জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্য়ুরো: আরজি কর হাসপাতালে চিকিত্সকের ধর্ষণ ও মৃত্যু (R G Kar Doctor Rape and Murder Case) ঘিরে উত্তাল গোটা রাজ্য। সব শ্রেণীর, সব পেশার মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। শনিবার আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল টালিগঞ্জের আর্টিস্ট ফোরাম (Artist Forum)। টলিগঞ্জের অনেক শিল্পীই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্য়, তবে এইদিন একেবারেই মুছে গেল রাজনৈতিক পরিচয়। একই সঙ্গে আন্দোলনের মঞ্চে দেখা গেল রঞ্জিত মল্লিক, দেব (Dev), ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত(Rituparna Sengupta), রূপা গঙ্গোপাধ্যায় (Roopa Ganguly), পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, পাপিয়া অধিকারী, বনি সেনগুপ্ত, কৌশানি মুখোপাধ্যায়, অঙ্কুশ হাজরা, চৈতী ঘোষাল, তনুশ্রী চক্রবর্তী, পাওলি দাম সহ আরও অনেককে। রাজনীতির উর্ধে উঠে অভিনেতা অভিনেত্রীদের এই প্রতিবাদের ছবি ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বিগত বেশ কয়েকদেশের বাইরে ছিলেন দেব। কেন তিনি প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন না তা নিয়ে উঠেছিল অনেক প্রশ্ন। অবশেষে দেশে ফিরে আর্টিস্ট ফোরামের গণ অবস্থানে শনিবার এলেন দেব। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিনেতা বলেন, ‘গোটা দেশ অপেক্ষায় আছে, আরজি কর কাণ্ডে যারা দোষী তাদের যেন ফাঁসি হয় এবং যারা যারা এই অপরাধে সাহায্য করেছে, মানে যারা তথ্য লোপাট ইত্যাদি করেছে তারা যেন যাবজ্জীবন সাজা পায়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, শুধুই কি আরজি কর? ১৪ দিনে ১৪০০-এর বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে গেল। মানুষের মধ্যে ভয় নেই? একটা ঘটনা নিয়ে এত আন্দোলন হচ্ছে, আমরা কিছুই করতে পারছি না? আমার মনে হয় সময় এসে গিয়েছে আমাদের সকলকে একত্রিত হয়ে এক্ষুনি ভারতে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট নিয়ে আসা উচিত।’
শুধু দেব নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানিয়ে ব্যাপক ট্রোলের মুখে পড়েন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। শনিবার অভিনেত্রী বলেন, ‘বিচার তো পেতেই হবে। বিচার না পেলে তো এত মানুষের সংগ্রাম বৃথা যাবে।’ পাশাপাশি তিনি জানান যে মহিলাদের নিরাপত্তার খাতিরে তাঁদের নাইট ডিউটি কমিয়ে দেওয়ার পরামর্শ, একেবারেই অযৌক্তিক। এদিন মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে সরব হন পাওলি। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা আমার বাড়ি থেকে শুরু হবে। রাস্তায় বেরোলে নিরাপত্তা চাই। কাজের ক্ষেত্রে যেন শান্তিতে কাজ করতে পারি সেই নিরাপত্তা চাই। কেন এই প্রশ্ন উঠবে? এরকম একটা জঘন্য ঘটনা, কলকাতার বুকে, আমার প্রিয় শহরে, আমার বড় হয়ে ওঠার শহরে ভাবতেই পারছি না। আমরা নিজেদের শিক্ষিত বলে জাহির করি। সেখানে এমন ঘটনা ভাবা যায় না। আরও একটি বিষয়, আমাদের আরও কঠিন আইনের প্রয়োজন। আর সেগুলো নির্যাতিতাদের পক্ষে এক্ষুনি কার্যকর হওয়া প্রয়োজন।’
শনিবারের মঞ্চ থেকে যে ছবিটি প্রবল গতিতে ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তা হল দেবের হাত ধরে থাকা রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি। তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় যতই ভিন্ন হোক, আর্টিস্টের ফোরামের মঞ্চে তাঁরা শুধু অভিনেতা হয়ে উঠলেন। এদিন রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি গোটা দেশের হিসাব রাখতে পারি না। বছরে এই রাজ্যে ৩০-৩৫ হাজার নারী নির্যাতনের ঘটনা হয়। আজ আমরা সকলে একত্রিত হয়েছি। এই রাজ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অপেক্ষা তো আমরা করেই আছি। কিন্তু যে কোনও একটা রাজ্য নয়। আমরা সকলে চাই, প্রত্যেক জায়গায় এমন ঘটনার প্রতিবাদে আমরা একত্রিত হব। এই মুহূর্তে কোনও ভাবেই রাজনৈতিক দল, জাত, ধর্ম ভাষার হিসেব করব না। যে রাজ্যেই যে অপরাধী হবে, তার শাস্তির দাবিতে সকলে একত্রিত হবে। কোনটা বিজেপির রাজ্য, কোনটা তৃণমূলের রাজ্য, কোনটা সিপিআইএম-এর রাজ্য, তা দেখা হবে না। কেউ বেছে বেছে প্রতিবাদ করবে না।’
এদিনের প্রতিবাদে এসে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘সেই গাফিলতির দায় কিন্তু প্রশাসনকেই স্বীকার করতে হবে যে হ্যাঁ, আমাদের গাফিলতির জন্যই এটা ঘটতে পেরেছে। হ্যাঁ, গাফিলতি আছে সিস্টেমের মধ্যে। আজ যে ঘটনাটা ঘটল সেটা কলকাতার সম্মানকে ভুলন্ঠিত করে দিল। কলকাতাবাসী হিসেবে সেটা আমার কাছে খুবই লজ্জার। আর সেই জন্যই আমি ১০০ বার আমার প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি চাইবই।’
(Feed Source: zeenews.com)