বাবা দেখে যেতে পারলেন না… জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েও আক্ষেপ বাংলার পেসার মুকেশের

বাবা দেখে যেতে পারলেন না… জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েও আক্ষেপ বাংলার পেসার মুকেশের

কলকাতা: দুপুর থেকে তাঁর মোবাইল ফোন বেজেই চলেছে। শুভেচ্ছাবার্তার বন্যা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের (Ind vs WI) জন্য জাতীয় দলে (Team India) সুযোগ পেয়েছেন। তাঁকে ঘিরে রীতিমতো উৎসবের আবহ।

বাংলার ডানহাতি পেসার মুকেশ কুমার (Mukesh Kumar) অবশ্য খুশির দিনেও বিষণ্ণ। বাবা এই দিনটা দেখে যেতে পারলেন না যে…

ওয়েস্ট ইন্ডিজ রওনা হওয়ার আগে বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্রস্তুতি সারছেন মুকেশ। সেখান থেকে ফোনে এবিপি লাইভকে বললেন, ‘জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা আমার কাছে স্বপ্নপূরণ হওয়ার মতো। তবে মন খারাপ লাগছে বাবার জন্য। এই দিনটা দেখে যেতে পারলেন না।’

বিহারের গোপালগঞ্জে পৈতৃক বাড়ি। সেখান থেকে রুজিরুটির টানে কাশীনাথ সিংহ এসেছিলেন কলকাতায়। বাংলায় এসে ট্যাক্সি চালাতেন। ভেবেছিলেন, ছেলেকে কলকাতায় এনে কাজে লাগিয়ে দেবেন। সংসারে যে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা। কিন্তু ছেলে শুনলে তো! তাঁর যে ধ্যান জ্ঞান ক্রিকেট।

শিবপুর ক্লাবের হয়ে তখন খেলছেন ডানহাতি মিডিয়াম পেসার। এদিকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ভবিষ্যতের ক্রিকেটার তুলে আনতে ‘ভিশন ২০২০’ শিবির চালু করছে সিএবি। মুকেশ বলছিলেন, ‘ক্লাব কর্তা রবি মিত্র ও কোচ বীরেন্দ্র সিংহ আমার নাম ভিশনের শিবিরে পাঠান। সেখানে প্রথমে ওয়াকার ইউনিস ও পরে টি এ শেখরের তত্ত্বাবধানে প্র্যাক্টিস করি। তারপর বাংলা দলে সুযোগ পাই।’

আনন্দের দিনেও বাবার জন্য মন খারাপ মুকেশের। বাবা গত বছর ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন। মুকেশ আবেগ মেশানো গলায় বলছেন, ‘এখন হয়তো একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছি। তবে রাতে যখন একা খেতে বসব, আমার চোখে জল আসবেই। বাবা আজীবন কষ্ট করেছেন। আজকের দিনটা দেখে যেতে পারলেন না। বাবার স্বপ্নপূরণ হল।’

বাংলা দলের হয়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স। জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছিলেন মুকেশ। বাংলাদেশ এ দলের বিরুদ্ধে টেস্টে ভারত এ দলের হয়ে দুরন্ত বোলিং করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষার অবসান হল শুক্রবার। জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলী জানিয়ে দিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের টেস্ট ও ওয়ান ডে – দুই দলেই রয়েছেন মুকেশ।

বাংলার পেসার বলছিলেন, ‘এনসিএ থেকে আগেই বলা হয়েছিল, ওদের রুটিন অনুযায়ী চলতে। সিএবি-র স্থানীয় ক্রিকেটে পি সেন ট্রফির ম্যাচও খেলেছি ওদের অনুমতি নিয়ে। ভারতীয় দলে সুযোগ হয়তো পাব, সেই রকম মনে হচ্ছিল। কারণ, বোর্ড থেকে আমাকে ওয়ার্কআউটের সূচি পাঠিয়েছিল। কী ধরনের প্রস্তুতি নিলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল হওয়া যায়, সেই সব ভিডিও পাঠানো হয়েছিল। সেগুলো দেখেই প্রস্তুত হচ্ছিলাম।’ যোগ করলেন, ‘তবে ভাবিনি টেস্ট দলে সুযোগ পাব। টেস্ট খেলা আমার স্বপ্ন।’

গত তিন মরশুমে বাংলাকে দুবার রঞ্জি ফাইনালে তোলার নেপথ্যে অন্যতম কারিগর মুকেশ। ৩৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১৪৯ উইকেট রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। আইপিএলে তাঁকে রেকর্ড অর্থে কিনেছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। সাড়ে পাঁচ কোটি টাকায়। বাংলা থেকে কোনও ক্রিকেটার কোনওদিন আইপিএলে এত দর পাননি। তবে বল হাতে খুব একটা ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেননি আইপিএলে। দিল্লিও প্লে অফের আগেই ছিটকে গিয়েছিল।

আইপিএলের পরে নিজেকে নতুন করে ঘষামাজা করেছেন। মুকেশ বলছেন, ‘দারুণ আত্মবিশ্বাসী। ভুলত্রুটি শুধরে নিচ্ছি। আশা করছি ওয়েস্ট ইন্ডিজে হতাশ করব না।’

(Feed Source: abplive.com)