জল, খাবার, বিদ্যুৎ পর্যন্ত বন্ধ, হিতে বিপরীত হতে পারে, সতর্ক করলেন ওবামা

জল, খাবার, বিদ্যুৎ পর্যন্ত বন্ধ, হিতে বিপরীত হতে পারে, সতর্ক করলেন ওবামা
ওয়াশিংটন: গোড়াতেই হামাসের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে যুদ্ধ যেদিকে এগিয়েছে, তা নিয়ে এবার উদ্বেগ প্রকাশ করলেন আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিশেষ করে ইজরায়েলের একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে আপত্তি জানালেন তিনি। ইজরায়েল যা করছে, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে, এমনকি আরও বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে মন্তব্য করলেন ওবামা। (Barack Obama on Israel-Palestine)

গত দুই সপ্তাহ ধরে ইজরায়েলে এবং প্যালেস্তাইনের হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে ইজরায়েলকে সমর্থন করছে আমেরিকা। অস্ত্রশস্ত্র, অর্থের জোগান দেওয়ার পাশাপাশি, সাহস জোগাতে সে দেশে পৌঁছেও যান দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইজরায়েল আত্মরক্ষা করছে, হামাসকে ‘শয়তান’, ‘অশুভ শক্তি’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এযাবৎ আমেরিকার এই অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে আসছিলেন ওবামাও। (Israel Palestine War)

কিন্তু সোমবার ইজরায়েলের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। বিবৃতি জারি করে বলেন, ‘গাজায় বন্দি নিরীহ নাগরিকদের খাবার, জল, বিদ্যুৎ না দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইজরায়েল সরকার, তাতে মানবিক সঙ্কট আরও ঘোরাল হবে না শুধু, আগামী কয়েক প্রজন্ম ধরে প্যালেস্তিনীয়দের আচরণ আরও কট্টর করে তুলবে, ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক সমর্থন হারাবে ইজরায়েল, শত্রুপক্ষের হাতে পরিচালিত হবে, যা ওই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি এবং স্থিতিশীলতা অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে’।

ওবামার কথায়, ‘যুদ্ধকালে অনেক সময় আমেরিকা নিজেও মূল্যবোধ থেকে ছিটকে গিয়েছে, ৯/১১ হামলার পর আল-কায়দার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সময় আমেরিকার সরকার নিজের শরিকদের কথা শুনতেও রাজি ছিল না।পরিকল্পনামাফিক ইজরায়েলি নাগরিকদের গণহত্যার ঘটনায় এই মুহূর্তে ইহুদিদের নিপীড়ণের নিদারুণ স্মৃতি ফিরে আসছে। তাই হামাসকে নিকেশের পক্ষে ইজরায়েলি নাগরিকদের অনেকে কেন সওয়াল করছেন, তা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু গাজায় হামাস ইচ্ছাকৃত ভাবেই সাধারণের সঙ্গে মিশে কয়েছে। সেখানকার সাধারণ মানুষদের বিপদ বাড়িয়ে তুলেছে তারা। কিন্তু ইজরায়েলি সেনা যেভাবে জীবনের মূল্য অস্বীকার করে চলেছে, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। ইতিমধ্যেই গাজায় বোমার আঘাতে হাজার হাজার প্যালেস্তিনীয় প্রাণ হারিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে বহু শিশুও রয়েছে। শত শত মানুষ বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন’।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ইজরায়েলস এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। তাতে এখনও পর্যন্ত ১৪০০ নিরীহ ইজরায়েলি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। ইজরায়েলি হামলায় গাজায় মারা গিয়েছেন ৫০০০-এর বেশি মানুষ। যুদ্ধের সূচনাপর্বে ইজরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে অনেকে সমর্থন করলেও, পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে ইজরায়েলের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকেই। ওবামাও এবার মুখ খুললেন সেই নিয়ে।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন দীর্ঘ আট বছর ওবামার ভাইস ছিলেন বাইডেন। তাঁরা পরস্পরের ভাল বন্ধু বলেও কথিত আছে। হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেওয়ার পর সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে মোটামুটি সরিয়েই রেখেছেন ওবামা। দেশের বিদেশনীতি বা জাতীয় স্বার্থ নিয়ে কোনও মন্তব্যও করেননি এযাবৎ। কিন্তু ইজরায়েলের ভূমিকা নিয়ে এবার মুখ খুললেন তিনি।

২০১৪ সালে ওবামা যখন ক্ষমতায়, সেই সময়ও ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে যুদ্ধ বাধে। লাশের স্তূপ জমা হয় গাজায়। সেই সময় হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করলেও, লাগাতার রকেট হামলায় নিরীহ প্যালেস্তাইনের লাশ জমা হতে শুরু করলে ইজরায়েলকে সংযত হতে বলেছিলেন ওবামা। ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে শান্তিস্থাপনেও উদ্যোগী হয়েছিলেন ওবামা, কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয়নি।

২০২১ সালের গোড়ায় ক্ষমতায় আসার পর বাইডেন যদিও নতুন করে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে কোনও আলোচনা বা পদক্ষেপ করেননি। বরং দুই তরফেই পরিস্থিতি অস্থির, আলোচনার পক্ষে উপযুক্ত সময় নয় বলে, বার বার যুক্তি দিয়েছে তাঁর সরকার। ওবামা ক্ষমতায় থাকাকালীন বেঞ্জামিন নেতানইয়াহুর সঙ্গে একাধিক বার মতবিরোধ বাধে ওবামার। সেই সময় বাইডেনই মধ্যস্থতা করতেন। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ওবামা কিছু বাইডেনকে বলেছেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়।

(Feed Source: abplive.com)