
কলকাতা: লিগশিল্ড থেকে আর মাত্র তিন পয়েন্ট দূরে তারা। টানা দ্বিতীয়বার শিল্ড জিতে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL 2024-25) নয়া নজির গড়ার অপেক্ষায় তারা। কিন্তু সে জন্য এক কঠিন হার্ডল পেরোতে হবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে, যার নাম ওড়িশা এফসি (Mohun Bagan Super Giant vs Odisha FC)। আইএসএলে যাদের বিরুদ্ধে ১২ বারের মধ্যে ছ’বারই ড্র করেছে সবুজ-মেরুন বাহিনী।
তবে আরও একটা পরিসংখ্যানও রয়েছে। এই ১২ বারের মধ্যে ওড়িশা এফসি জিতেছে মাত্র একবার। বাকি জয়গুলি লেখা হয়েছে বাগান-বাহিনীর নামে। সে না হয় অতীত বলে উড়িয়ে দিতে পারেন, দুই দলের কোচেরা। কিন্তু তিন মাস আগেই দুই দলের মধ্যে যে লড়াই হয়েছিল ভুবনেশ্বরে, সেই ম্যাচেও কোনও ফয়সালা হয়নি। তাই রবিবার মোহনবাগানের সম্ভাব্য শিল্ড জয়ের রাত যদি তারা মাটি করে দেয়, তা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
কঠিন প্রতিপক্ষ লোবেরা-ব্রিগেড
বাগান-বাহিনীর ফুটবলার, কোচেরা এটা বারবার বলেছেন যে, তাঁদের বিরুদ্ধে নামলে যে কোন দলই একটু বেশিই উজ্জীবিত হয়ে খেলে। ওড়িশাও তার ব্যতিক্রম নয়। তাদের স্প্যানিশ কোচ সের্খিও লোবেরা সামনে বড় দল দেখলেই বেশি জ্বলে ওঠেন। তাই সেরা দলকে সামনে পেলে যে দলের ফুটবলারদের একটু বেশিই উজ্জীবিত করার চেষ্টা করবেন, এই নিয়ে সন্দেহ নেই। তাদের সামনেও যে এখন প্লে-অফে জায়গা পাকা করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মোহনবাগানের যাত্রাভঙ্গ করতে না পারলে তাদের প্লে অফের রাস্তা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে।
মোহনবাগান এ বার যে চারটি ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে বাধ্য হয়েছে, তার মধ্যে ওড়িশা-ম্যাচও ছিল। নভেম্বরে ভুবনেশ্বরের সেই ম্যাচের শুরুতেই মোহনবাগানের প্রাক্তন তারকা হুগো বুমৌসের গোলে এগিয়ে যায় ওড়িশা এফসি। ৩৬ মিনিটের মাথায় হেড করে সেই গোল শোধ করেন মনবীর সিংহ।
মোহনবাগানের দুই প্রাক্তনী বুমৌস ও রয় কৃষ্ণা সে দিন তাঁদের পুরনো দলের বিরুদ্ধে উজ্জীবিত ফুটবল খেলার চেষ্টা করলেও তাঁদের কড়া পাহাড়ায় রেখেছিল বাগান-রক্ষণ। বুমৌস এই ম্যাচেও হয়তো দলে থাকবেন। কিন্তু চোট পেয়ে এ বারের লিগ থেকে ছিটকে গিয়েছেন রয় কৃষ্ণা। সে দিন আক্রমণেও দুই দল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিল। ওড়িশা যেখানে আটটি গোলের সুযোগ তৈরি করে, সেখানে দশটি গোলের সুযোগ পায় মোহনবাগান। তারা যেখানে পাঁচটি শট লক্ষ্যে রাখে, সেখানে ওড়িশার ছ’টি শট ছিল গোলে। এই পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দেয় কেমন লড়াইটা হয়েছিল সে দিন। রবিবার ফের সেই লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট।
এগিয়ে-পিছিয়ে কারা?
তবে মোহনবাগান যেহেতু তাদের ঘরের মাঠে খেলবে এবং যুবভারতীতে গত দশটি ম্যাচে তাদের কেউ হারাতে পারেনি, তাই অবশ্যই বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামবে তারা। এ ছাড়াও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের দিক থেকেও ওড়িশার চেয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছে তারা। টানা ন’টি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে তারা। যার মধ্যে সাতটিতেই জেতে তারা। গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জিতেছে তারা।
অন্যদিকে, ওড়িশা এফসি টানা তিনটি ম্যাচে জয়হীন থাকার পর গত ম্যাচে হায়দারাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে জয়ে ফেরে। গত দশটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জিতেছে তারা। বাকি সাতটির মধ্যে চারটি ম্যাচে ড্র করে তারা ও তিনটিতে হারে। এই সংখ্যাকে সম্বল করে মোহনবাগানের মতো অপ্রতিরোধ্য দলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করা মোটেই সোজা হবে না কলিঙ্গ-বাহিনীর পক্ষে।
তবে গোলের সংখ্যার দিক থেকে দুই দলই প্রায় সমান জায়গায় রয়েছে। মোহনবাগান যেখানে এ পর্যন্ত ২১ ম্যাচে ৪২টি গোল করেছে, সেখানে লোবেরার দলের গোলসংখ্যা ২১ ম্যাচে ৪১। আরও একটা জায়গায় দুই দলের মধ্যে দারুণ মিল। সেট পিস গোলের দিক থেকেও তারা প্রায় একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। ডেডবল সিচুয়েশন থেকে ওড়িশা এ পর্যন্ত ১৮টি গোল করেছে। মোহনবাগান করেছে ১৯টি। তাই রবিবার যখন দুই প্রতিবেশী রাজ্যের দল ফের মুখোমুখি হবে, তখন তাতে প্রচুর গোল হতে পারে।
সমস্যামুক্ত সবুজ-মেরুন শিবিরে
এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে অবশ্য চোট-আঘাতের সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পেয়েছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। চোটের তালিকায় আপাতত রয়েছেন সহাল আব্দুল সামাদ। আশিস রাই, অনিরুদ্ধ থাপা, মনবীর সিংহরা চোট পেলেও তাঁরা এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নামতে পারেন বলে ক্লাব সূত্রের খবর। এ মরশুমে অবশ্য মোহনবাগান যতবার এমন সমস্যায় পড়েছে, ততবারই তাদের রিজার্ভ বেঞ্চ তাদের ভরসা জুগিয়েছে। ফলে আপাত ভাবে দুর্বল মনে হলেও সাফল্য তাদের সঙ্গ ছাড়েনি।
গোলখরাও কাটিয়ে উঠেছে তারা। গত চারটি ম্যাচে এগারো গোল করেছে বাগান-বাহিনী। কারণ, তাদের গোলমেশিন জেমি ম্যাকলারেন গোল পেতে শুরু করেছেন। পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে জোড়া গোল করার পর গত ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধেও জোড়া গোল করেছেন তিনি। অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপার ছন্দে ফেরায় দলও অনেক বেশি সচল হয়ে গিয়েছে।
এর আগে তাদের স্ট্রাইকাররা নিয়মিত গোল করতে পারছিলেন না। জেসন কামিংস, দিমিত্রিয়স পেট্রাটস— এখনও নিয়মিত গোল পাচ্ছেন না। তাই চার ম্যাচে গোলহীন থাকার পর ম্যাকলারেন যখন পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেন, তার পর থেকে সবুজ-মেরুন বিজয়রথ ফের ছুটতে শুরু করে। দশ গোল নিয়ে এখন তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় পাঁচ নম্বরে রয়েছেন।
গত সাতটি ম্যাচে জেসন কামিংসও গোলহীন। তবে তাঁর নতুন ভূমিকায় যথেষ্ট কার্যকর হয়ে উঠেছেন তিনি। ম্যাকলারেনকে নিয়মিত গোলের পাস বাড়াচ্ছেন তিনি এবং অ্যাসিস্টও করছেন নিয়মিত। মোট পাঁচটি গোলে অ্যাসিস্ট করে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের তালিকায় পাঁচ নম্বরে রয়েছেন কামিংস। তবে দিমিত্রিয়স পেট্রাটসের পারফরম্যান্স হতাশাজনক। তিনি শেষ গোল করেছেন ২০ ডিসেম্বরের ম্যাচে। গত দুই ম্যাচে তাঁকে মাঠেই নামাননি কোচ।
এই ম্যাচে সবুজ-মেরুন শিবিরে কারও কার্ড সমস্যা নেই। তবে শুভাশিস বসু, দীপক টাঙরি, জেমি ম্যাকলারেন ও জেসন কামিংসরা তিনটি করে হলুদ কার্ড দেখে ফেলেছেন। ফলে এই ম্যাচে কিছুটা হলেও হয়তো সাবধানে থাকবেন তাঁরা। ওড়িশা শিবিরে বুমৌস, আহমেদ জাহুদেরও একই সমস্যা। সব দিক দিয়েই এগিয়ে রয়েছে মোহনবাগান। কিন্তু ম্যাচে পারফরম্যান্সে তারা এগিয়ে থাকতে পারবে কি না, সেটাই এখন দেখার।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
(Feed Source: abplive.com)