সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: রাজনৈতিক জগতে নক্ষত্রপতন। বৃহস্পতিবার বৃষ্টিভেজা সকালে কলকাতার পাম অ্যাভিনিউয়ে নিজ বাসভবনেই প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharjee)। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সাহিত্য, শিল্প সংস্কৃতি জগতের একাধিক শিল্পী।
চন্দন সেন- পশ্চিমবঙ্গের অত্যন্ত সংবেদনশীল শিল্পী মারা গেলেন। রাজনৈতিক নেতারা কী বলবেন জানি না তবে ভবিষ্যতে ইতিহাস সাক্ষী দেবে যে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ বেকার ছেলেমেয়েদের জন্য উনি যে কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সেটা সঠিক ছিল। আমার বাবার নাম কিশলয় সেন, মায়ের নাম সন্ধ্যা সেন। আমরা ট্যাংরা হাউজ এস্টেটে একই ব্লকে থাকতাম। আমার বাবা-মা যখন আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকতেন তখন আমাকে ওদের বাড়ি রাখা হত। ফলত আমার শৈশব কৈশোর ওঁর বাড়িতে কেটেছে।
কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়- অবশ্যই দুঃখের খবর। তাঁর হাত ধরে পশ্চিমবঙ্গের হাল ফেরানোর একটি সুযোগ আমরা পেয়েছিলাম। বাংলার ইতিহাস বুদ্ধবাবুকে মনে রাখবেন। একজন সত্, ভালোমানুষ, একজন একনিষ্ঠ বামপন্থী নেতা চলে গেলেন।
রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়- শরীর খারাপ ছিল সেই খবর তো পেতাম, তাও ছিলেন বটগাছের মতো। তাঁর ছায়ার নীচে দুদণ্ড বসা যায়, কথা বলা যায়, সেই বটগাছটা চলে গেল।
অনীক দত্ত- গভীর অন্ধকারে কোথাও এককোণে নিভৃতে একটা ছোট প্রদীপ জ্বলছিল। সেটাও নিভে গেল। শোক নয়, ক্রোধ হচ্ছে । ভয়ংকর ক্রোধ।
সৌরভ পালোধি- আমি কথা বলার অবস্থায় নেই। পুরনো ছবি খুলে দেখছিলাম। শরীর খারাপ ছিল, কিন্তু আছেন এটাই বড় শক্তি ছিল। সেটা রইল না। আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর। কথায় কথায় আমরা উদাহরণ টানতে পারতাম। এই অসত্ বাজারে, যেখানে সবাই ব্যস্ত নিজেদের আখের গোছাতে সেখানে এরকম একটা উদাহরণ থাকা জরুরি, যাঁকে উদাহরণ হিসাবে আমরা আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারি। আমাদের পরের প্রজন্ম পেল না, তাদের গল্প বলব। কীভাবে আইটি সেক্টর গড়ে উঠল, কীভাবে একটা কারখানা গড়তে গিয়ে সরকার পড়ে গেল। আমরা তো দেখলাম। আমরা খানিকটা বেড়েও উঠলাম। ৯০ জুড়ে যাঁরা বড় হয়েছি, তারা তো দেখলাম। আমার মনে হচ্ছে, আমার ড্রয়িং রুম থেকে কেউ চলে গেল। আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি শুধু নয়, সামাজিক ক্ষতিও।
জীতু কমল- আজ থেকে আর কমরেড বলে আমায় নাইবা ডাকলেন। আর যদি ডেকেও ফেলেন, দয়া করে একটি বারের জন্য অনুমতি চাইবেন। সিপিআইএম রইলাম না আর,বুদ্ধপন্থী বলে রইলো আমার পরিচয়। সুবিধা অসুবিধা কোন কিছুই কিন্তু নিইনি কোনদিন। তাই পল্টিবাজ ধাপ্পাবাজ চিটিংবাজ ভাষাজ্ঞান শূন্য মন্তব্য নাইবা করলেন সিপিআইএম। আমার বন্ধু-আমার পথপ্রদর্শক-আমার ঈশ্বর বিদায়। বিদায় বন্ধু বিদায়…
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মূলত শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রাজ্যে ৩৪ বছরের বাম জমানার দ্বিতীয় ও শেষ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছিলেন পলিটব্যুরোরও সদস্য। এদিন সকালে প্রাতঃরাশও করেছিলেন বুদ্ধদেব। কিন্তু তারপরই অবস্থার অবনতি হয় বলে খবর। সকাল ৮টা বেজে ২০ মিনিটে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই জীবনাবসান হয় কমরেড বুদ্ধদেবের।
(Feed Source: zeenews.com)