ইহুদি হত্যাকারী নাৎজি নেতাকে অপহরণ থেকে কানে বিষপ্রয়োগ, ইজরায়েলের Mossad যে কারণে সেরা

ইহুদি হত্যাকারী নাৎজি নেতাকে অপহরণ থেকে কানে বিষপ্রয়োগ, ইজরায়েলের Mossad যে কারণে সেরা

নয়াদিল্লি: মান্ধাতা আমলের পেজার মানুষ মারার অস্ত্র হয়ে উঠল। লেবানেন একসঙ্গে ৩০০০ পেজার বিস্ফোরণ ঘটে মারা গিয়েছেন অনেকে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন প্রায় ২০০। লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হেজবোল্লাকে নিশানা করে ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা Mossad এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। (Mossad of Israel)

গোটা ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। কারণ তাইওয়ানের একটি সংস্থা থেকে কয়েক মাস আগে ৫০০০ পেজার কিনেছিল হেজবোল্লা। শোনা যাচ্ছে, সেই পেজার হেজবোল্লার হাতে এসে পৌঁছনোর আগেই কারিকুরি করে Mossad. ব্যাটারির গায়ে তিন গ্রাম বিস্ফোরক বসিয়ে দেয়। একটি চিপও বসানো হয়, যেখান থেকে সরাসরি সঙ্কেত চলে যেত Mossad-এর কাছে। সেই সঙ্কেতের মাধ্যমেই ব্যাটারিতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। (Lebanon Pager Explosions)

বহু দূর থেকে কী করে Mossad এই ঘটনা ঘটাল, তা ভেবে কিনারা করতে পারছেন না অনেকেই। Mossad যদিও এখনও পর্যন্ত দায়স্বীকার করেনি। কিন্তু গোটা বিষয়টিকেই Mossad-এর ‘বাঁয়ে হাত কা খেল’ বলে মনে করছেন অনেকে। পৃথিবীর সেরা গুপ্তর সংস্থা হিসেবে গন্য হয় ইজরায়েলের Mossad. শত্রুপক্ষ নিধনে তাদের জুড়ি নেই। শত্রুদেশে প্রবেশ করে, সেখানকার নিরাপত্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কার্যসিদ্ধি করে দেখিয়েছে তারা। Mossad ছাড়াও আরও দু’টি গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। গত কয়েক বছরে এমন বেশ কিছু উদাহরণ তৈরি করেছে ইজরায়েল। 

    • ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বেইরুট এবং তেহরানে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মৃত্যু হয় পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনীতির দুই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ে খুন হন ইরানের রাজধানী তেহরানে। ইজরায়েলই তাঁকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করে হামাস। সেই হামলার দায় যদিও ইজরায়েল স্বীকার করেনি। কিন্তু  বেইরুটে হেজবোল্লা নেতা ফুয়াদ শকুরকে খুনের কথা স্বীকার করে তারা। 
    • Mossad-এর সবচেয়ে রুদ্ধশ্বাস অভিযান হিসেবে আজও গন্য হয় অ্যাডল্ফ আইকম্যানের অপহরণ। জার্মানিতে ইহুদি হত্যার সঙ্গে যুক্ত, প্রাক্তন নাৎসি নেতা অ্যাডল্ফ, ১৯৪৪ সালে জার্মানি ছেড়ে পালিয়ে আর্জেন্টিনায় আশ্রয় নেন। পরিচয় গোপন করে সেখানে বাস করছিলেন তিনি। কোনও ভাবে ১৯৫৯ সাল নাগাদ সেই খবর কানে পৌঁছয় তদানীন্তন ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেন গুরিয়নের কানে। Mossad-এর তৎকালীন প্রধান  ইসের হারেলকে তিনি নির্দেশ দেন অ্যাডল্ফকে ধরে আনতে। ১৯৬০ সালের ১১ মে আর্জেন্টিনায় অ্যাডল্ফের খোঁজ পায় Mossad-এর আট জনের দল। অপহরণ করে তাঁকে নিয়ে ন’দিনের মধ্যে তাঁকে ইজরায়েল পৌঁছয় তারা। ১৯৬২ সালের ১ জুন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় অ্যাডল্ফের। 
    • ১৯৭২ সালে মিউনিখ গণহত্যা ঘটে। প্যালেস্তিনীয় জঙ্গি সংগঠন Black September ইজরায়েলি অলিম্পিক দলের কিছু খেলোয়াড়কে অপহরণের পর খুন করে। সেই সময় ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন গোল্ডা মির।। তিনি এই ঘটনায় যুক্ত সকলকে হত্যার নির্দেশ দেন। ১৯৭৩ সালে রাতের অন্ধকারে বেইরুটের অ্যাপার্টমেন্টে খুন হন প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের বেশ কয়েকজন কমান্ডার।  ইহুদ বারাক সেই হামলায় নেতৃত্ব দেন। সেই সময় ইজরায়েলি সেনার শীর্ষ কমান্ডার ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে দেশের প্রধানমন্ত্রীও হন। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে ঘটনায় যুক্ত প্রত্যেক জঙ্গিকে চিহ্নিত করে হত্যা করে Mossad. 
    • ‘অপারেশন মোজেস’ কার্যকর হয় ১৯৮৪ সালে। ইথিওপিয়ায় তখন গৃহযুদ্ধ চরমে। সেখানে বসকারী ইহুদিরা প্রাণভয় নিয়ে বেঁচে রয়েছেন। আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা CIA-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইহুদিদের উদ্ধার করে আনার কাজে নামে Mossad. সকলের নজরদারি এড়িয়ে, ৩০টি বিমানে করে প্রায় ৮০০০ ইহুদিকে ইথিওপিয়া থেকে উদ্ধার করে তারা। 
    • ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করতেন সৈয়দ রাজি মৌসভি। সিরিয়া থেকে কার্য পরিচালনা করতেন তিনি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে দামাস্কাসে ড্রোন হামলায় মৃত্যু হয় তাঁর, যার জন্য ইজরায়েলকেই দায়ী করে ইরান।
    • ২০২১ সালে ইরানের মধ্যভাগে, মাটির নীচে একটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে সাইবার হানা চলে। চারিদিক অন্ধকার হয়ে যায়। ইরান দাবি করে, বিস্ফোরক ভর্তি ড্রোন উড়িয়ে হামলা চালায় ইজরায়েল। এর পরও একাধিক বার ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে ইজরায়েলি হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। 
      ২০২০ সালে ইরানের শীর্ষস্থানীয় পরমাণু গবেষক মহসেন ফখরিজাদে মারা যান। তেহরানের রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সেই সময় রিমোট নিয়ন্ত্রিত মেশিন গান থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চলে। এর দায়ও ইজরায়েলের উপর বর্তায়। 
    • ২০১০ সালে ইরানের পরমাণু গবেষণাকেন্দ্রের কম্পিউটারে Stuxnet নামের ভাইরাসের খোঁজ মেলে। ওই ভাইরাস ইরানের পরমাণু অস্ত্রের যাবতীয় ফর্মুলা ঘেঁটে দেয় এবং বহু নথি নষ্ট করে দেয়। আমেরিকা এবং ইজরায়েল মিলে সেই হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। 
    • ২০১০ সালেই হামাসের তৎকালীন শীর্ষনেতা মাহমুদ আল-মাবহু দুবাইয়ের হোটেলে মারা যান। Mossad-এর এজেন্টরা হোটেলে ঢুকে তাঁকে হত্যা করেন বলে জানা যায়। ইজরায়েল যদিও অভিযোগ স্বীকার করেনি। পরবর্তীতে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সামনে এলে, পর্যটক সেজে ২৬ জনের দলকে, ভোল পাল্টে হোটেলে ঢুকতে দেখা যায়।
    • ২০০৮ সালে হেজবোল্লার সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান ইমাদ মুঘনিয়ে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে মারা যান। বিস্ফোরণে উড়ে যায় তাঁর গাড়িটি। লেবাননের গৃহযুদ্ধে আত্মঘাতী বোমা জোগাড় থেকে ১৯৮৫ সালে TWA বিমান হাইজ্যাকে নাম জড়িয়েছিল তাঁর। ওই বিমান হাইজ্যাকে আমেরিকার নৌবাহিনীর এক আধিকারিকের স্ত্রী মারা যান। ইমাদকে ইজরায়েলই খুন করেছে বলে অভিযোগ তোলে হেজবোল্লা। ২০১৫ সালে ইজরায়েলি হানায় মারা যান ইমাদের স্ত্রী জিহাদও। 
    • ২০০৪ সালে হামাসের ধর্মগুরু আহমেদ ইয়াসিন ইজরায়েলি হেলিকপ্টার হানায় মারা যান। ছোট থেকেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছিলেন ইয়াসিন। হুইল চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তাঁকে। ১৯৮৭ সালে হামাসের প্রতিষ্ঠা হলে, তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ইয়াসিনের উত্তরাধিকার আবদেল আজিজ রনতিসি এর একমাস পর ইজরায়েলি হানায় মারা যান।
    • ১৯৯৭ সালে জর্ডানের আম্মানে তদানীন্তন হামাস নেতা খালেদ মাশালকে হত্যার চেষ্টা করে Mossad. কানাডার ভুয়ো পাসপোর্ট নিয়ে জর্ডানে প্রবেশ করেন সংস্থার দুই এজেন্ট। খালেদের কানের কাছে একটি যন্ত্র ধরেন তাঁরা, তার মাধ্যমে বিষপ্রয়োগ করা হয় শরীরে। ওই দুই এজেন্ট ধরা পড়ে যান। সেই সময় জর্ডানের রাজা শান্তিচুক্তি ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন ইজরায়েলকে। খালেদ মারা গেলে চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসবেন বলে জানান। এতে নিজে থেকে অ্যান্টিডোট পাঠায় ইজরায়েল, যাতে বেঁচে যান খালেদ। দেশে ফিরে যান দুই ইজরায়েলি নেতা। খালেদ এখনও বেঁচে, হামাসকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
    • হামাসের হয়ে বোমা, অস্ত্র তৈরি করতেন ইয়াহিয়া আয়াশ। ‘ইঞ্জিনিয়ার’ নামে পরিচিত ছিলেন। গাজায় বসা ছিল তাঁর। কোনও ভাবে তাঁর ফোনে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে দেয় ইজরায়েল। বাবাকে ফোন করতে উঠেছিলেন ইয়াহিয়া। সেই সময় তীব্র বিস্ফোর ঘটলে মারা যান। ইয়াহিয়ার মৃত্যুর পর ইজরায়েলে পর পর বেশ কয়েকটি বাসে বিস্ফোর ঘটে। 
    • ১৯৮৮ সালে প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের সামরিক প্রধান খলিল আল-ওয়াজির টিউনিশিয়ায় খুন হন। তিনি আবু জিহাদ নামে পরিচিত ছিলেন। সংগঠনের প্রধান ইয়াসের আরাফতের ডেপুটি ছিলেন তিনি। ২০১২ সালে সেই হত্যার বিষয়টি সামনে আসে। 

(Feed Source: abplive.com)