দেশের তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি; উদ্বেগে চিকিৎসক মহল!

দেশের তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি; উদ্বেগে চিকিৎসক মহল!

কলকাতা: আগে সাধারণত মধ্য চল্লিশে পা রাখলেই হৃদরোগের ভ্রুকুটি দেখা যেত। তবে বর্তমানে ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদরোগে। যা রীতিমতো উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সারা বিশ্বে শুধু নয় ভারতেও কার্ডিওভাস্কুলার রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর দেশে এই রোগীর সমখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হচ্ছে শহুরে জীবনযাত্রাকে।

আসলে শহুরে জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মারাত্মক মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস, ব্যস্ত রোজনামচা। বিশেষ করে কলকাতায় কমবয়সী কার্ডিওভাস্কুলার রোগীর সংখ্যা উল্লেখোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ১৫ শতাংশ রোগীই ৪০ বছরের কমবয়সী।

তবে এই মূহূর্তে সবথেকে যে বিষয়টাকে গুরুত্ব দিতে হবে, সেটা হল অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস। এই অবস্থায় হৃদযন্ত্রে রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণকারী ভালভ দুর্বল এবং সংকীর্ণ হয়ে যায়। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, অবসন্ন ভাব এবং মাথা ঘোরানোর মতো উপসর্গ প্রকাশ পায়। সময়ে চিকিৎসা না করা হলে কিন্তু হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মারাত্মক জটিলতা তৈরি হতে পারে। ভারতে অ্যাওর্টিক ভালভ স্টেনোসিস হয় প্রায় ৭ শতাংশ। আর মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়।

অ্যাওর্টিক স্টেনোসিসের সঙ্গে লড়াই করার জন্য চিকিৎসকরা ট্রান্সক্যাথিটার অ্যাওর্টিক ভালভ রিপ্লেসমেন্ট (টিএভিআর)-এর পন্থা অবলম্বন করছেন। এই প্রক্রিয়া আবার ট্রান্সক্যাথিটার অ্যাওর্টিক ভালভ ইমপ্ল্যান্টেশন (টিএভিআই) নামে পরিচিত। এটা হল মিনিম্যালি ইনভেসিভ প্রক্রিয়া। ব্যথাও তেমন একটা থাকে না, আর সেরে ওঠাও যায় দ্রুত। ফলে হাসপাতালে বেশি দিন থাকতেও হয় না। অস্ত্রোপচারের দিন কিংবা তার পরের দিনই হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে যান রোগী।

কলকাতার এনএইচ রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্সেসের ডিরেক্টর এবং চিফ কার্ডিওলজিস্ট ডা. দেবদত্ত ভট্টাচার্য বলেন, “টিএভিআই কার্ডিয়াক ইন্টারভেনশনে আমূল পরিবর্তন এনেছে। একটা ছোট্ট ছেদ করেই এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যাওর্টিক ভালভ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। এর ফলে পুরনো ধারার ওপেন-হার্ট সার্জারির প্রয়োজন হয় না। ছোট্ট একটা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমেই স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বজায় রাখা সম্ভব। ফলে রোগীকে বেশি দিন হাসপাতালে থাকতে হয় না, দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন। আর এখানেই টিএভিআই-এর সার্থকতা।”

Dr Debdatta Battacharya, Sr Cardiologist, Narayana Hospital

কলকাতা তথা গোটা দেশের আরও একটি সমস্যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে চিকিৎসকদের। সেটি হল করোনারি আর্টারি ডিজিজ (সিএডি)। এই রোগের ক্ষেত্রে প্রধান রক্তবাহী ধমনীতে ব্লকেজ তৈরি হয়। ফলে হৃদযন্ত্রে রক্ত পৌঁছতে পারে না ঠিক ভাবে। যার জেরে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, রক্ত প্রবাহ হ্রাস এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা যায় না বললেই চলে, তবে পরের দিকে বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ প্রকট হয়।

এই রোগের ঝুঁকি কমাতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং নিয়মিত এক্সারসাইজ করাও আবশ্যক। এর পাশাপাশি রুটিন হার্ট হেলথ চেক-আপও জরুরি। এই রোগের চিকিৎসার মধ্যে অন্যতম হল করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি এবং স্টেন্ট রিপ্লেসমেন্ট। এটাও মিনিম্যালি ইনভেসিভ প্রক্রিয়া। বেলুন-সহ একটি পাতলা, ফ্লেক্সিবেল টিউব (ক্যাথিটার)-এর মাধ্যমে অবরুদ্ধ ধমনীর সংকীর্ণ অংশের ব্লকেজ খুলে দেওয়া হয়।

Dr Anjan Siotia, Director of Cardiology, in BM Birla Heart Research Centre, Kolkata Dr Anjan Siotia, Director of Cardiology, in BM Birla Heart Research Centre, Kolkata

কলকাতার বিএম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টারের ডিরেক্টর অফ কার্ডিওলজি ডা. অঞ্জন সায়োটিয়া বলেন, “অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস রোগীদের জন্য বায়োরিসোরেবল স্টেন্ট (বিআরএস)-এর পন্থা অবলম্বন করা হয়। এটা পার্সোনালাইজড। এক-এক রোগীর জন্য বিষয়টা এক-এক রকম। দীর্ঘস্থায়ী জটিলতাও কমে। ফলে রোগীও দীর্ঘ সময় ধরে সুস্থ থাকেন।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে হৃদরোগের চিকিৎসায় আমূল বদল এসেছে। নতুন করে আশার আলো দেখা যাচ্ছে রোগীদের। সময়ে রোগ ধরা পড়ে চিকিৎসা শুরু হলে হৃদরোগের ঝুঁকি তো কমানো যাবেই, সেই সঙ্গে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যও ভাল রাখা যাবে। তাই নিয়মিত হার্ট চেক-আপ করানো উচিত।

(Feed Source: news18.com)