‘১৫২ লক্ষ কোটির হিসেব লুকিয়ে রাখে কেন্দ্র, রাজ্যের ঋণ মাত্র…,’ আয়-ব্যয়ের হিসেব দিলেন মমতা

‘১৫২ লক্ষ কোটির হিসেব লুকিয়ে রাখে কেন্দ্র, রাজ্যের ঋণ মাত্র…,’ আয়-ব্যয়ের হিসেব দিলেন মমতা

কলকাতা: ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থেই রাজ্যের তৃণমূল সরকার ‘লক্ষ্মী ভাণ্ডার’, ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’র মতো প্রকল্প এনেছে, তার জন্য গলা পর্যন্ত ঋণে ডুবে গেলেও, দেদার টাকা নষ্ট হচ্ছে বলে লাগাতার অভিযোগ করে আসছেন বিরোধীরা। সেই আবহে আয়-ব্যয় এমনকি ঋণেরও হিসেব তুলে ধরলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  (Mamata Banerjee)। জানালেন, বাম জমানার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েও, রাজ্য সরকার ঢের সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে।

বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীও। রাজ্যবাসীর সামনে সেখান থেকেই বিশদ হিসেব তুলে ধরা হয়। মমতা বলেন, “অনেকে ভুলভাল বলেন যে, রাজ্য সরকারের ঋণের বোঝা ৭ লক্ষ কোটি হয়ে গিয়েছে। এগুলো সব বাজে কথা। অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানার মতো নতুন রাজ্যগুলির এই ধরনের সমস্যা নেই, কিন্তু আমাদের উত্তরাধিকার বহন করে চলতে হচ্ছে। আগের সরকার ক্ষুদ্র সঞ্চয় থেকেও ঋণ নিয়েছিল।” (Nabanna News)

এর পর মুখ্যসচিব দ্বিবেদীকে বিশদ হিসেব দিতে বলেন মমতা। তাতে মুখ্যসচিব জানান, ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার সময়ে রাজ্যের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লক্ষ কোটি টাকা। আর এখনও পর্যন্ত হিসেব করলে, রাজ্যের মোট ঋণের পরিমাণ ৫.৮৬ লক্ষ কোটি। ডেট টু জিডিপি অর্থাৎ মোট উৎপাদনের নিরিখে ঋণের এই হিসেব দেন মুখ্যসচিব। কোনও রাজ্যের মোট ঋণ কত, এবং তা মেটাতে তার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কত, তাকেই বলা হয় মোট উৎপাদনের নিরিখে ঋণ। মুখ্যসচিব জানান, ২০১১ সালে মোট উৎপাদনের নিরিখে ঋণের হার ছিল ৪০ শতাংশ। কোভিডের আগে তৃণমূল সরকার সেটিকে ৩২ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল, এখন তা ৩৩ শতাংশে রয়েছে। অর্থাৎ রাজ্যের মোট উৎপাদনের নিরিখে ঋণ কমেছে বলে দাবি করা হয়।

ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেও তুলনা টানা হয় এদিন। মুখ্যসচিব জানান, ২০১৪-‘১৫ অর্থবর্ষে দেশের ঋণের পরিমাণ ছিল ৬২.৪২ লক্ষ কোটি টাকা, যা এখন বেড়ে হয়েছে ১৫২.৬ লক্ষ কোটি টাকা। সেই নিয়ে মমতা বলেন, “ওরা কিন্তু কখনও হিসেব দেয় না। মুখ্যসচিব সঠিক হিসেব দিয়েছেন। কত ঋণ বেড়েছে, কখনও বলে না কেন্দ্র। আর আমরা পুরনো ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে, সামাজিক প্রকল্প চালিয়েও, মেটাতে পেরেছি। ওদের ঋণ ৬২ লক্ষ কোটি থেকে ১৫২ লক্ষ কোটি হয়েছে। কোথায় ৫ লক্ষ কোটি আর কোথায় ১৫২ লক্ষ কোটি!”

বাজেট বরাদ্দের হিসেবও এদিন তুলে ধরা হয় রাজ্যবাসীর সামনে। মুখ্যসচিব জানান, ২০১১ সালে মোট বাজেট বরাদ্দ ছিল ৮৪ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। অর্থাৎ রাজ্যের তৃণমূল সরকার বাজেটে বরাদ্দ যেমন বাড়িয়েছে, খরচও করেছে টাকা। ২০১১ সালে রাজ্যের নিজস্ব আয় ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা, এখন তা বেড়ে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। পরিকাঠামো খাতে, নতুন বিল্ডিং, কলেজ, সেতু, উড়ালপুল, রাস্তা তৈরিতে ২০১০-‘১১ সালে যেখানে ২২০০ কোটি টাকা খরচ হতো, এবছরই রাজ্য সরকার ওই খাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে বলে জানান মুখ্যসচিব, আগের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি। পশ্চিমবঙ্গের থেকে বড় রাজ্যগুলিও তা করতে পারেনি। তাই রাজ্য সরকার খরচ করে না বলে যে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা, তা সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।

(Feed Source: abplive.com)