারলে দ্রুত চিকিৎসা করা সম্ভব, তা জীবনদায়ী হতে পারে।

প্রাথমিক ভাবে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির হঠাৎ বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে, কথা বলতে বা বুঝতে সমস্যা, একটি বা দু’টি চোখে দেখতে অসুবিধা, ভারসাম্যের অভাব, মাথা ঘোরা বা হাঁটার সমস্যা হওয়া, তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে।

রোগের কারণ—

দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ স্ট্রোকের প্রধান কারণ হতে পারে। তাছাড়া, ধূমপান, মদ্যপান, শরীরচর্চার অভাবে বিএমআই বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ডিসলিপিডেমিয়া, অতীতের স্ট্রোক, পারিবারিক ইতিহাস, অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন-সহ বাতজনিত হৃদরোগ সমস্যার কারণ। মৌখিক গর্ভনিরোধক বড়ি মহিলাদের স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। মানসিক উদ্বেগ, অনিদ্রা, প্যাকেটজাত খাবারও ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রতিকার—

পুষ্টিকর, তাজা অপ্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ।

খাদ্যে সীমিত লবণের ব্যবহার।

স্থূলতার সমস্যা কাটাতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট নিয়মিত ব্যয়াম।

ধূমপান ত্যাগ।

ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিরীক্ষণ করা।

আগে স্ট্রোক হয়ে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলা।

(Feed Source: news18.com)