
নয়াদিল্লি: পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে পর পর গ্রেফতারি। ইনফ্লুয়েন্সার থেকে সাধারণ পেশার মানুষ, পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন অনেকেই। ভারতের ক্ষতিসাধনে কতদূর এগিয়েছিল পাকিস্তান, তা নিয়ে এবার চাঞ্চল্যকর তথ্য় সামনে এল। ট্র্যাভেল এজেন্সির নামে ভারতে ‘স্লিপার সেল’ গড়ে তোলায় পাকিস্তান নিবাসী এক মহিলার নাম সামনে এল। পাক গুপ্তচরদের মধ্যে তিনি ‘Madam N’ নামে পরিচিত। (Noshaba Shehzad)
কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত চরম আকার ধারণ করে। সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যেই চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। ইনফ্লুয়েন্সার থেকে সাধারণ নিরাপত্তারক্ষী, ধৃতদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে ক্রমশ। আর সেই ধৃতদের জেরা করেই ‘Madam N’-এর খোঁজ পেলেন তদন্তকারীরা। পাকিস্তানের লাহৌরে ওই মহিলা ট্র্যাভেল এজেন্সি চালান বলে জানা যাচ্ছে। তাঁর হাতেই নাকি ভারতে ‘স্লিপার সেল নেটওয়র্ক’ গড়ে তোলার দায়িত্ব সঁপেছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা ISI. (India-Pakistan Conflict
এই ‘Madam N’-এর কাজকর্ম তদন্তকারীদের ভাবিয়ে তুলেছে বলে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। ওই মহিলার আসল নাম নোশাবা শেহজাদ। ISI তাঁকে ‘Madam N’ কোডনেমটি দেয়। ভারতের ইনফ্লুয়েন্সারদের পাকিস্তান ভ্রমণে উৎসাহিত করতেন ওই মহিলা। পরে তাঁদেরই গুপ্তচর হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
লাহৌরে যে ট্র্য়াভেল এজেন্সি চালান নোশাবা, সেটির নাম ‘Jaiyana Travel and Tourism’. সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া জ্যোতি মালহোত্র থেকে অন্যদের ওই সংস্থাই পাকিস্তান ভ্রমণে সাহায্য করে। এক ইনফ্লুয়েন্সারকে জেরা করে একথা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। জানা যাচ্ছে, কমপক্ষে ৫০০ গুপ্তচর সম্বলিত বিরাট স্লিপার সেল গড়ে তোলার কাজ করছিলেন নোশাবা।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, নোশাবার স্বামী পাকিস্তানি সিভিল সার্ভেন্ট। সরাসরি পাক সেনা এবং ISI-এর নির্দেশে কাজ করছিলেন নোশাবা। কীভাবে ভারতে স্লিপার সেল গড়ে তুলতে হবে, সেই নির্দেশ আসত। সেই পরিকল্পনার আওতায়ই ভারতের ইনফ্লুয়েন্সারদের পাকিস্তানে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে সেনা আধিকারিক ও ISI এজেন্টদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো। বিশেষ করে ভারতীয় হিন্দু ও শিখদের কাজে লাগাতেন নোশাবা। গত ছ’মাসে প্রায় ৩০০০ ভারতীয় এবং ১৫০০ প্রবাসী ভারতীয়কে পাকিস্তানে বেড়াতে যেতে সাহায্য় করেন তিনি।
ISI-এর অন্দরে এতই প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন নোশাবা যে দিল্লিতে পাক দূতাবাসেও যথেষ্ট দাপট ছিল তাঁর। ফার্স্ট সেক্রেটারি (ভিসা) সুহেল কামার এবং কাউন্সেলর (ট্রেড) উমর শেরইয়ারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ থাকত। নোশাবার এক ফোনেই মঞ্জুর হয়ে যেত পাকিস্তান যাওয়ার ভিসা। ISI এজেন্ট দানিশ ওরফে এহসান-উর-রহমানের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল নোশাবার। দানিশ দিল্লিতে পাক দূতাবাসে ভিসা আধিকারিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জ্যোতি গ্রেফতার হওয়ার পর দানিশকে ভারত থেকে বহিষ্কার করা হয়। নোশাবার সুপারিশে পাক হাই কমিশনার লাগাতার ‘ভিজিটর’ ভিসা ইস্যু করছিল বলে জানা গিয়েছে।
কিন্তু নোশাবার সঙ্গে পাক সেনা ও ISI-এর এত দহরম মহরম হল কোন উপায়ে? তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, নোশাবার সংস্থাই ভারত থেকে পাকিস্তান যাওয়া তীর্থযাত্রীদের আপ্য়ায়ন করত। Evacuee Trust Property Board-এর সহযোগিতায় পাকিস্তানে হিন্দু এবং শিখ পুণ্যার্থীদের আদর ও আপ্যায়ন করা হতো। ভারতীয় পুণ্যার্থীদের থেকে মোটা টাকাও নিত নোশাবার সংস্থা, আবার পাকিস্তানের ভাষ্যও তুলে ধরত তারা। সম্প্রতি দিল্লি এবং ভারতের অন্য শহরের ট্র্যাভেল এজেন্টদের সঙ্গেও যোগাযোগ গড়ে ওঠে নোশাবার। তাঁদের দিয়ে নিজের সংস্থার প্রচার করান সোশ্যাল মিডিয়ায়। পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে পঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে। কিন্তু পাক গুপ্তচর নেটওয়র্কে তার বাইরে আরও লোকজন আছে কি? খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
(Feed Source: abplive.com)
