‘টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে গল্প করতেন ভাঙা বেঞ্চে বসে’, লিলি শোনালেন অজানা উত্তম-কথা

‘টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে গল্প করতেন ভাঙা বেঞ্চে বসে’, লিলি শোনালেন অজানা উত্তম-কথা

কলকাতা: তিনি যেন ইন্ডাস্ট্রির অভিভাবকের মতোই ছিলেন। সহকর্মী, জুনিয়রদের ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখা, হাত বাড়িয়ে দেওয়া সাহায্যের জন্য.. কিন্তু সবটাই নীরবে। হয়তো সেই কারণেই, মৃত্যুর এত বছর পরেও আজও তিনি সমান প্রাসঙ্গিক। আজও তাঁর মৃত্যু যেন মানতে চান না কেউ। সবাই তো মহানায়কের গল্প বলেন, কিন্তু তাঁর মৃত্যুদিনে মানুষ উত্তমকুমারকে খুঁজল এবিপি লাইভ (ABP Live)। লিলি চক্রবর্তীর চোখ দিয়ে।

একাধিক কাজ করেছেন উত্তমকুমারের সঙ্গে, তবে একাধিক কাজ হাতছাড়াও হয়েছে তাঁর। উত্তমকুমারের মৃত্যুদিনে সেই স্মৃতি রোমন্থন করে লিলি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘এখনও স্টুডিওতে ঢুকলে উত্তমদার গন্ধ পাই। উনি নেই, এ কথা আমি বিশ্বাস করি না। খ্যাতির শিখরে পৌঁছেও উত্তমকুমার যে ইন্ডাস্ট্রির কতটা কাছের মানুষ, কতটা অভিভাবক ছিলেন তা কেবল জানে টলিপাড়ার স্টুডিওগুলোও। কাজের স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী ছিলেন উত্তমকুমার। আমায় একাধিক চরিত্র অফার করেছিলেন উনি, তবে পরে সেই চরিত্রর জন্যও ওঁর কাছে এসে অন্যরা জোড়াজুড়ি করেছে সেই চরিত্রটা করবে বলে। মুখ ফেরাতে পারেননি, চরিত্রটা তাঁকে দিয়ে দিয়েছেন উত্তমদা। তবে সে কথা আমাকে বলেও দিতেন। আমার মতো সেই সময়ের জুনিয়র আর্টিস্টদের কাছে ওঁর এত কথা ভেঙে না বললেও চলত।’

উত্তমকুমার ছিলেন অভিভাবকের মতোই, ভুল হলে মৃদু বকুনিও দিতেন। একটা ঘটনার কথা খুব মনে পড়ে লিলি চক্রবর্তীর। বলছেন, ‘আমার এখনও মনে আছে, মুম্বই গিয়ে আমি খুব স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে গিয়েছিলাম। সারাদিন ফলের রস খেয়ে থাকতাম। তার ওপর হয়েছিল পান খাওয়ার নেশা। একবার উত্তমদার একটা ছবিতে শ্যুটিং করছি.. বেণুদিও ছিলেন (সুপ্রিয়াদেবী)। হঠাৎ আমায় বললেন পান খাবি? পান আনানো হল, সঙ্গে জর্দা। সেই জর্দার পরিমাণ না বুঝে একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছিলাম আমি। ব্যাস.. মাথা ঘুরে গেল। সেটেই শুয়ে পড়লাম। বেণুদি অনেক কষ্টে আমায় ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে মেক আপ ঘরে শুইয়ে দিলেন। শুনে ঘরে চলে এসেছিলেন উত্তমদা। মৃদু ভর্ৎসনার সুরে আমায় বলেছিলেন, ‘যা সহ্য হয় না, খাও কেন’? আমি তো তখন লজ্জায় , ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছি। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। উঠেই খুব খিদে পেল.. শুনলাম উত্তমকুমার নিজে বলেছিলেন আমার খাবার আলাদা রে ঢাকা দিয়ে রাখতে.. যাতে ঠাণ্ডা না হয়ে যায়। আর আমি ঘুম থেকে উঠলে যেন আমায় গরম করে খাবারটা দেওয়া হয়। এতটাই খেয়াল রাখতেন উনি আমাদের সবার।’

সবাইকে নিয়ে, সবার সঙ্গে থাকতে ভালবাসতেন উত্তমকুমার। কেবল অভিনেতা অভিনেত্রী নন, টেকনিশিয়ানদেরও। লিলি চক্রবর্তী বলছেন, ‘উত্তমকুমার দানধ্যান করতেন সেটা অনেকেই জানতেন, কিন্তু কাকে কত টাকা দিতেন তা কেউ জানতে পারতেন না। কোন টেকনিশিয়ানের মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না, কোন টেকনিশিয়ানের বাড়িতে অসুস্থ মা রয়েছে.. সমস্ত জানতেন উত্তমকুমার। ওঁকে দেখেছি, স্টুডিওতে ঢুকে অনায়াসে একজন টেকনিশিয়ানের কাঁধে হাত গিয়ে কথা বলতেন। তাঁর বাড়ির খবর নিতেন। ভাঙা বেঞ্চে বসেই গল্প জুড়ে দিতেন সবার সঙ্গে। উত্তমকুমারকে দেখেছি.. মহানায়ক হয়েও কীভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হয় নিজের মানুষ সত্ত্বাকে। এটা সত্যিই ওঁর থেকে শেখার।’

(Feed Source: abplive.com)