‘মুখরক্ষার চেষ্টা’, ‘আরও আগে হলে…’, বিশ্বভারতীর ফলক বিতর্কে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে প্রতিক্রিয়া

‘মুখরক্ষার চেষ্টা’, ‘আরও আগে হলে…’, বিশ্বভারতীর ফলক বিতর্কে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে প্রতিক্রিয়া
কলকাতা: বিশ্বভারতীর ফলক বিতর্কে অবশেষে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক জানিয়েছে, ফলকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা উপাচার্যের নাম রাখা যাবে না, নতুন ফলক বসাতে হবে। বিতর্কের মুখে পড়েই কি শেষ মেশ বিষয়টিতে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করল, উঠছে প্রশ্ন। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলার রাজনীতিকরাও। (Visva Bharati Plaque Row)

UNESCO হেরিটেজ ঘোষিত হওয়ার পর বিশ্বভারতীর প্রাঙ্গনে একাধিক নয়া ফলক বসানো হয়। কিন্তু কোনওটিতেই বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথের উল্লেখ নেই. বরং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং সদ্য মেয়াদোত্তীর্ণ বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম উপাচার্য হিসেবে লেখা ছিল। সেই নিয়ে বিতর্ক শুরু হতে সময় লাগেনি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনের ডাক দেন যেমন, তেমনই বিজেপি নেতা অনুপম হাজরাও বিষয়টি নিয়ে সরব হন। বাম-কংগ্রেসও এ নিয়ে প্রতিবাদ জানায়। (Visva Bharati University)

তাই কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের পর সব দলই ফলক বিতর্ক নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা এবিপি আনন্দে বলেন, “কেন্দ্রের এই নির্দেশকে স্বাগত জানাই। আশাকরি বর্তমান উপাচার্য যথেষ্ট বিজ্ঞ। কমিটি গঠন করে, আশ্রমিক, প্রাক্তনী, কবিগুরুর ভাবধারায় যাঁরা অনুপ্রাণিত, তাঁদের আবেগকে সম্মান দিয়ে মানানসই ফলক বসাবেন। ফলকের নকশা কী হবে, তাতে কী লেখা থাকবে, আশাকরি কারও ভাবাবেগে আঘাত না করেই সিদ্ধান্ত নেবেন।”

বিজেপি-র রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। আরও আগে হলে ভাল হতো। কবিগুরুর নাম নিয়ে বিতর্ক হোক, সেই বিতর্ক রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়িতে পরিণত হোক, কোনও অবস্থাতেই তা চাই না আমরা। বিশ্বভারতী, রবীন্দ্রনাথ এবং ফলক নিয়ে এই বিতর্ক অনভেপ্রেত। এটা রবীন্দ্রপ্রেমীদের জন্য অনভিপ্রেত।”

কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায়ের বক্তব্য, “বিলম্বিত বোধোদয়। দেরিতে হলেও, বোধোদয় হল। এটাই তো হওয়া উচিত? প্রথমে অযোগ্যদের দায়িত্ব না দিলে, এই বিতর্কই হতো না। রবীন্দ্রনাথের নিজের জায়গায়, তাঁরই নাম নেই! এটা আশ্চর্যজনক বিষয়। আসলে নাম পরিবর্তন, ইতিহাস মুছে দেওয়া কেন্দ্রের একটা প্রথা। ওরা আরএসএস, নাগপুরের ইতিহাস পড়াতে চায় সকলকে। আজ যা করল, অনেক আগেই তা করা উচিত ছিল। নরেন্দ্র মোদি এবং শিক্ষামন্ত্রকের উচিত ক্ষমা চাওয়া।”

ফলক বিতর্কে শান্তিনিকেতনে টানা দুই সপ্তাহ আন্দোলন চালিয়েছে তৃণমূল। ফলক পাল্টানো না পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছিলেন মমতা। কেন্দ্রীয় নির্দেশ আসার পর তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “আগের উপাচার্য বিশ্বভারতীর মোদিকরণ করতে চেয়েছিলেন। রবীন্দ্রচর্চা থেকে সরে এসে, বিশ্বভারতীকে আরএসএস-এর চর্চা, মোদির জয়গান কেন্দ্রে পরিণত করতে চেয়েছিলেন উনি। বাংলা-সহ গোটা দেশে এই ফলক নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। তাতেই ফলক সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। এখন নিজেদের মুখরক্ষা করছে ওরা।”

বিশ্বভারতী সূত্রে খবর, গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক চিঠি দিয়ে ফলক পাল্টানোর নির্দেশ দেয়। বলা হয়, বর্তমানে যে ফলক আছে তা পাল্টাতে হবে। তার পরিবর্তে বসাতে হবে নতুন ফলক, যাতে আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রীর নাম থাকবে না। থাকবে না উপাচার্যের নামও। নতুন ফলকে কী লেখা হবে, তা ঠিক করতে কর্তৃপক্ষকে কমিটি গড়ার নির্দেশও দিয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক। শিক্ষামন্ত্রকের চিঠি পাওয়ার পরেই চার জন অধ্যাপককে নিয়ে কমিটি গড়েছে বিশ্বভারতী।

(Feed Source: abplive.com)