সংঘাত জিইয়ে রাখাই উদ্দেশ্য! জি-২০ সম্মেলনে আসছেন না চিনপিং, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কূটনীতিকরা

সংঘাত জিইয়ে রাখাই উদ্দেশ্য! জি-২০ সম্মেলনে আসছেন না চিনপিং, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কূটনীতিকরা
নয়াদিল্লি: গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। এবার খবরে সিলমোহর দিল চিন। ভারতে আয়োজিত জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং (Xi Jinping), সোমবার খবরে কার্যতই সিলমোহর দিল তারা। প্রেসিডেন্টের পরিবর্তে, চিনি প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং দিল্লির সম্মেলনে যোগ দেবেন। কিন্তু পদ এবং ক্ষমতার নিরিখে চিনা প্রেসিডেন্টের ঢের নীচে প্রধানমন্ত্রী। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের কোনও ক্ষমতাই নেই তাঁর। প্রেসিডেন্টের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীকে জি-২০ সম্মেলনে চিনের তরফে প্রতিনিধি করে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠছেই, বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত যখন চরমে। (G-20 Summit 2023)

আগামী ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন চলবে। ঢের আগেই এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে গিয়েছিল এবং সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু করে দেয় ভারত।  আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চিনের প্রেসিডেন্ট চিনপিং, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাকরএ-সহ তাবড় রাষ্ট্রনেতাদের যোগদানের কথা ছিল। প্রথমে তা থেকে নাম তুলে নেন পুতিন। তার পর চিনপিংও আসতে পারবেন না বলে শুরু হয় গুঞ্জন। (India-China Relations)

এবার সেই গুঞ্জনেই সিলমোহর দিল বেজিং। সোমবার দেশের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে চিনের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী চিয়াং। ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ যাবৎ প্রত্যেক জি২০ সম্মেলনেই নিয়ম করে হাজির থেকেছেন চিনপিং। করোনা কালে মাঝে সেই রীতিতে ছেদ পড়লেও, এবছরও তাঁর যোগদান একরকম নিশ্চিত ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভারতে আয়োজিত জি-২০ সম্মেলন থেকে সরে দাঁড়ালেন তিনি। যদিও এ নিয়ে কোনও প্রশ্নেরই জবাব দেয়নি বেজিং।

যে সময় চিনপিং এই সিদ্ধান্ত নিলেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লাদাখে সীমান্ত সংঘাত পুরোপুরি থিতিয়ে আসেনি এখনও। তার মধ্যেই সম্প্রতি নয়া মানচিত্র প্রকাশ করেছে চিন, যাতে অরুণাচলপ্রদেশের একাংশ এবং লাদাখের আকসাই চিনকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দেখিয়েছে তারা। সীমান্ত সংঘাত নিয়ে সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলন চলাকালীন সম্প্রতি চিনপিংয়ের মুখোমুখি হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার পর ভারতের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, দুই রাষ্ট্রনেতাই সীমান্তে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনার সপক্ষে সওয়াল করেছেন। কিন্তু বেজিংয়ের তরফে তেমন কোনও বিবৃতি জারি করা হয়নি। এর পরই দিল্লিতে চিনপিংয়ের জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে আসা নিয়ে ধন্দ দেখা দেয়।

২০০৭ এবং ২০০৯ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম সঙ্কট নেমে আসায়, জি-২০ সম্মেলনের গুরুত্ব বাড়ে। সরাসরি রাষ্ট্রনেতারা সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করতে শুরু করেন। সেই থেকে নিয়মিত রাষ্ট্রনেতারা সেই সম্মেলনে যোগদান করে আসছেন,অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার পক্ষে সওয়াল করে আসছেন। চিনপিংয়ের অনুপস্থিতি এতদিন ধরে চলে আসা সেই রেওয়াজের পরিপন্থীই নয় শুধু, ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির পথেও আগামী দিনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। তাঁদের মতে, কোনও পরিস্থিতিতেই যে সীমান্তে নমনীয় অবস্থান নেবে না চিন, জি-২০ সম্মেলনে না এসে, দিল্লিকে সেই বার্তাই দিলেন চিনপিং।

(Feed Source: abplive.com)