বেছে বেছে বিলকিসের ধর্ষকদেরই কেন মুক্তি? বাকিরা কী দোষ করেছে? প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের

বেছে বেছে বিলকিসের ধর্ষকদেরই কেন মুক্তি? বাকিরা কী দোষ করেছে? প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের
নয়াদিল্লি: বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল গুজরাত সরকার। সময়ের আগে কোন যুক্তিতে মুক্তি দেওয়া হল বিলকিসের ধর্ষকদের, অন্য বন্দিদের পরিবর্তে বেছে বেছে বিলকিসের ধর্ষককেরই কেন মুক্তি দেওয়া হল, প্রশ্ন তুলল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্তে প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে বলেও শীর্ষ আদালত মন্তব্য করে এদিন। (Bilkis Bano)

সময়ের আগে, স্বাধীনতা দিবসে বিলকিসের ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়া, সংবর্ধনা দিয়ে স্বাগত জানানো নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। গুজরাত সরকারের পাশাপাশি, বিলকিসের ধর্ষকদের মুক্তিতে অনুমোদন দেওয়া নিয়ে সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারও। সেই নিয়ে আদালতে একের পর এক জনস্বার্থ মামলা জমা পড়ে। তেমনই একটি মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার গুজরাত সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত। (Supreme Court)

বৃহস্পতিবার বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং উজ্জ্বল ভুয়াঁর ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি চলছিল। তাতে আদালত বলে, “মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে দোষীদের যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে কোন যুক্তিতে মুক্তি দেওয়া হল দোষীদের? অন্য বন্দিরা কেন সেই সুবিধা পেলেন না? বেছে বেছে এই অপরাধীদেরই কেন সময়ের আগে মুক্তি দেওয়া হল?”

আদালত এদিন আরও বলে, “ঘৃণ্য অপরাধ করে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে যারা, ১৪ বছর পর তাদের সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তার জন্য় ১৪ বছর পর মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে সকলে। বাকি বন্দিদের ক্ষেত্রে কি এই নীতি কার্যকর করা হয়েছে? না হলে, বেছে বেছে এদেরকেই কেন এই বিশেষ সুুবিধা দেওয়া হল? ভুল সংশোধন, সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসার সুযোগ তো সকলের প্রাপ্য! সেই সুযোগ কতজন পেয়েছেন? তাহলে জেলগুলি উপচে পড়ছে কেন? পরিসংখ্যান দেখান।”

বিলকিসের ধর্ষকদের মুক্তি দিতে যে জেল উপদেষ্টা কমিটি গড়ে তোলা হয়েছিল, তার ভিত্তি কী, সেই নিয়েও গুজরাত সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে আদালত। গোধরায় মামলার শুনানি না হওয়া সত্ত্বেও, সেখানকার আদালতের মতামতই বা চাওয়া হল কেন, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে।

২০০২ সালের গোধরায় সবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের পর গুজরাত জুড়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বিলকিস। কোলের সন্তান এবং পরিবারের মোট ১৫ সদস্যের সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ৩ মার্চ ধূ ধূ জমি ঘিরে গজিয়ে ওঠা ঝোপের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই সময় কাস্তে, তলোয়ার, লাঠি নিয়ে ২০-৩০ জনের দল তাঁদের উপর চড়াও হয়। গণধর্ষণের শিকার হন বিলকিস। বিলকিসের চোখের সামনে পরিবারের সাত সদস্যকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। খুন করা হয় বিলকিসের শিশু সন্তানকেও। কোনও রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে পালান ছ’জন।

সেই মামলাতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১১ জনকে গত বছর স্বাধীনতা দিবসে, গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুক্তি দেয় গুজরাত সরকার। জেলের বাইরে বেরোতে গলায় মালা পরিয়ে, মিষ্টিমুখ করিয়ে, ধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানানো হয় সকলকে। এর পর দফায় দফায় সংবর্ধনাও দেওয়া হয় দোষীদের। সেই নিয়ে প্রশ্ন তুললে, পাল্টা সাফাই দিয়ে জানানো হয়, জেলের ভিতর সকলের ভাল আচরণ ছিল। ব্রাহ্মণ সন্তান, ভাল ঘরের ছেলে বলেও দোষীদের প্রশংসায় ভরিয়ে দেন গুজরাতের বিজেপি বিধায়ক।

সেই সময় একেবারেই ভেঙে পড়েন বিলকিস। আর শক্তি পাচ্ছেন না বলে জানান। পরে ফের গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানান তিনি। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও পাশে দাঁড়ান তাঁর। গুজরাত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একের পর এক জনস্বার্থ মামলা জমা পড়ে। অপরাধীদের মুক্তি দেওয়ার আগে তাঁকে জানানো পর্যন্ত হয়নি বলেও জানান বিলকিস। আগামী ২৪ অগাস্ট তাঁর আবেদনের শুনানি রয়েছে।

(Feed Source: abplive.com)