Exclusive Pankaj Tripathi: ‘মনের বাঘকে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি,ভাল অভিনেতা নয়,ভাল মানুষ হওয়ার লড়াই’ পঙ্কজ ত্রিপাঠী

Exclusive Pankaj Tripathi: ‘মনের বাঘকে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি,ভাল অভিনেতা নয়,ভাল মানুষ হওয়ার লড়াই’ পঙ্কজ ত্রিপাঠী

সৌমিতা মুখোপাধ্যায়: চাষি ও পুরোহিত পরিবারের ছেলে কিন্তু পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে অভিনয়কেই নিজের পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন তিনি। খুব কম বয়সেই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন যে, তিনি প্রেম করে বিয়ে করবেন কারণ যে গ্রামে তিনি বড় হয়েছেন সেখানে তখনও অবধি কারোর লাভ ম্যারেজ হয়নি। বরাবরই ছক ভাঙা পথের পথিক তিনি। তাই তাঁর জীবন গাথা যে লার্জার দ্যান লাইফ হয়ে উঠবে তা তো নিয়তিই ছিল। তিনি হলেন অভিনয়ের জগতে ভারতের অন্যতম সেরা অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠী।

ক্লাস টেনে ঠিক করে ফেলেছিলেন লাভ ম্যারেজ করবেন এটা সত্যি?

পঙ্কজ ত্রিপাঠী: (হেসে) হ্যাঁ এটা সত্যি।

তার মানে আপনি ছোট থেকেই নিয়ম ভাঙতে চান? 

পঙ্কজ ত্রিপাঠী: হ্যাঁ কিন্তু ভেবেচিন্তে নিময় ভাঙিনি। একটু অন্যরকমভাবে ভাবতে চেয়েছিলাম। রুটিনের বাইরে কিছু করার পরিকল্পনা ছিল। তবে ইচ্ছাবশত রুল ব্রেকার ছিলাম না।

তাহলে কী এই কারণেই ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে পাস করেও আপনি প্রফেশনাল থিয়েটার আর্টিস্ট না হয়ে ক্যামেরার সামনে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন?

পঙ্কজ ত্রিপাঠী: হ্য়াঁ, এখানেও আমি নিয়ম ভেঙেছি। থিয়েটার করারই কথা ছিল কিন্তু ক্যামেরাকে বেছে নিই।

আপনার আগামী ছবি ‘শেরদিল’-এ একটি গ্রামের গল্প বলা হয়েছে, নিজের গ্রামের সঙ্গে মিল খুঁজে পান?

পঙ্কজ ত্রিপাঠী: প্রথম যখন ‘শেরদিল’-এর গল্প শুনি তখন আমি নিজের গ্রামের সঙ্গে রিলেট করতে পারি কারণ আমি নিজেও চাষ করেছি। আমাদের গ্রামের পাশে জঙ্গল ছিল না কিন্তু সেখানে অন্য প্রাণীর প্রকোপ ছিল, আবহাওয়ার প্রকোপ ছিল। কিন্তু আমি রিলেট করতে পেরেছি কারণ এই সমস্যাগুলো আমি জানি। মধ্যবিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষদের চাষবাস করতে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তা আমার জানা। আমি ১৫ বছর গ্রামে ছিলাম, দূষণ কী জানতামই না, তখন বুঝতেই পারিনি কত ভালো পরিবেশে বাস করছি। দিল্লি, মুম্বইয়ে এসে বুঝতে পারলাম গাছ, জঙ্গল কত মূল্যবান আর দূষণমুক্ত হাওয়া কত জরুরি। এই ছবিটাও জঙ্গলের উপকারিতার কথা বলে, মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সংঘাতের কারণ কী, সে কথা বলে। স্যাটারিকাল বা মজার ছলে কথাগুলো বলা হয়েছে ছবিতে।

এই ছবির মুখ্য চরিত্র গঙ্গারাম, গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান। সেই চরিত্রের সঙ্গে আপনার গ্রামের চেনা কোনও  মানুষের মিল রয়েছে?

পঙ্কজ ত্রিপাঠী: না, একজন দুজনকে চিনি যাঁদের মধ্যে এই ধরনের জেদ রয়েছে। আমার গ্রামে এরকম মানুষ আছে তাঁদের মধ্যে এই ধরনের জেদ রয়েছে কিন্তু তাঁদের রেফারেন্স নেই এই চরিত্রে। এই চরিত্রটা কাল্পনিক। সৃজিতদা আমায় যা স্ক্রিপ্ট দিয়েছেন, যা গাইড করেছেন, সেভাবেই চলেছি।

আপনি তো বলেন যেকোনো চরিত্রের আত্মা জানা জরুরি, তারপর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, এই চরিত্রটি কীভাবে তৈরি করলেন নিজের মধ্যে?

পঙ্কজ ত্রিপাঠী: এই চরিত্রের বৈশিষ্ঠ্য, গঙ্গারাম খুবই সাহসী। এ সমাজের জন্য, নিজের গ্রামের জন্য গঙ্গারাম যে বলিদান দিতে পারে, আমি পঙ্কজ ত্রিপাঠী হয়তো সেই বলিদান দিতে পারব না। আমি মনে করি যে চরিত্র ও গল্প অভিনেতার থেকে অনেক বড় হয়। এই গঙ্গারামও আমার থেকে অনেক বড়।

গ্রামের কথা বলতে একটা কথা মনে পড়ল, আপনার গ্রামের সিনেমা হলে নাকি আপনার ছোট থেকেই ফ্রি এন্ট্রি ছিল?

পঙ্কজ ত্রিপাঠী: হ্যাঁ, সিনেমাহলের গার্ডের বাড়িতে পুজো করতে গিয়েছিলাম। আমায় দক্ষিণা না দিয়ে বলে, যেকোনও সময় সিনেমা দেখতে এসো, টিকিট কাটতে হবে না। ভুলে গেলে মনে করিয়ে দেবে যে, তুমি পন্ডিতজির ছেলে। তোমার এন্ট্রি ফ্রি। তখন তো জানতামই না যে একদিন আমি সিনেমা করব।

তাহলে কি অভিনয় আপনার নিয়তি?

পঙ্কজ ত্রিপাঠী: হ্যাঁ একদম। নিয়তি তো বটেই। তখন তো ভাবিওনি যে আমি সিনেমা করব। একটা সিনেমাহলের পুজোতে গিয়েছিলাম আমি, ‘জয় সন্তোষী মা’ সিনেমা দেখানো হয়েছিল। আমার পিতাজি পুজো করেছিলেন। পুজোর পর প্রজেকশন রুমে গিয়ে দেখেছিলাম কোথা থেকে সিনেমার রোল চালানো হয়। তখন আমার ১১ বছর বয়স। তখন আর কোথায় ভেবেছিলাম যে এই পর্দায় একদিন আমাকেই দেখা যাবে। জীবন আমাদের অনেক সারপ্রাইজ দেয়। নিয়তি কোথায় নিয়ে যাবে, কেউ জানে না।

ট্রেলারে আপনি গ্রামের লোককে বাঘের সামনে যেতে বলছেন, কখনও কেউ আপনাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলেছে যা বাঘের সামনে পড়ার সমান?

পঙ্কজ ত্রিপাঠী: না এরকম কিছু ঘটেনি। তবে এই ছবিতে একটা সংলাপ আছে, শেরদিল কে? যাঁর পেট ভরে যাওয়ার পর আর শিকার করে না সেই আসল শের। যে সন্তুষ্ট সেই শেরদিল।

আপনি কি শেরদিল, আপনি কি সন্তুষ্ট?

পঙ্কজ ত্রিপাঠী: আমি খুব একটা আগামীর চিন্তা করিনা। নিজের যা কাজ অর্থাৎ অভিনয় ১০০ শতাংশ করি। তারপর বাকিটা ছেড়ে দিই। আমার চাহিদা ও প্রযোজনীয়তা সীমিত। সাধারণ থাকতেই আনন্দ পাই। অভিনয়ের খিদে তো মেটে না, যেকোনও চরিত্রেই মনে হয় কিছু একটা কমতি হয়েছে, পরের ছবিতে আরও ভালো করব। শিল্পীর এই খোঁজ তো আজীবনের। কিন্তু মানুষ হিসাবে আমি সন্তুষ্ট। বাহ্যিক চাকচিক্য আমায় প্রভাবিত করে না।

 ‘মনের বাঘ’ যেটা প্রত্যেক মানুষের ভেতরে থাকে যে নানা রাজনৈতিক সামাজিক বিষয়ে অন্যকে আক্রমণ করে, যে আপনার মধ্যেও রয়েছে, সেই মনের বাঘ কীভাবে কন্ট্রোল রাখা যায়? 

পঙ্কজ ত্রিপাঠী: আপনি ঠিকই বলেছেন, মনের বাঘ থাকে। আমাদের মধ্যে সবরকমের ভাব থাকে। আমরা মানুষ তাই আমাদের মধ্যে লোভ, লালসা, ক্রোধ সবই আছে। কিন্তু আমাদের অভিভাবকেরা বরাবরই বলেছেন যে, এগুলো বরাবরই নিজেদের কন্ট্রোলে রাখতে হবে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলেছেন। যেগুলো খামতি, সেগুলো আরও কম করতে বলেছেন। তাই নিজের মনের বাঘকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, মনে রাখব কিছু করতে হলে ভালো কিছু করো, কারোর ক্ষতি করো না,কারোর জন্য বাজে ভেবো না। আমি এই চিন্তাগুলো মাথায় রাখি। ভালো অভিনেতা হতে পারি কি না পারি সেটার লড়াই নেই, ভালো মানুষ হওয়ার লড়াই জারি। আমি চাই লোকে বলুক আমি ভালো মানুষ। ভালো অভিনেতার থেকেও ভালো মানুষ হওয়া জরুরি।

আপনি কবে বাংলা সিনেমা করবেন?

পঙ্কজ ত্রিপাঠী: যখন সৃজিতদা অফার দেবেন বা অন্য কোনও পরিচালক অফার দেবেন। তবে আমি বাংলা বুঝি পুরোপুরি কিন্তু সাবলীলভাবে বলতে পারি না। তাই ভাষার একটা সমস্যা আছে। বাংলা যদি পুরোপুরি ভালো বলতে পারি, তাহলে করব। আমার বাড়ির পরিবেশ পুরো বাঙালি পরিবারের মতো। সবাই বাংলায় কথা বলে। আমি সাবলীলভাবে বাংলা বলতে পারলেই বাংলা ছবি করব।

(Source: zeenews.com)