ফাইভে বাবা, এইটে ভাইকে হারানোর চরম শোক, তারপরেও অভাবনীয় সাফল্য জগদীশের!

ফাইভে বাবা, এইটে ভাইকে হারানোর চরম শোক, তারপরেও অভাবনীয় সাফল্য জগদীশের!

জয়পুর: আর্থিক অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। তার সঙ্গেই জীবনে নেমে এসেছিল কাছের মানুষদের হারানোর যন্ত্রণাও। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও মাথা নোয়াননি মা-ছেলে। কঠোর পরিশ্রম করে ছেলেকে মানুষ করেন মা। মায়ের সেই কঠোর শ্রম আর ছেলের কঠিন অধ্যবসায়ের ফল আজ মিলেছে হাতেনাতে। অবশেষে কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন ছেলে। আজ রাজস্থানের নাগৌরের জগদীশ রাম জিঞ্জার মুখ থেকেই শুনে নেওয়া যাক তাঁর সাফল্যের গল্প।

পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াকালীন বাবাকে হারিয়েছিলেন জগদীশ। এর পর অষ্টম শ্রেণীতে হারিয়েছিলেন ভাইকেও। জগদীশের কথায়, “বাবা ও ভাইকে হারানোর যন্ত্রণা এবং দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই ছিল আমাদের নিত্য সঙ্গী। মা শ্রমিকের কাজ করেই আমাকে পড়িয়েছেন। গ্রামের সরকারি স্কুলেই আমার পড়াশোনা। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সেখানেই পড়েছি। এর পর গ্রাম থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে ফারদোদে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি আমি। ২০০৫ সালে বিএসসি পাশ করি। এর পর ২০০৭ সালে এমএসসি এবং ২০০৮ সালে বি.এড।”

তবে পড়াশোনার সফরটা জগদীশের জন্য ততটাও সহজ ছিল না। মায়ের কঠোর পরিশ্রম তো ছিলই , তাঁর নিজের অধ্যবসায়ও কিছু কম নয়। নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাওয়ার জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতার কাজও করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে বাচ্চাদের টিউশনও পড়াতেন। তবে বরাবরই চাইতেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক হতে। সেই লক্ষ্য স্থির রেখেই এগিয়েছিলেন তিনি।

জগদীশ বলেন, “২০১২ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষক পদে নির্বাচিত হয়েছিলাম। ২০১২ সালে আমি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে স্কুল লেকচারার পদের জন্য নির্বাচিত হই, কিন্তু সেখানে যোগদান করিনি। ওই একই বছরে রাজস্থান পাবলিক সার্ভিস কমিশন দ্বারা পরিচালিত স্কুল লেকচারার পরীক্ষায় রসায়ন বিষয়ে নির্বাচিত হই। কোনও ছুটি না নিয়েই ছাত্রদের পড়াতাম। সেই সঙ্গে চলত পরীক্ষার প্রস্তুতিও। ২০১৪ সালে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের কথা প্রকাশ্যে আসে। ২০১৭ সালে পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে পোস্টিং মেলে।”

অবশেষে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নাগৌরের শ্রী বলদেবরাম মির্ধা রাজকীয় মহাবিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন। এই কৃতিত্ব অবশ্য মা-কেই দিয়েছেন জগদীশ। তিনি বলেন যে, “আমার মা আমাকে প্রতিটি কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্য করেছেন এবং প্রতিটি পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে শিখিয়েছেন।”

(Feed Source: news18.com)