
Madhyamik Exam 2025: দিদা পরিচারিকা, বাবা নেই, মা কোথায় জানা নেই! তারপরেও ১৭-র পূজা যা সাহস দেখাল কুর্নিশ! কী করেছে এই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জানেন?
শারীরিকভাবে অক্ষম হলেও পূজা অদম্য ইচ্ছাশক্তির জ্বলন্ত উদাহরণ
দক্ষিণ দিনাজপুর: জন্ম থেকেই মূক ও বধির পূজা। বয়স মাত্র ১৬ বছর। মূলত ইশারাতেই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হয়। কিন্তু সেই মেয়ে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিচ্ছে এবছর। বালুরঘাট খাদিমপুর গার্লস হাই স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পূজা সিং।
মাধ্যমিক দেওয়ার যোগ্যতা অর্জনে তাঁর জীবনের লড়াই দেখে অবাক প্রতিবেশী থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষিকারা। পূজার বাড়ি বালুরঘাটের খাদিমপুর বৈদ্যনাথ পাড়ায়। মাধ্যমিক দিলেও তাঁর একটিও টিউশন নেই। যা পড়া তাঁর বাড়িতেই। তবে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে নয়।
ইচ্ছে করলেই পড়তে বসে যায়। সে ইশারাতেই জানায় তাঁর পরীক্ষা ভাল হয়েছে। পূজার বাবা অরুণ সিং প্রায় ১৫ বছর আগে গায়ে আগুন লেগে মারা গিয়েছেন। তিনি আগে রিকশা চালাতেন। বাবা মারা যাওয়ার কয়েক বছর পরেই মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পূজার। সেই ছোটবেলা থেকেই দিদার কাছেই মানুষ। দিদার বাড়িতে থেকেই তাঁর পড়াশোনা। এমনকী হৃদপিণ্ডে ছেদও ধরা পড়ে।
কিন্তু জীবনের মূলমন্ত্র সে এই বয়সেই বুঝে গিয়েছে। কোনও অজুহাত নয়। পড়াশোনা করতেই হবে। তাঁর অক্ষমতাকে হেলায় উড়িয়ে এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সে। দিদা অঞ্জলি সিং জানান, “মাঝেমধ্যেই গভীর ভাবনায় হারিয়ে যায় সে। সামনে বই খোলা রেখে মাঝেমধ্যেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। তখন তার মাথায় কী ভাবনা চিন্তা চলছে। তা কেউ জানে না। সেটা ভাষায় প্রকাশ করতেও অক্ষম সে। পড়ার কথা তাঁকে বলতে হয় না। এমনি বই নিয়ে বসে যায়। পাড়ার সকলের সে খুব প্রিয়। ছোট থেকেই সংঘর্ষ করছে সে। দিব্যাঙ্গ ভাতার সামান্য টাকা দিয়ে পূজার পড়াশোনা চালানো কঠিন। তিনি চলে গেলে পূজার কী হবে এই ভাবনায় এখন কুরে কুরে খায় তাঁর দিদাকে।”
পূজার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল ঘরের প্রতিটি কোণ থেকে অভাবের চিহ্ন বেরিয়ে আসছে। দিদা গৃহ পরিচারিকার কাজ করেন। যা দিয়ে খাতা, কলম কিনতেও হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। হৃদপিন্ডের ফুটো ধরা পড়ায় সেখানেও ব্যাপক অর্থ ব্যয় হয়েছে। মাঝেমধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকে সে। স্কুলের তরফে তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে আগামী বছর পরীক্ষা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু সে মনের জোরে এ বছরই পরীক্ষায় বসে।
সুস্মিতা গোস্বামী
